লেখকের মেলা : স্বপ্নের মতো সুন্দর বইমেলা

বইমেলা স্বপ্নের মতো সুন্দর। কিন্তু এবার মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণ এর কারণে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে জ্ঞান সৃজনশীল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের। সন্ধ্যার সময় স্বাধীনতাস্তম্ভের পাদদেশে সরোবরটির পাশে বাঁধানো পারে গিয়ে বসে থাকুন, কিন্তু লেকের ধারে হাঁটুন, পানিতে পড়েছে স্বাধীনতাস্তম্ভের প্রতিবিম্ব, যা জানাচ্ছে এখানে পাকিস্তানিরা আত্মসমর্পণ করেছিল, এখানে বঙ্গবন্ধুকে বঙ্গবন্ধু খেতাব দেওয়া হয়েছিল, এখানে ৭ই মার্চ কিংবা ১০ জানুয়ারির ভাষণ হয়েছিল; আর দুই পাশে দেখতে পাবেন প্রকাশকদের সুন্দর করে সাজানো প্যাভিলিয়ন কিংবা স্টল। হঠাৎ আলোর ঝলকানি লেগে ঝলমল করে চিত্ত। আজ চ্যানেল মাই টিভি ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাক্ষাৎ কারে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন লেখক, প্রকাশক, ডিইউজে সদস্য মোহাম্মদ অলিদ সিদ্দিকী তালুকদার।

অলিদ তালুকদার বলেন- বইমেলা এত সুন্দরও হয়। অনেক খোলা জায়গা, বসার ব্যবস্থা, খাবার এবং নামাজেরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী এবং স্থপতি এনামুল করিম নির্ঝর নিশ্চয়ই আমাদের ধন্যবাদ পাবেন এত সুন্দর আয়োজনের জন্য।

এখন দরকার ভালো বই। অনেক ভালো বই ভেতরে ভেতরে আছে। ধ্রুপদি বইগুলো আছে। সৈয়দ শামসুল হক একবার আমাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, আমাদের মধ্যে কজন মাইকেল মধুসূদন দত্ত পুরোটা পড়েছি? কজন বঙ্কিমচন্দ্র পুরোটা পড়েছি। সবাই পুরোটা পড়বেন তা আমি আশা করি না, কিন্তু বইগুলো তো সংগ্রহে থাকতে হবে। সঞ্চয়িতা, সঞ্চিতা, গীতবিতান, জীবনানন্দ, বিষাদসিন্ধু, অসমাপ্ত আত্মজীবনী ছাড়া কোনো শিক্ষিত বাঙালির বাসায় কল্পনা করা যায়? আমি ঘুরে ঘুরে অনেক বই কিনে ফেলেছি। কিন্তু আরো কিনতে হবে।

তিনি আরও বলেন তো বই চাই। অনেক ভালো বই এরই মধ্যে বেরিয়ে গেছে। সৈয়দ শামসুল হকের ‘আমার শহর’ কিংবা বঙ্গবন্ধুর ‘আমার দেখা নয়াচীন।’ প্রফেসর ডক্টর ইমেরিটাস এমাজউদ্দীন আহমদ এর লেখা গণতন্ত্র এখন, গণতন্ত্রের শত্রু মিত্র ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ। প্রফেসর ডক্টর মাহবুব উল্লাহ এর লেখা ” পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট আন্দোলন ১৯৪৭- ১৯৭১- (সাফল্য ও ব্যর্থা-) এই বইগুলো প্রকাশ করেছে আমাদের প্রকাশনা দেশের সুনামধন্য প্রতিষ্ঠান দি ইউনিভার্সেল একাডেমি (প্যাভিলিয়ন-২৬-) এছাড়াও উক্ত দি ইউনিভার্সেল একাডেমিতে দেশের প্রখ্যাত লেখকদের গুরুত্বপূর্ণ বইগুলো পাওয়া যাচ্ছে। যাহা পাঠক দর্শক শ্রোতাদের নিকট অত্যান্ত জনপ্রিয়তার শীর্ষে। মেলায় আগত সু প্রিয় পাঠক দর্শক শ্রোতাদের নিকট আহবান জানাচ্ছি আপনারা দি ইউনিভার্সেল একাডেমি থেকে এই মূল্যবান বইগুলো সংগ্রহ করবেন।

আমরা সবাই জানি বইয়ের কোনো সীমান্ত নেই। কোনো দেশই তার লেখককে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না যে বিশ্বের অন্য কোনো দেশে তাঁর লেখা যাবে না। গত শতকের পঞ্চাশের দশকে সোভিয়েত ইউনিয়ন; এখনকার রাশিয়া; বরিস পাস্তেরনাককে নোবেল পুরস্কার গ্রহণ করতে বাধা দেয়। সেই থেকে আজ পর্যন্ত এমন ঘটনা আর ঘটেনি। কিন্তু আমরা দেখতে পাই সীমান্ত ছাড়িয়ে বই পৌঁছে যায় মানুষের কাছে। এশিয়ার মানুষ হয়ে জানতে পারি আফ্রিকার সাহিত্য, তার ভেতরের মানুষের জীবনযাপনের চিত্র। পাশাপাশি সংস্কৃতির রূপরেখাও উদ্ভাসিত হয়। এসব জানা জ্ঞানের সাধনা। জানতে পারি ইউরোপ, আমেরিকা, লাতিন আমেরিকার জীবনযাপনের কথা। এক অর্থে বলা যায়, বই মানবজাতির অক্ষয় সাধনা। জীবনের বাঙ্ময় রূপকে বর্ণবহুল করে তোলে। এভাবে বিশ্বজুড়ে মানুষ একে অপরের দিগ্বলয় দেখে চিহ্নিত করে মানবজাতির জন্য শান্তি-সংস্কৃতির রূপরেখা।

বাংলা একাডেমির একুশে গ্রন্থমেলা শুধু কেনা-বেচার জায়গা নয়। এই গ্রন্থমেলা বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করে নিবিড়ভাবে। আজকের দিনে শহীদ মিনার আমাদের সেই অবিনাশী চেতনা, যা মানবজাতির অক্ষয় সম্পদ। বাঙালি প্রথম জাতি, মাতৃভাষার মর্যাদার জন্য যাঁরা জীবন দিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে আসামের শিলচরে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় জীবন দিয়েছিলেন ১১ জন তরুণ। তারুণ্যের দীপ্ত চেতনায় ভাষা কোথাও মর্যাদার জায়গা হারায়নি।

আচ্ছা, আরেকটি কথা বলি। শিশু-কিশোরদের শুধু ক্যারিয়ারভিত্তিক বই দেবেন না, তাদের গল্প-কবিতার বই দিন। তাতে তাদের হৃদয় সংবেদনশীল হবে, তাদের কল্পনাশক্তি বাড়বে, তারা সুন্দর মানুষ হবে।

পরিশেষে চ্যানেল মাই টিভি ও গণমাধ্যমের মাধ্যমে মেলায় আগত পাঠক দর্শক শ্রোতাদের নিকট আহবান জানাচ্ছি আপনারা আপনাদের সুপ্রিয় প্রকাশনা দি ইউনিভার্সেল একাডেমি থেকে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ বিশিষ্টজনের লেখা বইগুলো সংগ্রহ করার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। মাই টিভি ও আরও গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা এবং আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি।