মিয়ানমারে দাঙ্গার পাঁচ বছরে রোহিঙ্গাদের হালচাল

২০১২ সালের জুন মাসের ঘটনা। মিয়ানমারে এক বৌদ্ধ নারীকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগ ওঠে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে। তা নিয়ে রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিটওয়েতে রোহিঙ্গা ও বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে দাঙ্গার সূত্রপাত হয়।

রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি ও মসজিদ ভেঙে ফেলে রাখাইনরা। হাজার হাজার রোহিঙ্গা গৃহহীন হয়ে পড়েন ওই দাঙ্গায়। সেখান থেকে রোহিঙ্গারা রাখাইন রাজ্যের অন্যান্য অংশে চলে যেতে বাধ্য হন। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেন।

অনেকে আবার পরিবার নিয়ে অস্থায়ী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন। দুই বছরের জন্য বানানো এসব ক্যাম্প নির্মাণ করা হলেও পাঁচ বছর ধরে সেখানে বাস করছেন রোহিঙ্গারা।

তবে সম্প্রতি মিয়ানমার সরকার সেগুলো বন্ধের কাজ শুরু করেছে। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বাধীন কমিশন এসব ক্যাম্প বন্ধ করে দেয়ার পরামর্শ দেয়ার পর সু চির সরকার এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়।

দেশটির রামরি শহরের একটি ক্যাম্প গত এপ্রিল মাসে বন্ধ করে দেয়া হলে অনেকেই সেখান থেকে অন্য স্থানে পাড়ি জমান। ৫০ বছর বয়সি বিধবা নারী ‘নিয়ে নিয়ে উ` দুই কন্যা সন্তানকে নিয়ে ইয়াঙ্গনে পাড়ি জমান। সরকার তাকে ক্ষতি পূরণ হিসেবে দিয়েছে পাঁচশ ৯০ ডলার। গত দুই মাসে অর্ধেক টাকা শেষ হয়ে গেছে তার। তার মত অন্যদের অবস্থাও একই। খাবার আর বাড়ি ভাড়া দিতে গিয়ে তাদের সেই অর্থ ফুরিয়ে আসছে। ইয়াঙ্গন শহরে তারা চাকরি পাবারও আশা দেখছেন না।

সেকারণে ভবিষ্যৎ নিয়ে ভীষণ উদ্বিগ্ন তারা। কীভাবে দিন চলবে সেটাই বুঝে উঠতে পারছেন না। তাছাড়া গ্রামের বাড়ি ফিরে যাবারও সুযোগ নেই। সেখানে ফিরলে মারা পড়ার আশঙ্কা দেখছেন তারা।

মিয়ানমারে অবস্থিত জাতিসংঘের অফিস ফর দ্য কো-অর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স-এর প্রধান মার্ক কাটস বলছেন, রাখাইন রাজ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে না নিয়ে এসে রোহিঙ্গাদের অন্যত্র পাঠিয়ে দেয়ার মানে হচ্ছে, সমস্যাটা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পাঠিয়ে দেয়া।

রাখাইনের সিটওয়েতে এখনও প্রায় চার হাজার রোহিঙ্গার বসবাস করে। বড় ধরনের দাঙ্গা হয়েছিল সেখানেই। তারা শহরের একটি অংশে আবদ্ধ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। নিজেদের এলাকার বাইরে তারা যেতে পারছেন না। ওই সব এলাকার ভেঙে দেয়া মসজিদ আর ঘরবাড়ি এখনও ভাঙা অবস্থাতেই পড়ে আছে। সেগুলো রোহিঙ্গাদের মেরামত করতেও দেয়া হচ্ছে না।

বাংলাদেশে পালিয়ে এসেও রোহিঙ্গারা শান্তিতে থাকতে পারছেন না বলে দাবি করছেন। ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র আঘাতে ক্ষতিগ্রস্থ রোহিঙ্গা শরণার্থী পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর এখানেও কেউ নেই। ঝড়ের আগে তাদের আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া হয়নি। ঝড়ের পরেও তাদের জন্য নেই কোনো ত্রাণ সহায়তা।

কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের চেয়ারম্যান আবু সিদ্দিক মাঝি বলছেন, আমাদের অবস্থা এখনও খুবই খারাপ। আমাদের ক্যাম্পে ১৩ হাজার সাতশ ঘর ছিল। বলতে গেলে সব ঘরই কোনো-না-কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা এখন পলিথিনের ছাউনি দিয়ে কোনোভাবে আছি।

ফলে রোহিঙ্গারা মিয়ানমার কিংবা বাংলাদেশ যেখানেই থাকুক, সবখানেই তারা ভাল না থাকার কথা বলছেন।