মিরাজকে নিয়ে বাজি ধরা যেতে পারে : পাইলট

তামিম ইকবালের সেঞ্চুরি। দ্বিতীয় উইকেটে তামিম ও মুশফিকের ১৬৬ রানের রেকর্ড পার্টনারশিপ আর স্কোরবোর্ডে ৩০৫ রান দেখে মনে হচ্ছিল হাড্ডহাড্ডি লড়াই হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর লড়াই হয়নি। তিন ইংলিশ জো রুট, হেলস আর অধিনায়ক মরগ্যানের সাবলীল ও পেশাদার ব্যাটিংয়ে ম্যাচ একপেশে হয়ে গেছে।

ঐ বড় স্কোর গড়েও শেষ রক্ষা হয়নি। ইংলিশরা অনায়াসে মাত্র দুই উইকেট হারিয়ে ১৬ বল আগে পৌঁছে গেছে জয়ের বন্দরে। ইংল্যান্ডের সঙ্গে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রথম ম্যাচে এগুলোই সান্ত্বনা টাইগারদের। এদিকে সেই ম্যাচের রেশ না কাটতেই চলে এসেছে দ্বিতীয় খেলা। আগামী পরশু সোমবার ওভালে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে গ্রুপের দ্বিতীয় ম্যাচ বাংলাদেশের।

দুটি দু ধরনের দল। অ্যাপ্রোচ আর অ্যাপ্লিকেশন সম্পূর্ণ ভিন্ন। ইংলিশদের পেশাদার অ্যাপ্রোচ আর ক্লিনিক্যাল ফিনিশ। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার মূল মন্ত্রই হলো আগ্রাসী অ্যাপ্রোচ। আক্রমণাত্মক অ্যাপ্লিকেশন। শুরু থেকে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা। সেটা মাশাফি বাহিনীর জন্য কেমন হবে?

অজিরা কি স্বাগতিক ইংলিশদের চেয়ে তুলনামূলক সহজ, নাকি কঠিন প্রতিপক্ষ, টাইগারদের সম্ভাবনা কতটুকু? জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট মনে করেন, টাইগারদের জন্য লড়াইটি আরও কঠিন হবে।

আজ পড়ন্ত বিকেলে জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও এবারের প্রিমিয়ার লিগে প্রাইম ব্যাংকের কোচ বলেন, ‘প্রতিপক্ষ হিসেবে অস্ট্রেলিয়া আরও কঠিন ও বিপজ্জনক। তারচেয়ে বড় কথা অজিরা সার্বক্ষণিক প্রতিপক্ষের ওপর চাপ ও প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে। তাদের ভালো মানের ফাস্ট বোলার আছে। যাদের বলের ধারও বেশি। আর ব্যাটিংয়েও ওয়ার্নার ও ম্যাক্সওয়েলের মত ড্যাশিং উইলোবাজ আছে। যাদের সামলানো যে কোন বোলিং শক্তির জন্যই কঠিন।’

তাহলে বাংলাদেশের সম্ভাবনা কি আরও কম? খালেদ মাসুদ পাইলটের জবাব, ‘নাহ তা বলবো না। ঐ ম্যাচ থেকে প্রাপ্তিও আছে। শেষ পরিণতিটা খুব আশা জাগানিয়া না হলেও তামিম-মুশফিকের ব্যাটিং আর ৩০০`র বেশি রান করাটাকে ছোট করে দেখার কোনই কারণ নেই। সেটা ইতিবাচক। তার মানে ইংলিশ কন্ডিশনে ৩০০ করার ক্ষমতা আছে। সেটাও ভালো করার অনুপ্রেরণা।’

তাহলে ৫ জুন টাইগারদের অ্যাপ্রোচ কেমন হওয়া উচিৎ? খালেদ মাসুদ পাইলটের অনুভব, উপলব্ধি, লক্ষ্য ও পরিকল্পনা একটু ভিন্ন হলে মনে হয় ভালো হবে। সেটা কেমন? ‘প্রথাগত ক্রিকেটের বাইরে ভিন্ন কিছু করে দেখা যেতে পারে। খালদ মাসুদ পাইলটের প্রেসক্রিপশন, “`আপনি অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে প্রথাগতরীতি বা পথে হেটে তেমন কিছু করতে পারবেন না। একটু ভিন্ন পথে হাঁটতে হবে। কারণ অস্ট্রেলিয়া একটু ভিন্ন ধরনের দল। যারা প্রতিপক্ষকে গুছিয়ে উঠতে দিতে চায় না। শুরু থেকে আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলে। সেই দলকে তাদের মত করে খেলতে দিলে বিপদ। তাই প্রথাগত ক্রিকেটের বাইরে কিছু খেলে এগিয়ে যেতে হবে। আর সে ক্ষেত্রে মেহেদী হাসান মিরাজকে দিয়ে ক্রিকেট গ্যাম্বল বা বাজি ধরা যেতে পারে। আমি মনে করি মাশরাফি-সাকিবকে দিয়ে বোলিং শুরু না করে মেহেদী হাসান মিরাজকে দিয়ে বোলিং শুরু করা যেতে পারে। অজিরা হয়তো শুরুতে আমাদের মাশরাফি আর সাকিবকে নিয়ে চিন্তা করবে। আমরা দুম করে মিরাজকে দিয়ে ওপেন করাতে পারি। বাঁহাতি ওয়ার্নারের বিরুদ্ধে ডান হাতি মিরাজ কার্যকর হতে পারে।’

অনেক কথার ভিড়ে ইংল্যান্ডের সঙ্গে ম্যাচ নিয়ে কথা উঠলো। খালেদ মাসুদে পাইলটের ব্যাখ্যা, ‘তামিম ভালো খেলেছে। খুবই ভালো ব্যাটিং করেছে। তবে স্ট্রইকরেটটা আরও ভালো হলে দলের কাজে লাগতো। এছাড়া আমার মনে হয় আমরা পাওয়ার প্লে‘তে গিয়ে ভালো করতে পারিনি। আরও আগে মনে হয় রানের গতি বাড়ানোর কাজে মনোযোগী হওয়া উচিৎ ছিল। ব্যাটিং পাওয়ার প্লে কাজে লাগাতে পারিনি। চেষ্টাও ছিল না। কালকে (শুকবার) নিউজিল্যান্ডকে দেখলাম অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে কি সুন্দর পাওয়ার প্লে কাজে লাগিয়েছে। সেটা কাজে লাগাতে পারলে স্কোরলাইন আরও বড় হতো। অবশ্য বড় হলে মানে ৩২০-৩৩০ হলেই আমরা জিততাম তা বলবো না। তবে আমাদের ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ আরও ভালো হলে খেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেশি হতো।’

খালেদ মাসুদ পাইলটের অনুভব, ‘বাংলাদেশ শেষ ৫-৭ ওভার পাওয়ার হিটিং করায় তেমন দক্ষ না। তাই টিম ম্যানেজমেন্টের উচিৎ বিকল্প পথ খুঁজে বেড় করা। সেটা কি? ‘আমরা যখন শেষ দিকে হাত খুলে গায়ের শক্তি প্রয়োগ করে বড় হিট নিতে কম পারি, সেক্ষেত্রে আরও আগে কৌশল করে আর বুদ্ধি খাটিয়ে রান গতি বাড়ানোর চিন্তা করা উচিৎ।’

ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে রানটা আসলে ডিফেন্ড করার মত ছিল না, একথা জানিয়ে খালেদ মাসুদ বলেন, ‘ইংলিশরা অনায়াসে লক্ষ্যে পৌঁছেছে। পেশাদার মানসিকতায়। তারা জানতো উইকেট ভালো। সোজা ব্যাটে খেলেছে বেশি। কখনো কখনো গ্যাপ কাজে লাাগিয়েছে। তারপরও মোস্তাফিজ আর সাকিব ভালো বা অতিমাত্রায় ভালো কিছু করলে হয়তো সুযোগ থাকতো। তারা তা পারেনি। একজন জেনুইন বোলারের ঘাটতি ছিল। আর একজন জেনুইন বোলার দরকার ছিল। ব্যাটিং ট্র্যাকে অত বেশি ব্যাটসম্যান লাগে না। তার চেয়ে একজন বোলার রাখা উচিৎ ছিল।’