সিনহার অ্যাকাউন্টে ৪ কোটি টাকা, মামলা শিগগিরই

ফারমার্স ব্যাংক থেকে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ৪ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন করিয়ে ‘রাষ্ট্রের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির’ নামে হস্তান্তর দেখিয়ে আত্মসাৎ ও অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান শেষ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ ঘটনায় জালিয়াতির তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।

বৃহস্পতিবার বিকেলে দুদক কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইকবাল মাহমুদ এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, এ জালিয়াতির সঙ্গে একাধিক ব্যক্তি জড়িত। অনেকের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে বা চিহ্নিত করা হয়েছে। ঋণ প্রক্রিয়ায় জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। সেখানে অনেকেরই সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। তবে দুদক চেয়ারম্যান কারও নাম উল্লেখ করেননি।

তবে দুদক সূত্র জানিয়েছে, এ ঘটনায় আগামী সপ্তাহেই মামলা হতে পারে। মামলায় ব্যাংক কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা আসামি হচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার কথিত পিএস রঞ্জিত, তাঁর স্ত্রী শান্তি রায়, নিরঞ্জন ও শাহজাহান অন্যতম। তবে দুদকের একাধিক সূত্র জানায়, সাবেক প্রধান বিচারপিতর নামেও মামলা হতে পারে।

চলতি বছরের শুরুর দিকে অনুসন্ধান শুরু করে ৬ মে নিরঞ্জন ও শাহজাহান নামের দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। ওই দিন শাহজাহান ও নিরঞ্জনের আইনজীবীরা দাবি করেন, ৪ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে তাঁর বাড়ির দাম পরিশোধের জন্য। ফারমার্স ব্যাংকের পে-অর্ডারের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকে এস কে সিনহার ব্যাংক হিসাবে ওই টাকা দেওয়া হয়।

আফাজ মাহমুদ রুবেল ও নাজমুল আলম নামের দুই আইনজীবী ওই দিন বলেছিলেন, দুদকের তলবে হাজির হয়ে তাঁরা ১৭১ পৃষ্ঠার নথিপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁদের দুই মক্কেল কোনো অন্যায় করেননি দাবি করে আইনজীবীরা বলেন, সরল বিশ্বাসে তাঁরা শান্তি রায় ও রঞ্জিত রায়কে সহায়তা করেছেন।

আইনজীবীদের দাবি, এস কে সিনহার উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরের ছয়তলা বাড়িটি ২০১৬ সালের শুরুর দিকে টাঙ্গাইলের বাসিন্দা শান্তি রায় ছয় কোটি টাকায় কেনার জন্য বায়না করেন। শান্তি রায় সাবেক প্রধান বিচারপতির ‘কথিত পিএস’ রঞ্জিতের স্ত্রী। বাড়িটি বায়না করার পর হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের ৫৫ লাখ টাকা এবং বাড়ি নির্মাণের সময় নেওয়া আরও ১ কোটি ৪০ লাখ টাকাসহ মোট ১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়। বাকি ৪ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয় ফারমার্স ব্যাংকের পে-অর্ডারের মাধ্যমে।

ফারমার্স ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার জন্য জন্য শান্তি রায় ব্যবহার করেন নিরঞ্জন ও শাহজাহানকে। নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা শান্তি রায়ের স্বামী রঞ্জিতের ভাতিজা। আর শাহজাহান রঞ্জিতের বন্ধু। ফারমার্স ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার সময় বন্ধক রাখা হয় শান্তি রায়ের মালিকানায় থাকা সাভারের ৩১ শতাংশ জমি।

আইনজীবীদের তথ্যানুযায়ী, ২০১৬ সালের মে মাসে জমির বায়না দলিল হয় এবং ওই বছরের ৮ নভেম্বর দুটি পে-অর্ডারের মাধ্যমে এস কে সিনহা সোনালী ব্যাংক সুপ্রিম কোর্ট শাখার মাধ্যমে ৪ কোটি টাকা গ্রহণ করেন। ২৪ নভেম্বর হস্তান্তর দলিলের মাধ্যমে বাড়িটি শান্তি রায় বুঝে নেন।

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে নিরঞ্জন সাংবাদিকদের বলেন, তিনি কৃষিকাজ করেন। চাচার কথামতো তাঁকে সহায়তার জন্য ঋণ নিয়েছেন। শাহজাহান জানান, রঞ্জিত তাঁর বন্ধু। টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী এলাকায় তাঁর দোকান রয়েছে। রঞ্জিতের কথামতো ঋণ নিয়ে তাঁকে দিয়ে দিয়েছেন। রঞ্জিত সে টাকা কাকে দিয়েছেন, সেটা তিনি জানেন না।

দুদক সূত্র জানায়, ফারমার্স ব্যাংকে জালিয়াতির ঘটনা অনুসন্ধান করতে গিয়ে বিষয়টি নজরে আসে দুদকের। এ ঘটনায় ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কে এম শামীমসহ ছয়জন ব্যাংক কর্মকর্তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।