সাতক্ষীরার নির্বাচনী মাঠে তরুণদের পদচারণা

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সাতক্ষীরার বিভিন্ন আসনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেতে মাঠে নেমেছেন ছয় তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা।

বিভিন্ন পথসভা, জনসভা, উঠান বৈঠক, মোটরসাইকেল শোডাউন, শোভাযাত্রা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে ওই নেতারা জানান দিচ্ছেন যার যার অবস্থান। মনোনয়ন পেতে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন দলের বিভিন্ন পর্যায়ে। নিয়মিত খোঁজ-খবর নিচ্ছেন কর্মীদের।

জেলার চারটি সংসদীয় আসনে সম্ভাব্য ছয় প্রার্থী হলেন—সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনে শেখ নুরুল ইসলাম, ফিরোজ আহমেদ স্বপন ও লায়লা পারভিন সেঁজুতি; সাতক্ষীরা-২ (সাতক্ষীরা সদর) আসনে আসাদুজ্জামান বাবু; সাতক্ষীরা-৩ (আশাশুনি, দেবহাটা ও আংশিক কালীগঞ্জ) আসনে এ বি এম মোস্তাকিম ও সাতক্ষীরা-৪ (শ্যামনগর ও আংশিক কালীগঞ্জ) আসনে আতাউল হক দোলন।

সাতক্ষীরা-১ আসনে নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নুরুল ইসলাম শহীদ পরিবারের সন্তান ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। ১৯৮৭ সালে তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। এ ছাড়া ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন লাভ করেন নুরুল ইসলাম। কিন্তু সে সময় ১৮ দলীয় জোটের স্বার্থে জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থীকে জায়গা ছেড়ে দেন তিনি।

একই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী সাতক্ষীরার বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ নেতা, দৈনিক পত্রদূত সম্পাদক, সাবেক গণপরিষদ সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা, ১৯৯৬ সালে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত স ম আলাউদ্দিনের কন্যা লায়লা পারভিন সেঁজুতি। জেলা আওয়ামী মহিলা লীগের যুগ্ম সম্পাদক সেঁজুতি বর্তমানে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের জেলা শাখার সদস্য সচিব তিনি। বাবার আদর্শ ধারণ করে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

একই আসনে মনোনয়নের লড়াইয়ে নেমেছেন কলারোয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরোজ আহমেদ স্বপন। তিনি কেরালকাতা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও কলারোয়া উপজেলা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। দায়িত্ব পালন করেছেন জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক পদে। এ ছাড়া ফিরোজ আহমেদ এলাকায় অনেকগুলো স্কুল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা। মোটরসাইকেল শোডাউন, জনসভা, পথসভার মাধ্যমে সরকারের উন্নয়ন ও সাফল্যের কথা প্রচার করে তিনি দলের পক্ষে কাজ করছেন।

এদিকে সাতক্ষীরা-২ সদর আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে কাজ করছেন সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু। সাবেক তুখোড় এই ছাত্রনেতা দীর্ঘদিন জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও প্রজন্ম ৭১-এর যুগ্ম আহ্বায়ক। পথসভা, জনসভা ছাড়াও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সরকারের উন্নয়ন ও সাফল্যের চিত্র তুলে ধরছেন আসাদুজ্জামান। উপজেলার সব ইউনিয়নে সাংগঠনিক ভিত জোরদার করার ব্যাপারেও তৎপরতা বজায় রেখেছেন তিনি।

অন্যদিকে সাতক্ষীরা-৩ আসনে নৌকার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন আশাশুনি উপজেলার পর পর দুবারের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট শিল্পপতি এ বি এম মোস্তাকিম। বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাকিম পূর্বে জেলা আওয়ামী লীগের বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক ও খুলনা সিটি করপোরেশনের কমিশনার ছিলেন। এ ছাড়া তিনি আশাশুনি উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির নয়বারের সভাপতি। এলাকার বিভিন্ন স্কুল, কলেজের উন্নয়নে তাঁর অবদান গুরুত্বপূর্ণ। উঠান বৈঠক, জনসভা, পথসভার মাধ্যমে তিনি গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

সাতক্ষীরা-৪ আসনে গণসংযোগের কাজে মাঠে নেমেছেন শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউল হক দোলন। তিনি শ্যামনগরে তিনবারের নির্বাচিত (১৯৭০, ১৯৭২ ও ১৯৯৬ ) সাবেক সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এ কে ফজলুল হকের ছেলে। উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আতাউল হক দোলন নিজেও আগে যুবলীগের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এ ছাড়া দোলনের দাদা ও নানা দুই পক্ষের পরিবারই দীর্ঘকাল আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সেই ধারা বজায় রাখতেই মনোনয়নের লড়াইয়ে নেমেছেন তিনি। বাবার আদর্শের পথ অনুসরণ করে চালিয়ে যাচ্ছেন গণসংযোগ।

বিভিন্ন রকম সভা, র‍্যালি কর্মসূচি ছাড়াও নিজ নিজ এলাকায় পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার টানিয়ে প্রচারাভিযানে নেমেছেন সম্ভাব্য নৌকা প্রার্থীরা। মসজিদ-মন্দিরসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে গিয়ে সবার দোয়া ও আশীর্বাদ কামনা করছেন তাঁরা। মনোনয়নপ্রত্যাশী আসাদুজ্জামান বাবু ও আতাউল হক দোলন এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নিজেদের প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে জানা গেছে।