সবচেয়ে বেশি লোকসানে সোনালী ব্যাংক

নানা অনিয়ম আর দুর্নীতিতে দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছে ব্যাংকিং খাত। খেলাপি ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে হাঁটছে রাষ্ট্রাত্ব ব্যাংকগুলো। এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পাশাপাশি বাড়ছে লোকসানি শাখাও। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লোকসানি শাখা রয়েছে সোনালী ব্যাংকের। এর পরই রয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। তারপরের অবস্থানে রূপালী ও জনতা ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদেন এসব তথ্য উঠে এসেছে।

তবে ব্যাংকখাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লোকসানি শাখা কমাতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। খুব শিগগিরই এই সংখ্যা কমিয়ে আসবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদেনে সরকারি খাতের বিশেষায়িত ব্যাংক বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকেরও (বিডিবিএল) লোকসানী শাখা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদেন অনুযায়ী, গত জুন শেষে সরকারি ৬ ব্যাংকের মোট শাখা সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৭১০টি। এদের মধ্যে ৫৩৩টি শাখাই রয়েছে লোকসানে। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের ২৮৫টি, অগ্রণী ব্যাংকের ১১৬টি, রূপালী ব্যাংকের ৭৪টি ও জনতা ব্যাংকের ৫৮টি শাখা লোকসানের তালিকায় রয়েছে। তবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এই সংখ্যা কিছুটা কমেছে। ওই সময় লোকসানি শাখা ছিল ৬৪২টি। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে লোকসানি শাখা কমেছে ১০৯টি।

অন্যদিকে নানা অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ দেয়ায় চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। চলতি বছরের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সময়ে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ছয় হাজার ১৫৯ কোটি টাকা। যার মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৮ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ২৯ দশমিক ২৫ শতাংশ। এর মধ্যে বেসিক ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

রাষ্ট্রায়াত্ত অগ্রণী ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় পাঁচ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আট হাজার ১৮৭ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংকের প্রায় চার হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা এবং সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ সর্বোচ্চ ১১ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা। তবে অবলোপনকৃত খেলাপি মিলিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বেশি।

জানা গেছে, অব্যাহত লোকসানের প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের চার ব্যাংককে একীভূত করার উদ্যোগ নিচ্ছে অর্থ বিভাগ। ব্যাংকগুলো হলো—বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি), রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব), বেসিক ব্যাংক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল)। একীভূত করার জন্য একটি সারসংক্ষেপ প্রস্তুত করা হচ্ছে। এতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সম্মতি দিলে পরে তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত পাঁচ বছরে এ চার ব্যাংকের পেছনে সরকার প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। এর মধ্যে শুধু বেসিক ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি মেটাতে পাঁচ বছরে সরকারি কোষাগার থেকে দেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে বিকেবি আর রাকাবের পেছনে সরকার লোকসান দিয়েছে ৪১৮ কোটি টাকা। বিডিবিএল বর্তমানে লোকসানে নেই।

এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, লোকসান থেকে কাটিয়ে উঠার জন্য মূল বিষয় হচ্ছে ঋণ বিতরণ করা। আমরা ঋণ বিতরণ বাড়িয়েছি। একই সাথে তা রিকভার করার উপর জোর দিয়েছি। এছাড়া ব্যাংকের সার্বিক সেবার মান বাড়ানো হয়েছে।

এসব উদ্যোগের ফলে খুব শিগগিরই সোনারী ব্যাংকের লোকসানি শাখা কমে আসবে। জানুয়ারিতেই এই সুফল পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।