সাতক্ষীরায় হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে থাকা শিশুসহ ভারতফেরত ১১ জনের করোনা শনাক্ত

সাতক্ষীরায় বিভিন্ন হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে থাকা ভারত ফেরত ৫ বছর বয়সী শিশুসহ ১১ জনের শরীরে কোভিড-১৯ করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৮ মে) সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ শনাক্ত হয়।
তাদের মধ্যে করোনার ভারতীয় ধরণ (ভ্যারিয়েশন) আছে কিনা তা পরীক্ষার জন্য নমুনা ঢাকায় প্রেরণ করা হচ্ছে।

এদিন সকালে তাদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। রাত ৯টার দিকে আসা প্রতিবেদনে এসব যাত্রীর করোনা ধরা পড়ে।
ভারত থেকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে আসা এসব ব্যক্তিরা সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা।

সম্প্রতি যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে দেশে আসা ২৩৭ জনকে সাতক্ষীরা শহরের ৭টি আবাসিক হোটেলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তাদের পর্যায়ক্রমে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার প্রেক্ষিতে এই শনাক্ত জানা গেলো।

প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের ৪টি হোটেলে থাকা ভারতফেরত বাংলাদেশির মধ্যে ১৪২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তাদের মধ্যে ১১ জন করোনা পজিটিভ বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এদিন সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাব পরীক্ষায় সাতক্ষীরায় বিভিন্ন হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে থাকা ভারত ফেরত ১১ জনের শরীরে কোভিড-১৯ করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।

কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত ব্যক্তিরা হলেন- শহরের হোটেল আল কাশেমে অবস্থানরত মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানার দীপা মন্ডল (২৭), সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি থানার সন্তোষ কুমার মন্ডল (৪৩), একই থানার আব্দুল মান্নান (৪০), পাটকেলঘাটা থানার ঝড়গাছা গ্রামের দীপিকা রানী ঘোষ, হোটেল উত্তরায় অবস্থানরত সদর থানার মৃগীডাঙ্গা গ্রামের সোনিয়া সুলতানা (৩২), বাগেরহাট জেলার একই পরিবারের জিহাদ ইমরান (৫), মনির মোল্লা (৪৩) ও শহীদা বেগম (৩০), রংপুর জেলার কাকলি বেগম (৩৫), হোটেল সীমান্ত আবাসিকে অবস্থানরত খুলনা জেলার মোঃ আক্তার (৩০) এবং হোটেল টাইগার প্লাসে অবস্থানরত মুন্সিগঞ্জের কাজী আশিকুজ্জামান (৩১)।

কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে ভারতীয় ভ্যারিয়েশন আছে কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য তাদের প্রত্যেকের স্যাম্পল বুধবার ঢাকায় প্রেরণ করা হবে বলে সূত্র আরো জানায়।

এদিকে, একদিনে শিশুসহ ভারত ফেরত ১১ জনের করোনা শনাক্তের খবরে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করেছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। বিচলিত না হয়ে সকলকে করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের তাগিদ দেয়া হয়েছে।

সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন অফিসের করোনা বিষয়ক মুখপাত্র ডা. জয়ন্ত কুমার বলেন, ‘৫ মে থেকে বিভিন্ন সময়ে এসব যাত্রী ভারত থেকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে দেশে আসেন। এরপর তাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। সাতক্ষীরা শহরের সাতটি আবাসিক হোটেল ও কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা ওরস শরিফে ৩৩৭ জন কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে ১৫০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১১ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। বুধবার সকালে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৃথক একটি ওয়ার্ড করে ভারত থেকে করোনা আক্রান্ত এসব রোগীকে পৃথক করে রাখা হবে। এসব রোগী করোনার ভারতীয় ভেরিয়েন্ট বহন করছেন কিনা সেটি জানার জন্য নমুনা আইসিডিডিআরবিতে পাঠানো হচ্ছে।’

সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. তানজিল্লুর রহমান বলেন, ‘ভারত থেকে আগত যাত্রীদের কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন কাজ করছে। জেলা সদরের ৭টি আবাসিক হোটেলে ২৩৭ জন ও নলতা শরিফে ১০০ জন ভারতফেরত যাত্রী কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করার পর পরীক্ষা করে করোনা নেগেটিভ হলেই তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে। যারা আক্রান্ত হবেন তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। যারা আক্রান্তের সংস্পর্শ থাকবেন, তাদের পুনরায় ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে।’

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল জানান, ‘১৪২ নাগরিকের নমুনা পরীক্ষা করে ১১ জন পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। তাদেরকে বিশেষ ব্যবস্থায় চিকিৎসার জন্য মেডিকেল কলেজের আইসোলেশন ইউনিটে পাঠানো হবে।’

জানা গেছে, গত ৭ মে ভারত থেকে বেনাপোল দিয়ে দেশে ফিরেছেন ওই সকল ব্যক্তিরা। যশোরের কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে জায়গা না থাকায় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে তাদের সাতক্ষীরার ৭টি হোটেলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়।
তাদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়।
মঙ্গলবার (১৮মে) ১১ জনের করোনা রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে।

অপরদিকে, ভারতফেরত ওই ১১ জন ছাড়াও মঙ্গলবার জেলার স্থানীয় বসবাসরত আরো ১০জনের করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। সবমিলিয়ে এদিন ১৭৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করে মোট ২১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে বলে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।