২৮ বছর পর এবার অর্থমন্ত্রী সিলেটের বাইরে

১৯৯১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রতিটি রাজনৈতিক সরকারের আমলেই অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন সিলেট অঞ্চলের কেউ। এর মধ্যে একটি মেয়াদ ছাড়া বাকি ২০ বছর মন্ত্রী ছিলেন সিলেট সদর আসনের সংসদ সদস্য। ১৭ বছর পর প্রথমবারের মতো অর্থ মন্ত্রণালয় গেল এই আসনের বাইরে।

নতুন সরকার শপথ নিতে যাচ্ছে তাতে অর্থমন্ত্রী হচ্ছেন কুমিল্লা-১০ আসনের সংসদ সদস্য আ হ ম মুস্তফা কামাল। সিলেট সদর আসন থেকে জয়ী এ কে আবদুল মোমেন পাচ্ছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

১৯৯০ সালে সেনাশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পতনের পর জাতীয় নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসা বিএনপির সাইফুর রহমান হন অর্থমন্ত্রী। তিনি সে সময় তার নিজ এলাকা মৌলভীবাজারে হারলেও জিতেন সিলেট-১ আসনে। ওই বছর বৃহত্তর সিলেটের এই একটি আসনেই জিতেছিল বিএনপি।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর অর্থমন্ত্রী করা হয় শাহ আ স ম কিবরিয়াকে। তিনি বৃহত্তর সিলেটের হবিগঞ্জের নবীগঞ্জের বাসিন্দা।

২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় ফিরলে আবার অর্থমন্ত্রী হন সাইফুর রহমান। দায়িত্ব পালন করেন পাঁচ বছর।

২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির নির্বাচন বানচাল হয়ে যায়, জারি হয় জরুরি অবস্থা। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় ফেরা আওয়ামী লীগ অর্থমন্ত্রী করে সিলেট-১ আসন থেকে জয়ী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে।

২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর আওয়ামী লীগ মন্ত্রিসভায় নানা পরিবর্তন আনলেও অর্থ মন্ত্রণালয়ের পদটিতে রাখা হয় মুহিতকেই।

গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে অংশ নেননি মুহিত। আর এর আগেই তিনি সংসদ থেকে বিদায় নিয়ে নেন। তার আসনে জেতেন ছোট ভাই মোমেন।

তবে ভোটের পর মুহিতের একটি বক্তব্য আবার আলোচনা তৈরি করে। তিনি আরও এক বছর অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনের আগ্রহের কথা জানান। বলেন, প্রধানমন্ত্রী চাইলে তার আপত্তি নেই, আর শেখ হাসিনার কথা তিনি ফেলতে পারেন না।

তবে নতুন মন্ত্রিসভার শপথের আগের দিন সরকারের পক্ষ থেকে নতুন মন্ত্রীদের যে তালিকা দেওয়া হয়েছে, তাতে নিশ্চিত হয় সিলেটের অর্থমন্ত্রী না পাওয়ার বিষয়টি। তবে অর্থমন্ত্রী না পেলেও বৃহত্তর সিলেট এবার মন্ত্রিত্ব পেয়েছে পাঁচটি। পূর্ণ মন্ত্রী হয়েছেন তিনজন, দুজন প্রতিমন্ত্রী।
মুহিতের ভাই মোমেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সুনামগঞ্জ-৩ আসনের এম এ মান্নান পরিকল্পনামন্ত্রী, মৌলভীবাজার-১ আসনের শাহাবউদ্দিন হয়েছেন পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী।

সিলেট-৪ আসনের ইমরান আহমেদ হয়েছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী, আর হবিগঞ্জ-৪ আসনের মাহবুব আলী হয়েছেন বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী।

১৯৯১ সালের আগেও অর্থমন্ত্রী পেয়েছে সিলেট। ১৯৮০-১৯৮১ মেয়াদে জিয়াউর রহমান সরকারের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন সাইফুর রহমান। এরপর এরশাদ সরকারের আমলে ১৯৮৩ থেকে ৮৪ সাল পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী ছিলেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই দুজন মিলেই দিয়েছেন ২৪টি বাজেট।