যে আটটি ভুলের কারণে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে আসছে না

আপনি হয়তো দিনের পর দিন ডায়েটিং করেই যাচ্ছেন, অথচ এক ইঞ্চি ওজনও কমেছেনা! তাহলে এখনই আপনার ডায়েটিংয়ের নিয়মগুলো নিয়ে পুণরায় ভাবা শুরু করুন। ওজন কমানোর চিন্তা মাথায় আসলেই আমরা যে বিষয়টি নিয়ে ভাবা শুরু করি তা হলো খাদ্য তালিকায় ক্যালোরি কমানো।

ক্যালোরি কম খেলে ওজন কমে এই ধরাণাটি আংশিক সত্য। কারণ এই নিয়মটির প্রয়োগ করতে গিয়ে আমরা প্রায়ই কী খেতে হবে না হবে তা নিয়ে গোলমাল পাকিয়ে ফেলি। আসুন তাহলে ডায়েটিং করার পরও কোন কোন ভুলের কারণে ওজন নিয়ন্ত্রণে আসছে না…..

১. হালকা নাস্তা
সকালের নাস্তায় প্রয়োজনের তুলনায় কম করে খেলে আপনার পরিপাকতন্ত্রের কার্যক্রম ধীর হয়ে পড়ে। এবং এমন কিছু হরমোনগত পরিবর্তন ঘটে যা ওজন কমাতে বাধা তৈরি করে।

রাতের খাবারের ১০-১২ ঘন্টার বিরতির পর খেতে বসেও যদি আপনি কার্পন্য করেন তাহলে দুপুরের খাবারে অতিরিক্ত খাবার খেয়ে ফেলতে পারেন। সকালের নাস্তায় ক্যালসিয়াম, আয়রন, প্রোটিন এবং আঁশযুক্ত খাবার খান বেশি করে। কারণ ক্যালোরি পোড়ানো এবং হজমের নানা কর্মকাণ্ড সম্পাদনের জন্য আমাদের দেহের এই পুষ্টি উপাদানগুলো দরকার হয়।

২. আপনি শুধু একই ধরনের খাবারের ওপর বেশি জোর দেন
আপনার দেহের জন্য দরকার একটি ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস। সুতরাং ওজন কমাতে গেলেও বিশেষ কোনো খাবার বেশি কমিয়ে ফেলবেন না যেন। কার্বোহাইড্রেটস, প্রোটিন, ফ্যাট এবং আঁশজাতীয় খাবার খেতে হবে প্রয়োজনীয় হারে। ওজন কমাতে গিয়ে কার্বোহাইড্রেটস গ্রহণ বেশি কমিয়ে ফেললে এবং কোনো কারণ ছাড়াই শুধু সবজি হয়ে পড়লে কিন্তু গিতে বিপরীত হতে পারে।

৩. পরিমাণ না কমানো
আপনি হয়তো অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া বাদ দিয়ে শুধু স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া শুরু করেছেন। কিন্তু পরিমাণে বেশি খাচ্ছেন। তাহলে কিন্তু চলবে না। এমনকি কার্বোহাইড্রেট কমানোর মানে কিন্তু এই নয় যে মৌলিক খাবারগুলো পুরোপুরি বাদ দিতে হবে। বরং পরিমাণ কমাতে হবে।

৪. রাতের খাবার আগেভাগেই খেলেন কিন্তু ঘুমাতে গেলেন দেরিতে
ওজন কমানোর জন্য সচরাচর যে পরামর্শটি দেওয়া হয় তা হলো সন্ধ্যা ৭টার মধ্যেই রাতের খাবার খেতে হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটি দেখা দেয় তা হলো, আপনি খেলেন আগেভাগে কিন্তু ঘুমাতে গেলেন দেরিতে।

ফলে মধ্যরাতে আবার আপনার তীব্র ক্ষুধা লাগতে পারে যা আপনি উপেক্ষা করতে পারবেন না। তবে রাতে না খেলেও পরের দিন আপনি হয়তো বেশি খেয়ে ফেলবেন। ফলে রাতের খাবার খাওয়ার দুই ঘন্টার মধ্যেই ঘুমাতে যান। আর যদি দেরি করে খাবার খান তাহলে সারাদিনের যে কোনো বেলার চেয়ে কম ক্যালোরি খান।

৫. জলখাবার না খাওয়া
দ্রুত ওজন কমানোর জন্য দিনব্যাপী আপনার পরিপাকতন্ত্রকে সচল রাখতে হবে। এজন্য আপনাকে প্রতি তিন থেকে চার ঘন্টা পর অল্প করে খাবার খেতে হবে। সাধারণত সকালের নাস্তা ও দুপুরের খাবারের মাঝখানে হালাক জলখাবার খেতে বলা হয়। তা হতে পারে ফল বা সালাদ।

আবার দুপুর ও রাতের খাবারের মাঝখানেও আরেকবার খেতে বলা হয়। যা হতে বাদাম বা সবজি। দুবেলা খাবারের মাঝে বেশি সময় দেরি করলে তাতে রক্তে সুগারের পরিমাণ কমে যেতে পারে যা আপনার হজম প্রক্রিয়ায় সমস্যা তৈরি করতে পারে এবং আপনাকে আরো বেশি ক্ষুধার্ত করে তুলতে পারে।

৬. আপনি শুধু কম ক্যালোরিযুক্ত খাবার খান
ডায়েটিং করার মানে এই নয় যে, আপনি শুধু স্বল্প ক্যালোরিযুক্ত খাবার খাবেন। তারচেয়ে বরং আপনাকে এমন সব খাবার খেতে হবে যেগুলো দীর্ঘ সময় ধরে আপনার পেটকে ভরা রাখবে। যেমন আঁশসমৃদ্ধ খাবার, ফল এবং পুর্ণশস্য।

৭. আপনি পর্যাপ্ত পানি পান করেন না
পানি পান না করে আপনি হয়তো শুধু সবজি এবং ফলের জুস খাওয়ায় বেশি গুরুত্ব দিয়ে ফেলেন। আঁশসমৃদ্ধ খাবার চর্বি কমানোর সেরা হাতিয়ার। কিন্তু সেসব জুস বানিয়ে খেলে আঁশের পরিমাণ কমে যেতে পারে।

ফলে পানি পান না করে অন্য কোনো পানীয় পান করলে তাতে আপনার ক্যালোরি গ্রহণের পরিমাণ আরো বেড়ে যেতে পারে। আর ঠিক মতো পানি না খেলে অনেক সময় পানির তৃষ্ণাকেই ক্ষুধা বলে মনে হতে পারে এবং আপনি অতিরিক্ত খাবার খেতে পারেন।

৮. খাবার কম খান কিন্তু ব্যায়াম করেন বেশি
ওজন কমানোর সবচেয়ে বড় মন্ত্র হলো ভারসাম্য এবং সঙ্গতি। আপনি যদি ক্যালোরি গ্রহণ উচ্চহারে কমান কিন্তু কঠোর শরীরচর্চা অব্যাহত রাখেন তাহলে আপনার পরিপাকতন্ত্র দূর্বল হয়ে পড়বে এবং আপনার ওজনও কমবেনা ঠিকভাবে।

হঠাত করেই খাবার গ্রহণ উচ্চহারে কমালে আপনার ক্ষুধাও মিটবেনা আবার বেশি শরীর চর্চা করার কারণে দিনের অন্যান্য কর্মকাণ্ড ব্যাহত হবে। সুতরাং আপনার কত ক্যালোরি খাবার গ্রহণ দরকার আরো কত ক্যালোরি পোড়ানো দরকার তার মধ্যে একটি ভারসাম্য স্থাপন করুন। –এনডিটিভি