সরকার মানুষ বাঁচানোর কোনো জায়গা রাখবে না: রিজভী

সরকার মানুষ বাঁচানোর কোনো জায়গা রাখবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রসঙ্গ টেনে রিজভী বলেন, আজকে হাসপাতালে আইসিইউ নেই, বেড নেই, ভেন্টিলেটর নেই, হাসপাতালে মাস্ক নেই। আর নকল মাস্ক নিয়ে এসছে তার সঙ্গে কে জড়িত? মন্ত্রীর ছেলে। ভেন্টিলেটর এখন এই মুহূর্তে জীবন বাঁচানোর একটি অন্যতম সরঞ্জাম। সেটি আমদানি করতে একে তো আওয়ামী সিন্ডিকেট তার উপরে মন্ত্রীর আত্মীয়-স্বজনেরা। তাহলে কি করে মানুষ বাঁচবে? মানুষ বাঁচানোর কোনো জায়গা তারা (সরকার) রাখবে না। আক্রান্ত রোগী রাস্তায় মরছে, অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে মরছে। অবহেলা আর বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে সাধারণ মানুষ।

মঙ্গলবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক দোয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির কুমিল্লা বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সদ্য প্রয়াত আব্দুল আউয়াল খান স্মরণে এই দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোট।

রিজভী বলেন, বর্তমান দুর্বৃত্তপরায়ণ কর্তৃত্ববাদী শাসকের যাঁতাকলে নিষ্পেষিত হচ্ছে দেশের মানুষ। দেশবাসী তাদের ভয়ংকর দুঃশাসনে অতিষ্ঠ হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, আজকে কোথায় উন্নয়ন? আজকের দুদিনের বৃষ্টিতে ঢাকা শহর পানিতে তলিয়ে যায়। হাঁটুপানি কোমর পানি ভেঙে নগরবাসীকে চলাচল করতে হচ্ছে। এই সরকার তাহলে কোথায় উন্নয়ন করছে? তারা উন্নয়ন করেছে আসলে ফ্লাইওভারে, তারা উন্নয়ন করেছে মেগা প্রজেক্ট। কারণ সেখানে শুধুই কাঁচা টাকা। তারা আজকে হাসপাতালের দিকে নজর দেয়নি। স্কুল-কলেজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দিকে নজর দেয়নি। অর্থাৎ ভালো কোনো কিছুতেই সরকারের অবদান নেই।

রিজভী বলেন, বর্তমান সরকারের দুর্নীতির কারণে দেশের হাসপাতালগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়েছে। আজকে এইসব দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কারা? পত্রিকার খবরে বলা হচ্ছে মন্ত্রী-এমপি ও তাদের সন্তানেরা জড়িত। করোনা নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আজকে সংবাদপত্রের পাতায় বেরিয়েছে গত দুইদিন ধরে করোনা পরীক্ষায় মানুষের সংখ্যা কমে গেছে। কারণ মানুষ হাসপাতালে যাচ্ছে না। কারণ যে অসুস্থ না তাকে যদি পজিটিভ সার্টিফিকেট দেয়া হয় তাহলে তো তার সবই শেষ। আর যে অসুস্থ আছে, যে আক্রান্ত হয়েছে তাকে দেয় নেগেটিভ সার্টিফিকেট। এই আতঙ্ক নিয়ে কেনো মানুষ হাসপাতালে যাবে? কেনো পরীক্ষা করাবে? এই কারণে করোনা পরীক্ষার সংখ্যা দিনকে দিন কমে যাচ্ছে।

বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে অনাচার-অবিচার, রাজনৈতিক মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে ভয়ংকরভাবে দমন করা। এই দমন করার মধ্য দিয়েই আমরা দেখেছি এই অনাচারগুলো, সমাজের মধ্যে বিশৃঙ্খলাগুলো, এই জাল-জালিয়াতি, এই বাটপারি তৈরি হয়েছে, সমাজের মধ্যে সাহেদদের উত্থান হয়েছে। সাবরিনাদের উত্থান ঘটেছে। আজকে সরকারের অন্যান্য দপ্তরগুলোতেও চলছে সীমাহীন দুর্নীতি। খবরের কাগজে বেরিয়েছে একটা চামচের দাম ১ হাজার টাকা, ১ টা বটির দাম ১০ হাজার টাকা।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আজকে বর্তমান সরকারের আমলে বিরোধীদলের কোনো ছেলে মেয়ে চাকরি পাচ্ছে না। তাদেরকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। বিএনপি বা বিরোধী দলের পরিবারের কেউ সরকারি চাকরিতে গেলে সেই প্রার্থীর বংশে বা আত্মীয়স্বজনের মধ্যে যদি কেউ বিএনপি সমর্থক থাকে তাহলে তার কোনো চাকরি নেই। আর আওয়ামী লীগ হলেই সাত খুন মাফ। কারণ আমি ডিসি, এসপি। আমার কেউ কিছু করতে পারবে না। এই হচ্ছে আজকের বর্তমান পরিস্থিতি।

রিজভী বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের তরুণ-যুবকদের সরকার গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাচ্ছে। তারা মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের হয়রানি করছে। প্রতিবাদ বন্ধ করার জন্য বিএনপির তরুণদের রাতের অন্ধকার তুলে নিয়ে গুম করা হয়, স্বীকার করা হয় না। সবাই দেখেছে যে, টিটো হায়দারকে তুলে নিয়ে গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে লোকজন। মানিকগঞ্জের পলিরা আজকে রাতের অন্ধকারে গ্রেপ্তার হয়ে যায়। এরকম অসংখ্য ঘটনা।

আব্দুল আউয়াল খান স্মরণে রিজভী বলেন, একজন নিবেদিতপ্রাণ জাতীয়তাবাদী তরুণ নেতা ছিলেন আউয়াল। তার কর্মকাণ্ড তরুণদের জন্য অনুপ্রেরণা। তার স্মৃতি সবসময় মনে পড়ে। যা অমলিন। মহান আল্লাহর দরবারে বিনীত প্রার্থনা তিনি যেন মরহুম আব্দুল আউয়ালকে জান্নাত নসিব করেন।

দোয়া মাহফিলে অন্যান্যের মধ্যে সংগঠনের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জাকির হোসেন, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক কাজী ইফতেখারুজ্জামান শিমুল, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোর্শেদ আলমসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।