মোবাইল ফোনের কলরেট বাড়ানোর প্রস্তাবটি আসলে কার?

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম গত জুনে জানিয়েছিলেন, মোবাইল ফোনের কলরেট কমানো হতে পারে। কিন্তু সম্প্রতি সেই কলরেট না কমিয়ে উল্টো বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। যদিও টেলিযোগাযোগ বিভাগ প্রস্তাবনাটি ফিরিয়ে দিয়ে বিটিআরসিকে ‘পুনর্বিবেচনা’ করতে বলেছে। এদিকে, মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর সংগঠন অ্যামটবের দাবি, এই প্রস্তাবনা তৈরির আগে টেলিকম ইন্ডাস্ট্রির পরামর্শ নেওয়া হয়নি। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, মোবাইল ফোনের কলরেট বাড়ানোর প্রস্তাবটি আসলে কার?

সম্প্রতি এক বৈঠকে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সর্বনিম্ন কলরেট বাড়ানো, ভিন্ন অপারেটরের মধ্যে কলরেট কমানো এবং কলরেটের সর্বোচ্চ সীমা ৫০ পয়সা কমিয়ে দেড় টাকা করার প্রস্তাব পাঠায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে। তবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ তা ফের বিশ্লেষণ করার জন্য সোমবার (৭ আগস্ট) বিটিআরসিতে ফেরত পাঠিয়েছে। বিটিআরসির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘কমিশনের পাঠানো প্রস্তাবনাই চূড়ান্ত নয়। কলরেট বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করার সুযোগও রাখা হয়েছে প্রস্তাবনায়।’

বিটিআরসির প্রস্তাবনা অনুযায়ী, একই অপারেটরের মধ্যে কথা বললে গ্রাহকের খরচ বাড়বে এবং অন্য অপারেটরে কথা বললে খরচ কিছুটা কমবে। আর এতে করে ছোট অপারেটরগুলোর আয় আরও কমে যাবে। বড় অপারেটরগুলোর গ্রাহক সংখ্যা বেশি হওয়ায় এসব অপারেটরের নিজেদের গ্রাহকদের মধ্যেই কথা হয় বেশি। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকদের কথা বলার খরচও বাড়বে, অপারেটরগুলোর আয়ও বাড়বে।

যদিও গত ২০ জুন জাতীয় সংসদে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেছিলেন, প্রয়োজনে মোবাইল ফোনের কলরেট আরও কমানো যেতে পারে। মোবাইল ফোনের সর্বনিম্ন কলরেটে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। সংরক্ষিত আসনের একজন সংসদ সদস্যের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, বর্তমানে দেশে এই কলরেট সর্বনিম্ন ২৫ পয়সা ও সর্বোচ্চ ২ টাকা নির্ধারণ করা আছে।

দেশে মোবাইল ফোনের এই কলরেট ২০১০ সালে নির্ধারণ করে দিয়েছিল ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (আইটিইউ)। তাদের হিসাব ছিল, একই অপারেটরের মধ্যে সর্বনিম্ন ২৫ পয়সা, অন্য অপারেটেরে সর্বনিম্ন ৬০ পয়সা এবং সর্বোচ্চ ২ টাকা হারে কলরেট নির্ধারণ করা যাবে। এর বিপরীতে বিটিআরসির নতুন প্রস্তাবনায় একই অপারেটরের মধ্যে সর্বনিম্ন কলরেট ৩৫ পয়সা, অন্য অপারেটরে সর্বনিম্ন ৪৫ পয়সা এবং সর্বোচ্চ কলরেট দেড় টাকা করার সুযোগ রাখা হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর সংগঠন অ্যামটবের মহাসচিব টিআইএম নূরুল কবীর বলেন, ‘আমাদের (মোবাইল ফোন অপারেটর) সঙ্গে কোনও ধরনের পরামর্শ না করেই কলরেট বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে বিটিআরসি। আমরা বিষয়টি জানিই না। অপারেটরদের সঙ্গে কথা না বলে কলরেট নির্ধারণ কোথাও করা হয় না। আমরা চাই, আমাদের সঙ্গে পরামর্শ করেই প্রস্তাবনা দেওয়া হোক।’ তিনি জানান, অতীতে কলরেট নির্ধারণের সময় টেলিকম ইন্ডাস্ট্রির মতামত নেওয়া হয়েছিল।

তবে জানা গেছে, কলরেট বাড়ানোর প্রস্তাবে প্রকারান্তরে খুশিই মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো। কলরেট বাড়লে কোন অপারেটরের আয় কত বাড়বে, তারও হিসাব-নিকাশ শুরু হয়ে গেছে। সেই হিসাবে দেখা যায়, বিটিআরসির প্রস্তাবনা বাস্তবায়িত হলে আয় বাড়বে গ্রামীণফোনের, আর আয় কমে যাবে রাষ্ট্রায়াত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটকের।

এদিকে, নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে একজন টেলিযোগাযোগ বিশেষজ্ঞ জানান, নতুন প্রস্তাবনার পেছনে কয়েকটি ফ্যাক্টর কাজ করেছে বলে মনে করেন তিনি। এর একটি হচ্ছে স্পেক্ট্রাম (তরঙ্গ)। মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর স্পেকট্রাম প্রয়োজন, কিন্তু তারা তা পাচ্ছে না। স্পেকট্রামের দামও অনেক বেশি। ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘‘এ পরিস্থিতিতে কলরেট বাড়ানোর প্রস্তাব অপারেটরগুলোর জন্য এক ধরনের ‘ইনসেনটিভ’, বাড়তি আয় দিয়েই যেন অপারেটরগুলো স্পেকট্রাম কিনতে পারে।’

ওই বিশেষজ্ঞ আরও জানান, সামনে চতুর্থ প্রজন্মের নেটওয়ার্কের (ফোরজি) নিলাম রয়েছে। এতে অপারেটরগুলোর অনেক টাকার প্রয়োজন। এই ইনসেনটিভ অপারেটরগুলো সেই কাজেও ব্যবহার করতে পারবে বলে মনে করেন তিনি। আইজিডাব্লিউ (ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে) কলরেট কমে যাওয়াটাও প্রস্তাবনার পেছনে নিয়ামক হিসেবে কাজ করে থাকতে পারে বলে তিনি মনে করেন। মোবাইল অপারেটরগুলোর দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘কলরেট বাড়লে কাদের লাভ, খোঁজ নিন।’ প্রতিমন্ত্রীর কলরেট কমানোর ইঙ্গিত ও কলরেট বাড়ানো প্রসঙ্গে অ্যামটবের কিছু না জানার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘বিটিআরসি একা-একাই কলরেট বাড়ানোর কাজটি করে ফেললো?’সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন।