শিক্ষক মানুষকে আলোর পথ দেখায়

শিক্ষক মানুষকে আলোর পথ দেখায়

জুবায়েদ মোস্তফা

শিক্ষক আদর্শ জাতি গঠনের নির্মাতা, জাতিকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে যার ভূমিকা অতুলনীয়। ভুল পথে গমন করা মানুষকে আলোর দিশারী হয়ে সঠিক পথ দেখায় একজন শিক্ষক। আঁধারে ডুবে থাকা কোন মানুষ ও শিক্ষকের সান্নিধ্যে এলে সূর্যের আলোর মত আলোকিত হয়ে যায়।মিস্ত্রি ছাড়া যেমন বড় বড় ইমারত নির্মাণ করা সম্ভব নয়, তদ্রুপ একজন শিক্ষক ছাড়া শিক্ষিত জাতি গঠন সম্পূর্ণ রুপে অসম্ভব। মানুষ কখনো মেরুদন্ড ছাড়া সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না, একটি জাতির জন্য মেরুদন্ড হল শিক্ষা। শিক্ষা ছাড়া মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো যায় না।যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত, সে জাতি তত বেশি উন্নত এবং এগিয়ে।আর এর মূল নায়ক হল শিক্ষক।
মা বাবার আত্মত্যাগের জন্য মানুষ পৃথিবীর আলোর মুখ প্রদর্শন করে, একটি সু গঠিত দৈহিক কাঠামো পায়।আর শিক্ষকের আত্মপ্রচেষ্টায় পৃথিবীর সবচেয়ে মহা মূল্যবান শিক্ষা লাভ করেন, চিরদিনের জন্য শিক্ষার আলোয় নিজে আলোকিত হন।তাই শিক্ষকের অবদান অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই।

একজন অক্ষর জ্ঞান হীন মানুষের জন্য শিক্ষক অন্ধের যষ্টির মত। অন্ধ মানুষ যেমন যষ্টি ছাড়া নিরূপায়। যষ্টি তার একমাত্র অবলম্বন হিসেবে কাজ করে। যষ্টি ছাড়া সঠিক ভাবে চলাফেরা করতে পারে না বারবার খোচট খেতে হয়। একজন অক্ষর জ্ঞান হীন মানুষ কখনোই স্বাবলম্বী হতে পারে না। জীবনের প্রতিটি পদে-পদে তাকে খেসারত দিতে হয়। পরজীবী প্রাণীর মতো তাকে সর্বদা অন্যের উপর নির্ভরশীল হতে হয়। স্বাবলম্বী হওয়ার পূর্বশর্ত হলো শিক্ষা অর্জন করা। শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষা অর্জন করার মাধ্যমেই অনায়াসে নিজের মত করে জীবন সাজাতে পারে, জীবনের কঠিন পথচলা অধিক সহজ হয়ে যায়।

একজন আদর্শবান শিক্ষক তার সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের উত্তম চরিত্রের শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে আপ্রাণ চেষ্টা করেন। শিক্ষক এর সান্নিধ্যে শিক্ষার্থীরা আচার-আচরণ, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও আদব-কায়দার আয়ত্ত করতে পারেন। কথায় আছে ‘আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ।’ তাই শিশুর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে গুরু দায়িত্ব পালন করতে হয় শিক্ষককে। একজন শিক্ষক তার উত্তম আদর্শের মাধ্যমে কোমলমতি শিশুদের ভবিষ্যৎ আলোকিত করতে পারে। মা-বাবা শিক্ষিত হলেও, প্রতিটি শিশুর সঠিক শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শিক্ষকের দুয়ারে উপনীত হতে হয়। প্রতিটি শিশুই শিক্ষকের কাছে তার নিজের সন্তানের মত,তাই নিজের সন্তানের মতো স্নেহ ভালবাসা দিয়ে সর্বদা আগলে রাখেন এবং মানুষের মত মানুষ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন। শিক্ষা দেন সততা, নীতি-নৈতিকতা ও উত্তম চরিত্র গঠনসহ জীবন সাজানোর সব নিয়ম-কানুন। সেই সঙ্গে একজন শিক্ষক শিশুদের সুন্দর আচার-আচরণ ও শুদ্ধ ভাষায় কথা বলার কলাকৌশল শিক্ষা দেন।

আদর্শবান একজন শিক্ষক পিতা মাতার মতো কখনো কখনো অতি আদর সোহাগ দিয়ে বুকে টেনে নেন, আবার প্রয়োজন হলে কঠোর ভাবে শাসন দিয়ে অন্যায় ও অসৎ পথ থেকে সঠিক পথে নিয়ে আসেন। সবসময় শিক্ষার্থীদের জন্য ভালবাসার প্রাচীর নির্মাণ করেন যেন কোমলমতি শিক্ষার্থীরা সুরক্ষিত থাকেন। শিক্ষক সত্য কথা বলাকে নেশায় পরিণত করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যায়। শিক্ষাজীবনের শুরু থেকেই শিক্ষকের কাছে শপথ করে দেশের কল্যাণে নিজেকে সর্বদা নিয়োজিত রাখার কথা। শিক্ষকতা হচ্ছে মহৎ একটি পেশা। সদকায়ে জারিয়া হিসেবে সারা জীবন যার প্রতিদান পাবেন। শিক্ষক অনেক সময় শাসন করেন চোখ রাঙিয়ে কথা বলেন যেন শিক্ষার্থীরা পাবে মনোযোগী হয়ে ওঠে, শিক্ষক সবার মঙ্গলের জন্যই এমন আচরণ করে থাকেন। মাঝে মাঝে হিতের বিপরীত হয়ে যায়, শিক্ষার্থীরা রাগ করে বসে শিক্ষকের ওপর। অনেক সময় তো ছাত্রছাত্রীরা অকারণে শিক্ষকের সঙ্গে বেয়াদবি করে, খারাপ আচরণ করে। তবে শিক্ষকের সঙ্গে বেয়াদবি করে কেউ কখনও সফল হতে পারেনি। শিক্ষকের দোয়া ও ভালোবাসা থাকলে ছাত্রছাত্রীদের জীবনে সফলতা সহজেই আসে। জীবনে অধিষ্ঠিত হোন সফলতার সর্বোচ্চ চূড়ায়। দীর্ঘ সময় পরে হলেও একদিন সবাই স্মরণ করে শিক্ষকের শাসনের কথা। আদর-স্নেহ, ভালোবাসার কথা। তখন সবাই আফসোস করে। আসলে আমরা সময় থাকতে সময়ের মূল্য বুঝি না। একজন শিক্ষক তার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজের পরিবারকে সময় দিতে পারে না। দিনের পর দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাজে ব্যস্ত থাকে। ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে ব্যস্ত থাকে। একজন শিক্ষক ছাত্রছাত্রীদের অজানাকে জানার আগ্রহ সৃষ্টি করেন। শুধু পাঠ্যবই থেকে নয়, বাইরের জ্ঞান অর্জনের শিক্ষাও দেন। একজন শিক্ষক জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন।

লেখকঃ জুবায়েদ মোস্তফা
শিক্ষার্থী, লোক প্রশাসন বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।