মুরাদনগরে নৌ শিল্পীদের দুর্দিন চলছে

একসময় মুরাদনগর উপজেলার সব সবগুলো গ্রামে কমবেশি নৌকা দেখা যেত। এখনো আন্দিকোট ইউনিয়নের হায়দ্রাবাদ, বারেশ্বর ,ফুলঘর, আকুবপুর ইউনিয়নের মেটংঘর, রামচন্দ্রপুর এবং ছালিয়াকান্দি ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামে নৌকা দিয়ে জনসাধারণকে চলাচল করতে দেখা যায়। একসময় রামচন্দ্রপুর হাটে কোষা নৌকা, চান্দি নৌকা, ডিঙ্গি নৌকা, মাটিকাটা নৌকা, জাউলা নৌকা দেখা গেলেও বর্তমানে শুধু কোশা নৌকাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়।প্রতি মঙ্গলবার রামচন্দ্রপুর হাট থেকে তারা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী নৌকা কিনে নেন।

বর্তমানে নৌকা তৈরীর কাজ তেমন চোখে পড়ে না মুরাদনগর উপজেলায়়। তবে বর্ষাকালে কোরবানপুর, ছালিয়াকান্দি ও জাহাপুর কোন কোন গ্রামে কিছু লোক এ শিল্পের সাথে জড়িত থাকেন। তারা প্রতিবছর নৌকা বায়না পেয়ে থাকেন। এছাড়া বাঙ্গোরায় ও কিছু নৌকা বিক্রি হয় ।ওখানেও তারা কিছু নৌকা নিয়ে যান ,উপস্থিত ক্রেতারা তা দরদাম করে কিনে নিয়ে যান।

নৌ শিল্পীদের সাথে যোগাযোগ করে জানা যায় ,তারা কাঠের তক্তা গুলোকে বিশেষ উপায় একটির সাথে আরেকটি জোড়া লাগিয়ে থাকেন ।এই জোড়া দেওয়ার সময় তারা এক ধরনের ক্লিপ ব্যবহার করেন। ক্লিপগুলো দিয়ে একের পর এক কাঠের তক্তা জুড়ে তৈরি হয় নৌকা। নৌকর চারপাশে ভালোভাবে আলকাতরা গরম করে তরল করে মেখে দিয়ে ছোট ছোট কাঠের ছিদ্র বন্ধ করে দেন। ভালোভাবে রোদে শুকানোর পর নৌকাটি প্রস্তুত হয়ে যায় ব্যবহারের জন্য।

নৌ শিল্পের সাথে জড়িত রামচন্দ্রপুরের হরি গোপাল জানান, নৌ শিল্পীরা নৌকা তৈরির সময় কাঠের তক্তাগুলো বাকানোর জন্য একটি বিশেষ পদ্ধতির আশ্রয় নিয়ে থাকেন। একে বলা হয় বাইন দেওয়া । বাইন দেওয়ার জন্য কাঠের তক্তাকে হালকাভাবে আগুনে পুড়িয়ে নিতে হয়। তারপর কাঠের তক্তার মাঝ বরাবর লোহার শিক দিয়ে মাটির সাথে ভালোভাবে গেঁথে কাঠের তক্তার দুই প্রান্তকে দড়ি দিয়ে বেঁধে টান দেয়া হয়। এভাবে কয়েকদিন রেখে দেয়ার পর কাঠের তক্তাটি বাঁকা হয়ে যায় এবং নৌকা তৈরিতে এটি ব্যবহারের উপযুক্ত হয়ে পড়ে। কাঠের তক্তা জোড়া দেওয়ার পরও দেখা যায় কাঠের গায়ের ফাঁকে ফাঁকে অনেক ছিদ্র থাকে। যা বিশেষ কৌশল এর সাহায্যে কারিগররা আলকাতরা দিয়ে বন্ধ করে দেন। ফলে পানিতে নৌকাটি চলার সময় নিচ থেকে পানি চুঁইয়ে উঠে না।

হাটে নৌকা বিক্রি করতে আসা মেলামচরের বয়স্ক নৌ শিল্পী সুরেশ চন্দ্র জানান, কাঠের আসবাবপত্র তৈরিতে যে সকল হাতিয়ার এর প্রয়োজন হয়, তার প্রায় সবগুলোই ব্যবহৃত হয়ে থাকে নৌকা তৈরিতে ।এগুলোর মধ্যে হাতুড়ি, বাটাল,রাঁদা,করাত , ক্লিপ সহ আরো অনেক কিছু। মুরাদনগরে নদী খনন এবং দখলকৃত খালগুলো উদ্ধার করে পুনঃখনন করলে নৌ শিল্পীদের মধ্যে আবার সচ্ছলতা ফিরে আসবে।