মিরপুরে পতাকা উড়ানোর কারণ জানাল পাকিস্তান

ছয় বছর পর বাংলাদেশ সফরে এসেছে পাকিস্তান ক্রিকেট দল। তবে আসতে না আসতেই বিতর্ক সৃষ্টি করেছে তারা। সোমবার (১৫ নভেম্বর) মিরপুরের একাডেমি মাঠে প্রথম দিনের মতো অনুশীলন করে সফরকারীরা। তবে অনুশীলন ছাপিয়ে উত্তাপ ছড়াচ্ছে তাদের বিতর্কিত পতাকা উত্তোলন ইস্যু।

দেশের শীর্ষ মিডিয়া হাউস সময় নিউজ পাকিস্তানের পতাকা উড়িয়ে অনুশীলন করার বিষয়টি নিয়ে সর্বপ্রথম প্রশ্ন তুলেছিল। এছাড়া বিশেষজ্ঞদের মতামতও প্রচার করা হয়। এরপরই যেন নড়েচড়ে বসে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)।

পাকিস্তানের পতাকা উত্তোলন ইস্যুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ক্ষোভ জানান অনেকে। দেশটি যখন পাকিস্তান এবং সামনে যেহেতু লাল-সবুজের বিজয়ের মাস, আর তাই আলোচনার মাত্রা ছাড়াল বহুগুণে। তবে কেউ কেউ আবার এর সপক্ষেও যুক্তি দেখাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতেই গণমাধ্যমকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিল পাকিস্তান ক্রিকেট দল।

তাদের পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের হেড কোচ হিসেবে সাকলায়েন মুশতাক দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে জাতীয় দলে পতাকা লাগানোর প্রচলন শুরু হয়েছে। সর্বপ্রথম নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে এটি চালু হয়েছিল। এরপর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও তা অনুসরণ করা হয়েছে।

নিরাপত্তার শঙ্কা থাকায় নিউজিল্যান্ড দল পাকিস্তান সফরে এসেও সেবার কোনো ম্যাচ না খেলেই দেশে ফিরে গিয়েছিল। এরপর ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলও পাকিস্তান সফর বাতিল করে দেয়।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সাকলায়েন মুশতাক এর আগে ন্যাশনাল হাই পারফরম্যান্স ইউনিটের (এনএইচপিসি) ক্যাম্পেও এমন করেছিলেন। এ ছাড়া পতাকার প্রচলন চালু রেখেছিলেন অনূর্ধ্ব-১৬ এবং অনূর্ধ্ব-১৯ দল নিয়ে কাজ করার সময়ও।

পাকিস্তানের হেড কোচ পতাকা উড়াতেই পারেন, তবে মাঠে খেলা চলাকালে ছাড়া পতাকা উত্তোলন করতে হলে অবশ্যই স্বাগতিক দেশের ক্রিকেট বোর্ডের অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন। এছাড়া অনুমতি ছাড়া নেটে প্র্যাকটিসের সময় পাকিস্তানের পতাকা ওড়ানো বাংলাদেশে নিয়ম বহির্ভূত। এটা ১৯৮০ সালের মতো বিতর্ক সৃষ্টি করার বিষয়। তাদের কর্মকর্তারা বিসিবিকে না জানিয়েই কাজটি করেছে।

এর আগে পতাকা ইস্যুতে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির সময় নিউজকে বলেছিলেন, পাকিস্তানীদের এ ঔদ্ধত্যের কারণও আছে। যারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী ছিল; জামায়াত ইসলামী এবং তাদের সহযোগীরা এখনও আছে। তরুণদের মধ্যে তাদের একটা বিরাট প্রভাব আছে। পাকিস্তানের প্রেম আছে। সুতরাং আমি মনে করি, পাকিস্তানকে এ ব্যাপারে কোয়েশ্চেন করতে হবে, কৈফিয়ত চাইতে হবে এবং তাদের এই ঔদ্ধত্যের জন্য বাংলাদেশের কাছে অবশ্যই ক্ষমা চাইতে হবে। না হলে তাদের ক্রিকেট টিমের এই দেশে খেলবার কোনো দরকার নেই।

এ বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী ও বিসিবির সাবেক পরিচালক, চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সিরাজউদ্দীন মোহাম্মাদ আলমগীর বলেন, বিশ্বকাপের সময় তারা কিন্তু তাদের পতাকা উড়িয়ে অনুশীলন করেছিল। এটা নিয়ে কিন্তু সমালোচনা হয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা উড়িয়ে অনুশীলন করা এটা কিন্তু আমাদের অনেকের সেন্টিমেন্টের বিষয় আছে। পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা আমাদের দেশে বা স্টেডিয়ামগুলোতে উড়বে আর আমরা স্বাধীন দেশের মানুষ মেনে নেব সেটা কিন্তু আমরা কেউই কামনা করি না। ভবিষ্যতে ক্রিকেট বোর্ড এ বিষয়ে আরও সতর্ক হবে বলে মনে করি।

আইসিসির নিয়মানুসারে কোনো ইভেন্ট কিংবা দ্বিপাক্ষিক সিরিজ চলাকালীন দুই দেশের পতাকা উড়তেই পারে। তবে পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের অনুশীলনেই সেটা কেন উড়াতে হবে! তাদের এমন দৃশ্যে যেন চক্ষু চড়কগাছ সবার। গেল ২১ বছর ঘরের মাঠে আইসিসির সব দলকেই আতিথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ। এমন দৃশ্য হয়ত দেখা যায়নি এর আগে।
তথ্যসূত্র: সময় টিভি সংবাদ