হজের কোটা অপূর্ণ থাকলে ১২১ কোটি টাকার ক্ষতি

চলতি বছর পবিত্র হজ পালনে বাংলাদেশের জন্য সৌদি সরকারের বরাদ্দকৃত মোট ১ লাখ ২৬ হাজার ৭৯৮ জন হজযাত্রীর সম্পূর্ণ কোটা পূরণ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বরাদ্দকৃত মোট কোটার মধ্যে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীনে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৬ হাজার ১৯৮ জন ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫২৮টি হজ এজেন্সির মাধ্যমে ১ লাখ ২০ হাজার জন হজযাত্রীর হজ পালন করতে যাওয়ার কথা রয়েছে।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, মৃত্যু, অসুস্থতা ও স্বেচ্ছায় যাত্রা বাতিল করার কারণে প্রায় তিনশো এজেন্সির চার হাজারের মতো নিবন্ধিত হজযাত্রী হজে যেতে পারছেন না। ফলে তাদের বদলে নিবন্ধিত হাজি (রিপ্লেসমেন্ট) না দিলে ১২১ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হবে বলে মনে করছে হজ এজেন্সিগুলো।

হজ এজেন্সিগুলো বলছে, মৃত্যু, অসুস্থতা ও স্বেচ্ছায় যাত্রা বাতিল করার কারণে চলতি বছরের জন্য নিবন্ধন করেছেন-এমন প্রায় চার হাজার হজযাত্রী এবার হজে যাচ্ছেন না। তাদের বদলে অন্য হাজি পাঠানোর সুযোগ না দিলে কোটা পূরণ করা তাদের পক্ষে মোটেই সম্ভব হবেনা। সেক্ষেত্রে সরকারের বিশাল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রার আর্থিক ক্ষতি হবে।

ইতোমধ্যেই ধর্ম মন্ত্রণালয় দুই দফায় (প্রথম দফায় ৪ শতাংশ ও পরবর্তীতে আরও ৪ শতাংশ) মোট ৮ শতাংশ হজযাত্রী রিপ্লেসমেন্টের সুযোগ দিয়েছে। হজ এজেন্সিগুলো বলছে, আরেক দফা রিপ্লেসমেন্টের সুযোগ না দিলে কোটা খালি থাকবে এবং বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রার অার্থিক ক্ষতি হবে।

হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) মহাসচিব শাহাদাত হোসেন তছলিম বলেন, ‘বাস্তবতা তুলে ধরে তারা ধর্মমন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।’ আরেক দফা হজ রিপ্লেসমেন্টের ঘোষণা আসবে বলে আশা করছেন তিনি।

হাব মহাসচিব বলেন, ‘সৌদি সরকার কোনো নির্দিষ্ট হজযাত্রীর নামে বারকোড বা এনওসি (নো অবজেকশন সার্টিফিকেট) ইস্যু করে না। তারা নির্দিষ্ট দেশের নামে বরাদ্দকৃত হজযাত্রীর কোটার হিসেবে বারকোড প্রদান করে। সেক্ষেত্রে হজযাত্রী রিপ্লেসমেন্ট দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই।’

তিনি বলেন, ‘সরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীরা সব টাকা একবারে প্রদান করে। কিন্তু বেসরকারি হজ এজেন্সির যাত্রীরা সব টাকা একবারে পরিশোধ করে না। কিন্তু হজ এজেন্সিগুলোকে প্রাপ্ত কোটার বিপরীতে হজযাত্রীর জন্য সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়া, মোয়াল্লেম ফি ও খাবারের টাকা আগাম পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু মৃত্যু, অসুস্থতা ও অনেকে শেষ মুহূর্তে পারিবারিক নানা সমস্যার কথা জানিয়ে যাত্রা বাতিল করেন। এসব কারণে হজ এজেন্সিগুলো কোটা পূরণ করতে পারছে না।’ যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে হজযাত্রী রিপ্লেসমেন্ট দেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

হাবের একজন কর্মকর্তা জানান, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ প্যাকেজ ৩ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। চার হাজার হজযাত্রীর কোটা পূরণ না হলে ইতোমধ্যেই বাড়ি ভাড়া, খাবার দাবারসহ বিভিন্ন ফি বাবদ হজযাত্রী প্রতি প্রদেয় ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা হিসেবে মোট ৬৬ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি হবে। যাত্রী না পেলে বিমানের আসন খালি যাবে। সেক্ষেত্রে ক্ষতি হবে ৫৫ কোটি টাকা। সর্বমোট ১২১ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হবে সরকারের।

হজযাত্রী রিপ্লেসমেন্টের ব্যাপারে ঢাকা হজ অফিসের পরিচালক সাইফুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আরেক দফা হজযাত্রী রিপ্লেসমেন্টের ব্যাপারে রোববার (২৯ জুলাই) পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় শেষ পর্যন্ত হয়তো আরেক দফা হজ রিপ্লেসমেন্টের সুযোগ দেয়া হতে পারে।’

১৫ জুলাই থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হয়েছে। রোববার (২৯ জুলাই) পর্যন্ত পবিত্র হজ পালনে সৌদি আরব পৌঁছেছেন ৬৭ হাজার ২৭২ জন হজযাত্রী। সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৩ হাজার ২৫৯ জন ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৬৪ হাজার ১৩ জন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ৯৩টি ও সৌদি এয়ারলাইন্সের ৯৬টি ফ্লাইটসহ মোট ১৮৯টি ফ্লাইট এসব হজযাত্রী পরিবহন করেছে।

চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৬ হাজার ৭৯৮ জন হজযাত্রী পাঠানোর কোটা অনুমোদন দিয়েছে সৌদি সরকার। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীনে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৬ হাজার ৭৯৮ জন ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ২০ হাজার জন হজযাত্রী। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২০ আগস্ট হজ অনুষ্ঠিত হবে।