সাংবাদিক রোজিনার ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা হবে : তথ্যমন্ত্রী

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মামলার ঘটনায় ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।

বুধবার দুপুরে চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের মধ্যে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে করোনাকালীন দ্বিতীয় পর্যায়ের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করতে বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে তথ্য কমিশন গঠিত হয়েছে। কমিশনের মাধ্যমে যে কেউ যেকোনো তথ্য সরকারের কাছে চাইতে পারে।
তবে তথ্য কমিশনের মাধ্যমে নন-ডিসক্লোজার আইটেম তিনি পাবেন না। এক্ষেত্রে গোপন নথি পাচার অন্যায়। তাছাড়া সরকারের কাছ থেকে যেকানো তথ্য পেতে হলে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হয়। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ে পাওয়া না গেলে তথ্য কমিশনে আবেদন করা যায়। ২০১৪ সালে তথ্য কমিশন গঠিত হবার পর থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ লাখ ১৯ হাজার ৮৩১টি আবেদনের নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
একইভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মামলার ঘটনায়ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা হবে।

তিনি বলেন, রোজিনা ইসলামের বিষয়টি আবেগতাড়িতভাবে না দেখে আইনি দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার অনুরোধ করব। যেহেতু একটি মামলা হয়েছে, যাতে সুবিচার হয়, তিনি যাতে ন্যায় বিচার পান, তার প্রতি কোনোভাবে যাতে অন্যায় না হয় সেটি দেখা হচ্ছে, সরকারের ওপর আস্থা রাখুন।
প্রধানমন্ত্রী ও আমি সাংবাদিকদের মান-মর্যাদা এবং সম্মান রক্ষায় আন্তরিক, বদ্ধপরিকর।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, যেকোনো মন্ত্রী বাংলাদেশে দুটি শপথ গ্রহণ করেন। একটি হচ্ছে মন্ত্রী হিসেবে শপথ, অন্যটি হচ্ছে রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা রক্ষার শপথ। সেই শপথ আমাকেও নিতে হয়েছে। যেহেতেু আমি রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তার শপথ গ্রহণ করেছি মন্ত্রিসভায় কোনো কিছু আলোচনা হলে সেটি বাইরে বলতে পারি না।
যেটি আমাকে বলতে বলা হবে, শুধু সেটুকুই বলতে পারব।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় গোপন নথি বা অন্য দেশের সঙ্গে চুক্তি যেগুলো বাইরে প্রকাশ না করার ক্ষেত্রে চুক্তিতে আছে বা সেই দেশের অনুরোধ আছে সেগুলো কখনো বাইরে প্রকাশ করতে পারি না। সেটি সংরক্ষণ করা যেকোনো মন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। এক্ষেত্রে গোপন নথি পাচার অন্যায়।

মন্ত্রী বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি বারবার স্বাস্থ্য, স্বরাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। পুলিশ হেফাজতে তার সম্মান যাতে রক্ষা হয়, কারা হেফাজতে তিনি যাতে সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা পান, সেটি যাতে নিশ্চিত করা হয় আমাকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন। এখানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কারো কোনো দায় থাকলে সেটিও নিশ্চয় বের হয়ে আসবে।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে রোজিনা ইসলামকে নিয়ে কি ঘটনা ঘটেছিল স্বাস্থ্যমন্ত্রী ব্যাখ্যা করেছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য অনুযায়ী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যেগুলো বাইরে প্রকাশ করা যাবে না এমন নথি রোজিনা ইসলাম ফাইল থেকে নিয়ে তার পকেটসহ অন্যান্য জায়গায় রেখেছিলেন এবং কিছু ছবি তুলেছিলেন। তখন তাকে চ্যালেঞ্জ করা হলে তিনি কাগজগুলো ফেরত দেন। এরপর তার বিরুদ্ধে মামলা ও তাকে পুলিশে হস্তান্তর করা হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য অনুযায়ী, এখানে রাষ্ট্রীয় গোপন নথি রোজিনা ইসলাম ফাইল থেকে নিয়েছেন, সেজন্য তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব হচ্ছে সেগুলোকে সংরক্ষণ করা।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, এখানে প্রশ্ন হচ্ছে তিনি সেখানে পাঁচ ঘণ্টা আটক থাকলেন কেন? এটি নিয়ে সবার মধ্যে প্রশ্ন আছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা পাঁচ ঘণ্টা আটক রাখেননি, একঘণ্টা পরেই পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। যে বিলম্বটা হয়েছে সেটি কেন হলো পুলিশ খুঁজে বের করবে। এ নিয়ে মামলা হয়েছে, বিষয়টা তদন্তাধীন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। সেই কমিটির মাধ্যমে নিশ্চয় বেরিয়ে আসবে তাকে সেখানে কেউ হেনস্তা করেছিল কি না? রোজিনা ইসলামের কি অপরাধ ছিল, এ ঘটনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কারো কোনো অপরাধ আছে কিনা বেরিয়ে আসবে। পুলিশও তদন্ত করছে।

তিনি বলেন, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট সাংবাদিকদের একটা ভরসার জায়গা। ট্রাস্টটি ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠা হয়। কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে হাজার হাজার সাংবাদিক উপকৃত হয়েছে। কোনো সাংবাদিক অসুস্থ হলে, চিকিৎসাধীন থাকলে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পান, মৃত্যুবরণ করলে তিন লাখ টাকা তার পরিবার পায়। ট্রাস্টের মাধ্যমে পরিবারকেও সহায়তা দেওয়া যায় কিনা সেটিও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। ২০২০ সালে প্রায় সাড়ে তিন হাজার সাংবাদিককে করোনাকালীন সহায়তা দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এবার ১০ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন।

চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে) আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিইউজের সভাপতি মোহাম্মদ আলী। সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলামের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাফর ওয়াজেদ।

বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাস, বিএফইউজের সহ-সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ ও সিইউজের সহ-সভাপতি অনিন্দ্য টিটু প্রমুখ।