রমজান আসে আলোকিত মানুষ সৃষ্টি করতে মু. বেলায়েত হোসেন, গণমাধ্যমকর্মী

ইসলামী জীবন বিধান মহান আল্লাহ পাকের সর্বশ্রেষ্ঠ নেয়ামত। আর সে নেয়ামতের মূল পঞ্চম খুঁটির মধ্যে রমজান তৃতীয়। রমজান আসলেই সারা দেশের পটপরিবর্তন ঘটে। একটি ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা কেমন হবে সেই চিত্র রমজান মাসে অবলোকন করা যায়। সকল ঈমানদার-দ্বীনদার মুসলমানের মাথায় টুপি, পরোনে পাঞ্জাবী অথবা ভালো মানের শার্ট। ইসলামের সুশীতল জীবন বিধানের উপর মানিয়ে চলতে সবাই সচেষ্ট। হ্যঁা কিছু অতিলোভী প্রকৃতির মানুষও রয়েছে যাদেরকে রমজানের শিক্ষা স্পর্শ করে না। এদের কোন পরিবর্তন হয় না। যেমন পরিবর্তন হয় না কয়লার রং।

মাহে রমজানের শিক্ষা : মাহে রমজানের রোজা মানুষের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে ব্যক্তি-পরিবার ও সমাজজীবনে অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে চলার শিক্ষা দেয়। হিংসা- বিদ্বেষ, হানাহানি ও আত্ম-অহংবোধ ভুলে গিয়ে সুখী, সুন্দর ও সমৃদ্ধিশালী সমাজ প্রতিষ্ঠার মাসই হলো মাহে রমজান। উম্মতে মুহাম্মদীর নৈতিক চরিত্র উন্নত করে সাহাবায়ে কিরামের মতো আদর্শ জীবন গঠন করার প্রশিক্ষণ এ মাসেই গ্রহণ করতে হয়। রোজা মানুষকে প্রকৃত ধার্মিক হিসেবে গড়ে ওঠার সুযোগ করে দেয়। রোজাদারদের ইবাদত-বন্দেগির ভেতর দিয়ে সব ধরনের অন্যায়-অত্যাচার, অশোভন-অনাচার, দুরাচার-পাপাচার ও যাবতীয় অকল্যাণকর কাজকর্ম থেকে বিরত হয়ে সংযম সাধনার পথ ধরে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে আত্মসমর্পণের শিক্ষা দেয়। ক্ষুধা-তৃষ্ণার কষ্ট সহ্য করে একত্রে ইফতার, দীর্ঘ তারাবি নামাজ, সাহারী এ সবকিছুর মধ্য দিয়ে একজন রোজাদার ব্যক্তি মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার দ্বারা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হন। ঈদুল ফিতরের উৎসব উদযাপনের মাধ্যমে মাহে রমজানের পরিসমাপ্তি ঘটে। রমজান মাসের সম্পূর্ণ কার্যক্রমটি ইসলামি সংস্কৃতির মহান ঐতিহ্য বহন করে। রোজা মুসলমানদের আদর্শ চরিত্র গঠন, নিয়মানুবর্তিতা ও আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের শিক্ষা দেয়। সত্যিকার মুমিন হিসেবে গড়ে ওঠার অনুপম শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাস এ রমজানুল মোবারক; এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে তাকওয়া অর্জন করা। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সব প্রকার নাফরমানি কাজ থেকে দূরে থাকার নামই ‘তাকওয়া’।

রোজা বান্দার মনে আল্লাহর ভয়-ভীতি সৃষ্টি করে থাকে। আল্লাহর কাছে বান্দার মান-মর্যাদা নির্ধারণের একমাত্র উপায় তাকওয়া। এটিই মানুষের মনে সৎ ও মানবিক গুণাবলি সৃষ্টি করে। সুতরাং, যাবতীয় অন্যায় কাজ থেকে বিরত থেকে ভালো কাজ করতে পারলেই রোজা পালন সফল ও সার্থক হবে। এভাবে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে অর্জিত প্রশিক্ষণ দ্বারা নিজেদের একজন সৎ ও খোদাভীরু নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সচেষ্ট হতে হবে।

রোজার শিক্ষা নিয়ে তাকওয়ার গুণাবলি অর্জনের মধ্য দিয়ে মানুষ ইহকালীন কল্যাণ ও পারলৌকিক মুক্তি লাভ করতে পারে। মাহে রমজানের এ শিক্ষা যদি বাকি ১১ মাস কাজে লাগানো যায়, তাহলে পৃথিবীতে এত অশান্তি ও অনাচার থাকতে পারে না। যেমনভাবে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয় সাফল্য লাভ করবে যে পবিত্রতা অর্জন করে। ’ (সূরা আল-আ’লা, আয়াত-১৪) মাহে রমজান মানুষকে ঐশ্বরিক গুণে গুণান্বিত হওয়ার এবং কুপ্রবৃত্তির দাসত্ব থেকে মুক্ত হওয়ার শিক্ষা দেয়। রোজাদার একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজের ক্ষুধা, তৃষ্ণা, কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ প্রভৃতি রিপু দমনপূর্বক রোজা পালন করেন। রোজার মাধ্যমে মানুষ পরমতসহিষ্ণুতা ও হতদরিদ্রের প্রতি সাহায্য-সহযোগিতা, পারস্পরিক সৌহাদর্য ও সহমর্মিতার শিক্ষা লাভ করেন। রোজা মানুষের ভেতর ও বাহিরে দুু-দিকের সংশোধন করে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে, চরিত্র, আচার-আচরণ সংশোধনপূর্বক প্রকাশ্যভাবে সুন্দর করে গড়ে তোলা রোজার গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য। এ পরিপ্রেক্ষিতে রোজা মানুষকে পার্থিব লোভ- লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, পরচর্চা, পরনিন্দা, মিথ্যাচার, প্রতারণা, অতিরিক্ত সম্পদ অর্জনের আঙ্খকা প্রভৃতি থেকে দূরে সরিয়ে রেখে আত্মসংযমের শিক্ষা দেয়। রোজা মানুষকে আত্মনিয়ন্ত্রণ ও পারস্পরিক ভালোবাসার শিক্ষা দেয়। তাই মাহে রমজানে মাসব্যাপী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সবাইকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার দৃপ্ত শপথ নিতে হবে-আলোকিত মানুষ হয়ে সমাজে আলোকরশ্মী ছড়িয়ে ইহকাল ও পরকালে নাজাতের পথ বেয়ে চলতে হবে। আর এতেই রয়েছে মানব জাতির উন্নয়ন-সমৃদ্ধি-আল্লাহ ও তার রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সুন্তষ্টি।

সারকথা : দীর্ঘ এক মাস মাহে রমজানের যে প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত হয়ে আলোকিত মানুষ (ঈমানদার) হই। সে আলোয় আর বাকী ১১ মাস কাটিয়ে দিয়ে আল্লাহ ও প্রিয় রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সুন্তষ্টি লাভ করি। আল্লাহপাক আমাদেরকে রমজানের প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত হওয়ার তৌফিক দিক, আমিন!