সাতক্ষীরায় নিরাপত্তা চেয়ে সংবাদ সম্মেলন সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের

সাতক্ষীরায় নিরাপত্তা চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোশাররফ হোসেন মশু।

রবিবার দুপুরে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ে জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তিনি।

সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়া গ্রামের বিএনপি দলীয় আলোচিত অস্ত্রবাজ ও ভূমিদস্যু মোঃ আলতাফ হোসেন এবং মোঃ সাফায়েত হোসেনের হুমকি ও হয়রানির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেছেন সাতক্ষীরা জেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোঃ মোশাররফ হোসেন মশু।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমার বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে ১২ বছর যাবৎ আমার পৈত্রিক সম্পত্তি ভোগ দখল করতে পারছি না। এমনকি নিজের বাড়ীতেও আমি অবস্থান করতে পারি না। দেবহাটা উপজেলার সাবেক যুবদল সহ-সভাপতি অস্ত্রবাজ আলতাফের হুমকিতে আমি আমার নিজ বাড়ীতে নিরাপত্তাজনিত কারণে অবস্থান করতে পারি না। সে আমার আব্বাকেও কয়েকবার হুমকি-ধামকি দিয়েছে, যা এলাকার সবাই জানে। পাড়া প্রতিবেশীর সাথে কোন কলহ বিবাদ হলে অস্ত্রবাজ আলতাফ তাৎক্ষনিক প্রকাশ্যে পিস্তল বের করে গুলি করতে উদ্যত হত। আমাদের পারিবারিক সম্পত্তি ভাগ ও বন্টননামা করার উদ্দেশ্যে স্থানীয়ভাবে পারিবারিক মুরুব্বীদের নিয়ে কয়েকবার আলোচনা ও মিমাংসায় বসলে বিএনপি দলীয় অস্ত্রবাজ আলতাফ ও সাফায়েত পারিবারিক মুরুব্বীদের কথা না মেনে তাদেরকে অপমানিত করেছে। আমার দুই ছেলে ঢাকাতে চাকুরীরত অবস্থায় আছে। এই সুযোগে আমার সম্পত্তি আমার সহোদর ভাই আলতাফ ও সাফায়েত অবৈধভাবে জবর দখল করে যাচ্ছে। ইতোপূর্বে আমার ৩ বিঘা পৈত্রিক সম্পত্তি তাদের নামে রেকর্ড করেছে। তাছাড়া আমাদের পৈত্রিক কয়েক বিঘা জমি আমাকে না জানিয়ে বন্ধক দেওয়া হয়েছে। জমি ভাগ বন্টননামা না হওয়া স্বত্ত্বেও অস্ত্রবাজ আলতাফ ও সাফায়েত জমি বিক্রি করার জন্য পায়তারা চালাচ্ছে। আমি সখিপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস এবং জেলা রেজিস্টার মহোদয়ের কাছে এই বিষয় নিয়ে লিখিতভাবে আবেদন করেছি। তারা আমার চাচার জমির ইজারা না দিয়ে অবৈধভাবে ভোগদখল করে খাচ্ছে। অনৈতিকভাবে জমি বিক্রি করতে না পেরে তারা আমার চাচা মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আতিয়ার রহমান ও আমার বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছে। আমার চাচা মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আতিয়ার রহমান তার নিরাপত্তা ও সার্বিক বিষয় সুরাহা চেয়ে গত ২৬ আগস্ট ২০২০ খ্রিঃ তারিখে আইজিপি মহোদয়ের কাছে আবেদন করেন। বিষয়টি অনুসন্ধান ও মিমাংসার জন্য ১১ অক্টোবর ২০২০ খ্রিঃ তারিখে দেবহাটা সার্কেল কর্তৃক বাদী ও বিবাদী পক্ষকে হাজির হওয়ার জন্য লিখিতভাবে আদেশ দেওয়া হয় কিন্তু বিএনপি দলীয় আলোচিত অস্ত্রবাজ ও ভূমিদস্যু আলতাফ সরকারী আদেশ অমান্য করে হাজির হয়নি। উক্ত তারিখে দেবহাটা উপজেলা মৎসজীবি দলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সাফায়েত হোসেনের কাছ থেকে একটি চোরাই মোটর সাইকেল আটক করে দেবহাটা থানা পুলিশ। পরবর্তীতে গ্রেফতার হওয়ার ভয়ে আমার ভাই সাফায়েত হোসেন অসুস্থতার নামে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আমি পুলিশ সুপার মহোদয়ের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

তিনি আরো বলেন, বিএনপি ক্ষমতা হারানোর পর অস্ত্রবাজ আলতাফ হঠাৎ মুখে দাড়ি এবং তবলীগ জামাতে যোগ দেয়। বিএনপি শাসনামলে এই অস্ত্রবাজ আলতাফ হাজার হাজার বিঘা জমি অবৈধভাবে ভোগ দখল করে যা নোড়ারচক এলাকায় অনুসন্ধান করলে জানা যাবে। বিএনপি শাসনামলে অস্ত্রবাজ আলতাফ প্রকাশ্যে অস্ত্র ও মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত ছিল। বর্তমানে এই অস্ত্রবাজ আলতাফ ধর্মীয় লেবাস পরে পারিবারিক সম্পত্তি অবৈধভাবে ভোগ দখল করে যাচ্ছে। তার কাছে এখনও অবৈধ অস্ত্র আছে যার আস্ফালনে আমাকে এবং আমার চাচা মুক্তিযোদ্ধা আতিয়ার রহমানকে জিম্মি করে রেখেছে। দেবহাটা থানার মামলা নং-৩, তারিখ ০৪ ফেবরূয়ারি ২০০৩ খ্রিঃ তারিখে আলতাফ নোড়ারচক এলাকায় ৬০০ বিঘা জমি অবৈধভাবে দখলে রাখতে গিয়ে জমির মালিক রুহুল কুদ্দুস, আতিয়ার রহমান এবং নেসার আলীসহ কয়েক জনকে প্রকাশ্যে গুলিবিদ্ধ করে যা ০৪ ফেবরূয়ারি ২০০৩ খ্রিঃ তারিখে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তৎকালীন রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সে বেচে যায়।

সংবাদ সম্মেলনে সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোশাররফ হোসেন মশু আরও বলেন, আমার ভাই দেবহাটা উপজেলা যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি ও ভূমিদস্যু মোঃ আলতাফ হোসেন গত ১৪ অক্টোবর ২০২০ খ্রিঃ তারিখে সংবাদ সম্মেলনে আমার চাচা ও আমার চাচাতো ভাইদের বিষয়ে যে সকল তথ্য উপস্থাপন করেন তা সম্পূর্ন মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। একদিকে ভূমিদস্যু মোঃ আলতাফ হোসেন গত ১১ অক্টোবর ২০২০ খ্রিঃ তারিখে সহকারী পুলিশ সুপার (দেবহাটা সার্কেল) এর লিখিত আদেশ অমান্য করে, অপরদিকে সে তার সংবাদ সম্মেলনে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করে।

সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোশাররফ হোসেন মশু নিজের নিরাপত্তা ও পৈত্রিক সম্পত্তি আপোষ বন্টননামার বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার মহোদয়সহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে আশু সাহায্য প্রার্থনা করেছেন।