৮ ফেব্রুয়ারি মাঠ দখলে রাখবে আ’লীগ

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় ঘিরে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ, এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মাঠের দখল রাখবে। তারা আন্দোলন করতে বিএনপির কাউকে রাস্তায় নামতে দেবে না। সেভাবেই নিজেদের প্রস্তুত রাখছে ক্ষমতাসীনরা।

আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, সুনির্দিষ্ট কোনো কর্মসূচি তারা না দিলেও রায়ের দিন ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থান নিতে বলা হয়েছে। আক্রমণ এলে তা প্রতিহতের নির্দেশনাও তাদের দেয়া রয়েছে।

গত ২৫ জানুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার যুক্তিতর্ক শেষে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি রায়ের দিন ধার্যা করেন ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান।

এরপর থেকেই এই ইস্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হতে শুরু করে। সরকারি দল এবং রাজপথের বিরোধী দল- দু’পক্ষই বেশ মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। নেতারা পরস্পরের প্রতি হুমকি ছুড়ে বাক্যবিনিময় করছেন।

বিএনপির পক্ষ থেকে রায়ে নেতিবাচক কিছু হলে সরকার পতনে গণঅভ্যুত্থানের ডাক দেয়া হয়েছে। সরকারি দল তাদের এ ঘোষণা ‘নৈরাজ্য সৃষ্টির পায়তারা’ দাবি করে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে মোকাবেলার হুমকি দিয়েছে।

আসলে কী হবে ওইদিন- এমন জিজ্ঞাসা জনমনে। এ নিয়ে কৌতুহলের সঙ্গে মানুষের মধ্যে শঙ্কাও বিরাজ করছে। এসব উত্তেজনার পারদ চড়িয়েছে ৩০ জানুয়ারি আরেক মামলায় খালেদা জিয়া আদালত থেকে হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে দুই নেতা আটক হলে পুলিশের প্রিজনভ্যানে হামলা চালিয়ে তাদের ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা।

এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে দুটি মামলাও হয়েছে। ইতোমধ্যে সিনিয়র নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমানউল্লাহ আমান, নাজিম উদ্দিন আলমসহ ৪ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতারের দাবি করেছে দলটি।

হামলার ঘটনায় ‘বিএনপি ঘুরে দাঁড়িয়েছে কিনা’ ক্ষমতাসীনদের এমন ভাবনায় ফেলে দিলেও দলটিকে বেশ চাপে রাখার চেষ্টা করছে তারা। ইতোমধ্যে গ্রেফতারে বিএনপিতে আতঙ্কও ছড়িয়েছে। তারপরও বিএনপি চাইছে মাঠে থাকতে।

গ্রেফতারে কাবু বিএনপির তেমন সাড়ার আভাস পাওয়া না গেলেও পুরোদস্তুর মাঠ দখলে রাখারা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে আওয়ামী লীগ। এ উপলক্ষে ঢাকা মহানগর উত্তর ৪ ফেব্রুয়ারি ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ৬ ফেব্রুয়ারি বর্ধিত সভা ডেকেছে। এ সভায় তারা নিজেদের ওইদিনের করণীয় ঠিক করবেন।

এই দুই শাখার সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ ও সাদেক খান বলেছেন, ‘আমরা সেদিন কোনো কর্মসূচি দিয়ে এক জায়গায় হব না। তবে প্রতিটি নেতাকর্মী তাদের নিজ পাড়া-মহল্লায় সতর্ক অবস্থান নেবে। কোনো বিশৃঙ্খলা হলে প্রতিহত করবে।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আমরা কোনো উস্কানি দেব না। কিন্তু, আক্রমণ হলে সমুচিত জবাব দিতে হবে। সেজন্য প্রস্তুত হোন, মানসিকভাবে সতর্ক থাকুন। তারা রাস্তায় তাণ্ডব করলে, সন্ত্রাস করলে বাংলাদেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ করবেন।’

তিনি বলেন, ‘এবার আমরা আরো সংগঠিত ও সুশৃঙ্খল। কাজেই আগুন নিয়ে খেলবেন না। আগুন নিয়ে খেললে তার সমুচিত জবাব পেয়ে যাবেন।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালও বলেছেন, ‘খালেদা জিয়ার রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে কেউ বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ বিষয়ে সতর্ক আছে।’

পুলিশের নবনিযুক্ত মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. জাবেদ পাটোয়ারি বলেছেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রায়কে কেন্দ্র করে জনসাধারণের জানমাল রক্ষায় কঠোর অবস্থানে থাকবে পুলিশ। যেকোনো ধরনের নাশকতা বা সহিংসতার চেষ্টা হলে, তা রুখে দেয়া হবে।’

এদিকে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দাবি, ‘তার দল শত জুলুম-নির্যাতনের মধ্যেও এক এবং ঐক্যবদ্ধ আছে। বিপদ আসলে সবাই একসঙ্গে মোকাবেলা করবে।’

গতকাল শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভায় নেতাকর্মীদের তিনি আরো বলেন, ‘আমি যেখানেই থাকব, যেখানেই যাই আপনাদের সঙ্গে আছি, থাকব। তাই সকলেরই সাহস সঞ্চয় করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে।’