শবেকদর হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ, যে আমলগুলো করবেন

মুসলমানদের কাছে লাইলাতুল কদর এক বরকতময় ও মহিমান্বিত রাত। এ রাতে আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিম নাজিল করেছেন এবং এ রাতের নামে আল্লাহতায়ালা একটি সুরাই নাজিল করেছেন। এ রাতের মর্যাদা হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্তম।

আল্লাহতায়ালা বলেন, আমি ইহা (কোরআন) নাজিল করেছি এক সম্মানিত (শবেকদর) রাতে। লাইলাতুল কদর সম্পর্কে আপনি কি জানেন? লাইলাতুল কদর হলো এক হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। এতে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতাগণ ও রুহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে। এটা নিরাপত্তা, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।

শবেকদর সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ রাতগুলোর একটি। এ রাত সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন অবতীর্ণ করেছি মহিমান্বিত রাতে। আর মহিমান্বিত রাত সম্পর্কে তুমি কী জানো? মহিমান্বিত রাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।’ (সুরা : কদর, আয়াত : ১-৩)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় কদরের রাতে ইবাদতের মধ্যে রাত জাগবে, তার আগের গুনাহ ক্ষমা করা হবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৫)

শবেকদরে গুরুত্বপূর্ণ কিছু আমল ও জিকির করা যেতে পারে। নিম্নে তা তুলে ধরা হলো-

১। অনর্থক কাজ পরিহার করা (টিভি, মোবাইল ইত্যাদিতে সময় নষ্ট না করা)। (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ৩)
২। ইবাদতে প্রফুল্লতার জন্য আরামদায়ক পোশাক পরা।
৩। দান-সদকা করা।
৪। পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করা। (বুখারি, হাদিস : ৪৯৯৭)
৫। বেশি বেশি নফল ও হাজতের নামাজ পড়া। (বুখারি, হাদিস : ১৯০১)
৬। দোয়া ও জিকিরে মগ্ন থাকা। নবীজি (সা.) আয়েশাকে (রা.) কদরের রাতে নামাজ পড়ার জন্য একটি দোয়া শিখিয়েছেন। তা হলো- ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউউন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফাফু আন্নি।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫১৩)

আরও পড়ুন: এখনও আছে গুনাহ মাফের সময়

এ ছাড়া নিম্নবর্ণিত জিকিরগুলো করা যেতে পারে।
(১) সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার। (১০০ বার)
(২) লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। (২০০ বার)
(৩) আস্তাগফিরুল্লাহ (কমপক্ষে ৫০০ বার, যত বেশি সম্ভব হয়)
(৪) বেশি বেশি দরুদ পড়া।
(৫) সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি (কমপক্ষে ১০০ বার)
(৬) ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়া হুওয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কদির।’ (কমপক্ষে ১০০ বার)
৭) দোয়া ইউনুস। (যত পারা যায়)
(৮) ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম।’ (কমপক্ষে ১০০ বার)।
(৯) ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।’ বেশি বেশি পড়তে পারেন।
(১০) সুরা ইখলাস যত বেশি পড়া যায়।
(১১) সাইয়েদুল ইসতিগফার পাঠ করা। ইসতিগফার জাতীয় আমলগুলো রাতের শেষ ভাগে করা যেতে পারে। (সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ১৮)
(১২) লম্বা রুকু-সিজদাসহ তাহাজ্জুদ পড়া। সম্ভব হলে সিজদায় কোরআন-হাদিসে বর্ণিত দোয়াগুলো পড়া। (সুরা : জুমার, আয়াত : ৯; নাসায়ি, হাদিস : ২২০২)
(১৩) সাহরি খাওয়ার আগে মহান আল্লাহর কাছে কান্নাজড়িত কণ্ঠে দোয়া করা। (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৬; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৩৬৭; নাসায়ি, হাদিস : ৩১০৮)
(১৪) সাহরি খাওয়া। (নাসায়ি, হাদিস : ২১৪৮)
(১৫) ফজরের নামাজ পড়া।

বেশি বেশি নফল সালাত আদায় করা উচিত। তবে কত রাকাত আদায় করতে হবে বা কোনো সুরা দিয়ে সালাত আদায় করতে হবে তার কোনো নির্দিষ্ট দলিল নেই। যত রাকাত ইচ্ছা এবং যে কোনো সুরা দিয়ে ইচ্ছা পড়া যায়। এমনকি নফল নামাজের জন্য কোনো নিয়তও নেই।

বেশি বেশি দোয়া করা উচিত। কারণ এ রাতে দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি হুজুর (সা.) কে আরজ করলাম, হে আল্লাহর নবী! আপনি বলে দিন যদি আমি জানতে পারি যে, শবেকদর কোন রাতে হবে, তাতে আমি কী বলব? রাসূল (সা.) বললেন তুমি বলবে, হে আল্লাহ তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাস। অতএব, তুমি আমাকে ক্ষমা কর।