নিয়ন্ত্রনের উদ্যোগ নেই

সুন্দরবনের কাছাকাছি অবৈধ করাত কল! হুমকিতে বন

বাগেরহাটের শরণখোলায় অননুমোদিত অবৈধ করাত কলের ছড়াছড়ি শুরু হয়েছে।
স্থানীয় প্রভাবশালীরা আইনের তোয়াক্কা না করে যত্র-তত্র ওই করাত কলের ব্যাবসা চালাচ্ছে।

সুন্দরবনের খুব কাছাকাছি ওই কল গুলো বসানোর কারণে চোরাকারবারীরা সহজেই বনের কর্তন নিষিদ্ধ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে ওই সকল মিলে চেরাই করে বিভিন্ন জায়গায় পাচার করে। যা মাঝে মধ্যে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরাও পড়ে।

স্থানীয়দের দাবি, প্রশাসনের নিরবতায় সম্প্রতি ব্যাঙ্গের ছাতার মতো গজিয়েছে ওই সকল করাত কল।

অন্যদিকে, গত বছরের ডিসেম্বর মাসের দিকে স্থানীয় প্র্রশাসন ও বনবিভাগের এক যৌথ অভিযানে ৫টি করাত কল বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে বন-বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের পক্ষ হতে করাতকল আইনে ওই পাঁচ কল মালিকের বিরুদ্ধে পৃথক পাঁচটি মামলা দায়ের করে। মামলা দেওয়ার পর মিলগুলো কিছুদিন বন্ধ থাকলেও কয়েক দিন পর করাত কলের মালিকরা আইনকে চ্যালেঞ্জ করে পুনরায় কাঠ চেরাই শুরু করেন। প্রায় শতাধিক কলের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি কল বন্ধ করে দেয়া এই যৌথ অভিযানকে লোক দেখানো অভিযান হিসেবেই দেখছে স্থানীয়রা।

সম্প্রতি অবৈধ করাত কলের বিষয়ে উপজেলা সদর রায়েন্দা বাজার এলাকার বাসিন্দা আব্দুল হক আকনের ছেলে সোহাগ আকন বাগেরহাট জেলা প্রসাশক, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ বিভিন্ন দপ্তরে একাধিক অভিযোগ দায়ের করেন। জন-বসতি পুর্ন এলাকা সহ অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘেষে এ সকল অবৈধ করাত কল রাতারাতি স্থাপন করা হলেও প্রসাশন সহ বন-বিভাগের পক্ষ থেকে কোন উদ্দ্যেগ নেয় হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুন্দরবন থেকে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে করাত কল স্থাপনের বিধান না থাকলেও তা মানছেনা বনসংলগ্ন এলাকার প্রভাবশালীরা।

অভিযোগ রয়েছে, বন বিভাগ ও প্রসাশনের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ম্যানেজ করে রাতারাতি স্থাপিত হচ্ছে এসব স-মিল গুলো। এছাড়া বন-সংলগ্ন এলাকার করাত কল গুলোর কারনে গত ২০ বছরে সুন্দরবনের সুন্দরী, গেওয়া, গরান সহ মুল্যবান সম্পদ উজাড়ের পাশাপাশি সামাজিক বনায়নের নানা প্রজাতির বহু গাছ ইতিমধ্যে উজাড় হয়েছে। তবে বনাঞ্চল সহ পরিবেশ রক্ষায় উপজেলা প্রসাশনের একটি কমিটি থাকলেও তার কোন কার্যক্রম নেই।

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, স’মিল মালিকরা বন-বিভাগ, প্রসাশন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন প্রকার অনুমতি ছাড়াই রাতারাতি স-মিল বসিয়ে সুন্দরী সহ নানা প্রজাতির কাঠ চেরাই শুরু করেন। এরা এতো ক্ষমতা কোথায় পায় তা জানিনা।
তবে, মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় এদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়না। এরা বনের বিভিন্ন প্রজাতির মুল্যবান কাঠ চেরাই করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় গোপনে পাচার করছে। এছাড়া সুন্দরবনের চার-পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে প্রশাসনের নাকের ডগায় এই মিলগুলো বসিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তারা বিভিন্ন প্রকার কাঠ চেরাই করে আসছে। মামলা হওয়া সত্বেও তারা থেমে নেই। এমনকি সম্প্রতি উপজেলার কাসেমুল উলুম কওমী মাদ্রাসা সংলগ্ন নলবুনিয়া, সিং-বাড়ী, তাফালবাড়ী কলেজ সংলগ্ন সেলিম হাওলদার, দক্ষিন মালিয় রাজাপুর স্কুল সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা মো. ছগির আকনের সহ গত এক বছরে উপজেলার অনেক বাসিন্দা অবৈধ ভাবে একাধিক করাত কল স্থাপন করলেও রহস্য জনক কারণে তাদের বিরুদ্বে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা বন-বিভাগ ও প্রসাশনের কেউ।

এ বিষয়ে সুন্দরবন সহ ব্যবস্থাপনা কমিটির কোষাধক্ষ্য ফরিদ খান মিন্টু বলেন, নিয়ম নিতীর বাইরে কি ভাবে করাত কল গুলো স্থাপিত হয় তা আমার বোধগম্য নয়। তবে, প্রভাবশালী চক্রের লাগাম টানতে বন-বিভাগ সহ প্রসাশনের আরো কঠোর হওয়া প্রয়োজন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে করাত কল মালিক উপজেলার তাফালবাড়ী বাজার ব্যবসায়ী আলাউল আহসান সেলিম বলেন, আইনকে অবজ্ঞা করা কিংম্বা অবৈধ ভাবে করাত কল স্থাপনের বিষয়টি সঠিক নয়। তবে, আমাদের কোন কাগজপত্র না থাকলেও লাইসেন্স পাওয়ার জন্য ইতিমধ্যে বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছি।

এ ব্যাপারে, সুন্দরবন পুর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক (এসএিফ) জয়নাল আবেদীন জানান, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের দশ কিলোমিটারের মধ্যে করাত কল বা কোনো প্রকার মিল,কলকারখানা স্থাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তবুও শরণখোলা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কিছু করাত কল বসিয়েছে। সম্প্রতি পাঁচটি করাত কলে অভিযান চালিয়ে তা বন্ধ করে দেওয়ার পরও আইন অমান্য করে মিলগুলো চালু করেছে মালিকরা। এদের বিরুদ্বে পুনরায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরদার মোস্তফা শাহিন বলেন, মিলগুলো বন্ধ করে মামলা দেওয়ার পরও ফের চালু করায় তারা আইনকে অবজ্ঞা করেছে। তবে, নুতন ও পুরাতন সকল স-মিল মালিকদের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।