যুক্তরাষ্ট্রের পাবলিক স্কুলে ছড়িয়ে পড়েছে গাঁজা সেবন: দ্য সিটি

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির বিভিন্ন পাবলিক স্কুলের সামনে লেখা থাকতো ‘ড্রাগ ফ্রি স্কুল’। এখনো থাকে। কিন্তু প্যানডেমিকের আগে নিউইয়র্ক স্টেট বা সিটিতে মারিউয়ানা, ক্যানাবিস বৈধ ছিল না। তখন গোপনে বিক্রি হতো। এবং যারা আগ্রহী তারা যে কোনোভাবেই হোক সংগ্রহ করতো।

২০২১ সালে নিউইয়র্ক স্টেটে মারিউয়ানা বা ক্যানাবিস, বাংলায় যাকে বলা হয় গাঁজা বিক্রি ও সেবন বৈধ করা হয়। এর জন্য গত ডিসেম্বর মাস থেকে নিউইয়র্ক সিটিতে এই গাঁজা বিক্রির দোকান খোলা হয়। দোকান খুললেও ২১ বছরের কমবয়সীদের কাছে গাঁজা বিক্রি নিষিদ্ধ। নিউইয়র্ক সিটির অনলাইন সংবাদপত্র দ্য সিটি বৃহস্পতিবার একটি বড় প্রতিবেদনে নিউইয়র্ক সিটির স্কুলে গাঁজা সেবন বেড়ে যাওয়ায় আশংকা প্রকাশ করে বলেছে স্কুলের শিক্ষকবৃন্দ এই বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তিত। সেই সাথে অভিভাবকবৃন্দ।

দ্য সিটি সরেজমিন তদন্তে পেয়েছে, নিউইয়র্ক সিটির বিভিন্ন স্কুলে আগে দু’চারজন ছাত্র অত্যন্ত গোপনে গাঁজা সেবন করত। তারা সবসময় বিল্ডিংএর বাইরে বা আড়ালে স্পট খুঁজত। এখন তারা স্কুল গ্রাউন্ডে বা বাথরুমে বন্ধুরা মিলে গাঁজা সেবন করছে। তারা জানিয়েছে, তাদের কাছে ক্যানাবিস বিক্রি নিষিদ্ধ হলেও এটা কোনো সমস্যা নয়। কারণ লাঞ্চ ব্রেকে পিজার দোকানে বা ডেলিতে গেলে পাওয়া যায়।

তাছাড়া কোথাও যেতে হয় না, চাইলে এমনিই চলে আসে। দ্য সিটি জানিয়েছে, প্যানডেমিক অনেক স্কুল শিক্ষার্থীর মানসিক স্বাস্থ্যকে ভেঙে দিয়েছে। তারা বাধ্য হয়ে ক্যানাবিস সেবন করে। আর তাদের সংস্পর্শে এসে অনেক ছাত্রছাত্রী শখে ক্যানাবিস সেবন শুরু করে পরে আসক্ত হয়ে পড়ে। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, টিনএজারদের ‘এক্সপেরিমেন্টিং’ মারিউয়ানা গ্রহণ নতুন নয়। এটা কমবেশি আগেও ছিল। কিন্তু লেগাল হয়ে যাওয়ার পর এখন তরুণ-তরুণীদের কাছে তা সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। ফলে তারা স্কুল শুরু হওয়ার আগে এবং স্কুল চলাকালে তারা প্রায় অবাধে সেবন করা শুরু করেছে। এর জন্য শুধু সহজলভ্যতাই একমাত্র কারণ নয়, মেন্টাল হেলথ ক্রাইসিসও দায়ী। এই মেন্টাল হেলথ ক্রাইসিস থেকে উদ্ধার পাওয়ার লক্ষ্যে কিশোর-কিশোরী শিক্ষার্থীরা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ক্যানাবিস সেবনের।

দ্য সিটি বলছে, আর্থিক সংকটে অনেক স্কুলে ডেডিকেটেড সাবস্ট্যান্স এ্যাবিউজ কাউন্সেলরের পদ শূন্য রয়েছে। অনেক স্কুলে অর্ধেকে নেমে এসেছে। ফলে অনেক স্কুল কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারছে না বিষয়টি কিভাবে হ্যান্ডেল করা যাবে।
ব্রংক্স ল্যাটিন স্কুলের প্রিন্সিপাল দ্য সিটিকে জানান, আমরা জানি অনেক শিক্ষার্থী প্যানডেমিকের কারণে অনেক মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছে। সে কারণে তারা ক্যানাবিস সেবন করছে মানসিক যন্ত্রণা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। আমরা জানি না এই পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসার পথ কোথায়।
নিউইয়র্ক সিটির এডুকেশন ডিপার্টমেন্টের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে চকবিট জানাচ্ছে, ২০১৯ সালের তুলনায় স্কুলে তাদের ভাষায় ‘কন্ট্রোলড সাবসট্যান্স’ বা ড্রাগ বা ক্যানাবিস সেবন শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেড়েছে ৮ শতাংশ ২০২২ সালে। যদিও স্কুলে কিন্ডারগার্টেন থেকে টুয়েলফথ গ্রেডের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ১১ শতাংশ গত বছর।

দ্য সিটি বলছে, অনেক স্কুলই এ বিষয়ে ডিসিপ্লিনারি এ্যাকশন নিতে চায় না। অনেক স্কুল এই সংকটকে স্বীকারও করতে চায় না। কারণ অনেক ড্রাগ এক্সপার্ট মনে করেন, ড্রাগ ব্যবহারের বিরুদ্ধে এ্যাকশন গ্রহণ করলে তা কার্যকর হয় না। বরং মোটিভেশন প্রয়োজন। প্রয়োজন কাউন্সেলিং।
ম্যানহ্যাটানের একটি হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ ছাত্রছাত্রীদের বাবা-মাকে গত ফলএ জানিয়ে দিয়েছে, কোনো শিক্ষার্থী স্কুল ক্যাম্পাসে ভেপিং গ্রহণ অবস্থায় ধরা পড়লে তাকে সাসপেন্ড করা হবে। অপর কয়েকজন শিক্ষক বলেছেন, আমাদের স্কুলগুলোতে কোনো সাপোর্ট সিস্টেম নেই, যা ছাত্রছাত্রীদের এই ক্যানাবিস সেবন থেকে বিরত রাখতে পারে। এর জন্য প্রশিক্ষিত স্টাফ প্রয়োজন।

নিউইয়র্ক সিটির স্কুল ডিপার্টমেন্ট মুখপাত্র দ্য সিটিকে বলেছেন, সাবস্ট্যান্স এ্যাবিউজ এন্ড ইন্টারভেনশন স্পেশালিস্টরা ক্যানাবিস সেবন থেকে শিক্ষার্থীদের বিরত রাখার জন্য স্কুলগুলোর সাথে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করছে। কিন্তু তথ্য অনুযায়ী নিউইয়র্ক সিটির ১৬০০ পাবলিক স্কুলে এই ধরনের বিশেষজ্ঞ ছিলেন ২০০৬ সালে ৫০০ জন।

গত বছর এই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ২৮০তে।
তবে অভিভাবকরা আশংকা প্রকাশ করে বলেছেন, ক্যানাবিস বিক্রি ও সেবন বৈধ হওয়ার পর থেকে এর ব্যবহার প্রকাশ্যে চলে এসেছে এবং স্কুল ও কলেজ ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ায় তা তাদের ঘুম হারাম করে দিয়েছে।