২৮ বছর পর সেমিতে ওঠার হাতছানি ইংল্যান্ডের সামনে

হ্যারি কেনদের ওপর চাপটা ছিল প্রবল। ইতিহাস চোখ রাঙিয়ে বলছিল, নকআউট ম্যাচের চাপ নিতে পারে না ইংল্যান্ড। টাইব্রেকার নামের গোলকধাঁধার উত্তর জানা নেই ইংলিশদের। সেই চাপ সামলেই বদলে যাওয়া নতুন ইংল্যান্ড দিনবদলের বারতা দিয়ে একযুগ পর পা রেখেছে বিশ্বকাপের শেষ আটে। দ্বিতীয় রাউন্ডে কলম্বিয়াকে টাইব্রেকারে হারিয়ে মানসিক বাধার দেয়াল গুঁড়িয়ে দিয়েছেন কেনরা। তাতে স্বস্তি মিলেছে, তবে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলার সময় এখনও আসেনি।

সামনে এখন আরও সম্ভাবনাময় নতুন দিগন্ত, যা উন্মোচিত করতে পেরোতে হবে আরও কঠিন বাধা। দীর্ঘ ২৮ বছর পর বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠার হাতছানি ইংল্যান্ডের সামনে। অনাগত সম্ভাবনাকে মুঠোবন্দি করার মিশনে আজ সামারায় শেষ আটের যুদ্ধে চেনা শত্র“ সুইডেনের মুখোমুখি ইংল্যান্ড। একই দিনে সোচিতে শেষ কোয়ার্টার ফাইনালে স্বাগতিক রাশিয়ার প্রতিপক্ষ ক্রোয়েশিয়া। চারটি দলই ইউরোপের।

আজ তাই যাদেরই বিদায় ঘটুক, ইউরোপের জয় নিশ্চিত। কাগজে-কলমে গায়ে ফেভারিটের তকমা সাঁটিয়ে নামবে ইংল্যান্ড ও ক্রোয়েশিয়া। নামের প্রতি সুবিচারের পাশাপাশি একটু ভাগ্যের সহায়তা পেলে তাদের জয় প্রত্যাশিত। অবশ্য চার দলের তিনটিই শেষ আটে পা রেখেছে টাইব্রেকার নামের ভাগ্য-পরীক্ষায় জিতে। শুধু সুইডেন জিতেছিল নির্ধারিত সময়ে। সুইডিশদের গোনায় না ধরাটা তাই বোকামিই হবে। ধারে-ভারে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা রাশিয়ার বড় শক্তি দর্শক সমর্থন ও লড়াকু মানসিকতা।

ইংল্যান্ডের তরুণ দলটি এবার বেশ সুন্দর ফুটবল খেলছে। আক্ষরিক অর্থেই দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন হ্যারি কেন। তিন ম্যাচে ছয় গোল করে গোল্ডেন বুট জেতার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন ২৪ বছর বয়সী টটেনহ্যাম তারকা। সুইডেনের বিপক্ষেও তার দিকেই তাকিয়ে থাকবে ইংল্যান্ড। নিন্দুকরা অবশ্য কেনের কীর্তিকে বড় করে দেখতে নারাজ। কারণ ইংল্যান্ড অধিনায়কের ছয় গোলের তিনটিই এসেছে পেনাল্টি থেকে।

কিন্তু এই বিশ্বকাপেই মেসি, রোনাল্ডোরা হাড়ে হাড়ে বুঝেছেন পেনাল্টি থেকে গোল করা কতটা কঠিন। অধিনায়কের মতো গোটা দলের মানসিক দৃঢ়তার কারণেই এবার টাইব্রেকার দুর্ভাগ্যকে পেছনে ফেলতে পেরেছে ইংল্যান্ড। এর আগে বিশ্বকাপে আটটি কোয়ার্টার ফাইনালের ছয়টিতে হারার বিবর্ণ রেকর্ডও এখন চোখ রাঙাতে পারছে না ইংলিশদের। ১৯৬৬ সালের পর দেশকে আরেকটি বিশ্বকাপ এনে দেয়ার বড় স্বপ্নই দেখছে থ্রি লায়নরা।

সুইডেন-বাধা পেরোনোর আগেই তা জানিয়ে দিলেন ইংলিশ ডিফেন্ডার জন স্টোনস, ‘আমরা জানি, বিশ্বকাপে সহজ ম্যাচ বলে কিছু নেই। সুইডেন যথেষ্ট ভালো দল না হলে এতদূর আসতে পারত না। তবে আমি জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। আমরা এখানে বিশ্বকাপ জিততেই এসেছি। ট্রফিটা নিয়েই আমরা দেশে ফিরতে চাই।’

সুইডেন শিরোপা-স্বপ্ন না দেখলেও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের আন্ডারডগ মানতে নারাজ। প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে দু’দলের শেষ আট দেখায় ইংল্যান্ডের জয় মোটে একটি। দলে কোনো বড় তারকা না থাকার পরও ‘দশে মিলে করি কাজ’ দর্শনে আস্থা রেখে এত দূর চলে এসেছে সুইডিশরা। চার ম্যাচের তিনটিতে কোনো গোল হজম করেনি। বাজিমাত করেছে চকিত প্রতিআক্রমণে।

এবার ইংলিশ মিডিয়ার হাঁকডাকের দাঁতভাঙা জবাব দিতে চান সুইডিশ অধিনায়ক আন্দ্রেয়াস গ্রাংকভিস্ত, ‘ইংল্যান্ড নাকি জয়ের ব্যাপারে ৯৯ শতাংশ নিশ্চিত! শুনেই আমার হাসি পাচ্ছে। মাঠেই আমরা বুঝিয়ে দেব বলার চেয়ে করাটা কত কঠিন।’

ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে রাশিয়ার অবশ্য হারানোর কিছু নেই। এরই মধ্যে প্রত্যাশা ছাপিয়ে গেছে তারা। শেষ ষোলোতে সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন স্পেনকে টাইব্রেকারে হারিয়ে সবাইকে চমকে দিলেও লুকা মডরিচের ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে কার্যত কোনো আশা নেই স্বাগতিকদের। নিখাঁদ রক্ষণাত্মক খেলে স্পেনের মতো আটকে রাখা যাবে না ক্রোটদের। ক্রোয়েশিয়ার মাঝমাঠ ও আক্রমণভাগ স্পেনের চেয়ে ঢের ক্ষুরধার। তবে এবার যে হারে অঘটন ঘটছে তাতে উপসংহারে কাউকে এগিয়ে বা পিছিয়ে রাখার মোটেও নিরাপদ নয়।