জানেন? উদ্বাস্তু শিবির থেকে উঠে আসা এই মুসলিম তরুণীর কাহিনি
জীবনটা সহজভাবে শুরু হয়নি। কাটেওনি সহজভাবে। কিভাবে কাটবে? সিরিয়া নামটাই যে তখন বিভীষিকা। অবশ্য এখনও। যারা রোজ সেই নামটা যাপন করেন, তারা জানেন সেখানে জীবনের কি মানে। তবে সে মানেও যে বদলানো যায়, অন্য অর্থে গড়া যায় রাস্তা, তার নজির মুজুন আলমেহান।
এই বিশ্ব উদ্বাস্তু দিবসে মুজুনকে নিজেদের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে বেছে নিয়েছে ইউনিসেফ। কে বলুন তো এই মুজুন? আপনার আমার মতোই খুব সাধারণ একজন। তবে জীবনটা ঠিক সাধারণ ছিল না কোনওদিনই। সিরিয়ার অস্থির পরিস্থিতিতে বেড়ে ওঠা। ২০১৩ সালে সেখান থেকে প্রাণ বাঁচিয়ে কোনওরকমে এসে পৌঁছানো জর্ডনে। তার পরের গল্পটা ইতিহাস।
৩ বছরের উদ্বাস্তু জীবন। তার মধ্যে ১৮ মাস জাটারি উদ্বাস্তু শিবিরে। যেখানে ভবিতব্য শুধুই বাল্যবিবাহ বা শিশুশ্রমিক হিসেবে কাজ করে গতানুগতিক জীবন কাটিয়ে দেওয়া। তবে মুজুনের লক্ষ্য অন্য ছিল। তাই আর পাঁচটা শিশুর মতো শিকড় ছেড়ে পালিয়ে আসার সময় তার হাতে ছিল স্কুল থেকে দেওয়া কিছু বই। তিনি বুঝেছিলেন বই ছাড়া মুক্তি নেই। একমাত্র বই-ই বদলে দিতে পারে স্বপ্নের রং।
সেভাবেই শুরু হয়েছিল তার পথচলা। তবে পরিসরটা শুধু নিজের জীবনের গণ্ডিতেই আটকে থাকেনি। উদ্বাস্তু শিবিরের বাকি সমবয়সিদেরও স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছিলেন মুজুন। সে স্বপ্নে শিক্ষা ছিল, স্বাস্থ্য ছিল, মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার প্রতিশ্রুতি ছিল। সমবয়সিদের মধ্যে মুজুনের পাশে এসে দাঁড়ায় বেশিরভাগ মেয়েরা। সেখান থেকে শুরু হল এক অন্য লড়াই।
তবে এই লড়াইয়ে তিনি পাশে পেয়েছিলেন ইউনিসেফকে। আর সামনে ছিল প্রয়াত অড্রে হেপবার্নের আদর্শ, যিনি নিজেও ইউনিসেফের শুভেচ্ছাদূত ছিলেন। উনিশ বছর বয়সেই মুজুন আজ ইউনিসেফের শুভেচ্ছাদূত। সেই প্রকল্পের অংশ হিসেবে চাদে গিয়েছিলেন মুজুন। দায়িত্ব ছিল সন্ত্রাস বিধ্বস্ত, যুদ্ধক্লান্ত শৈশবকে জীবনের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনা।
তবে শুধু চাদই নয়, বিশ্ব জুড়ে এরকম প্রায় আড়াই কোটি শিশুকে পথ দেখাচ্ছেন তিনি। ২০১০ সাল থেকে মানবউন্নয়ন খাতে বরাদ্দের দুই শতাংশ এই সব শিশুদের শিক্ষার খাতে ব্যয় করা হচ্ছে। ইউনিসেফের একটি বিবৃতি থেকে জানা গিয়েছে, বিশ্ব জুড়ে ইউনিসেফের আওতায় থাকা শিশুদের শিক্ষার জন্য ২৫০ কোটি টাকা প্রয়োজন।
তবে আমাদের চাওয়া আরেকটু বেশি। মালালা ইউসুফজাইয়ের মতো মুজুনও একটা নাম হয়ে উঠুন, আর তাকে সামনে রেখে পথ চলতে শুরু করুক আরও অনেক অনেক মুজুন। বিশ্ব উদ্বাস্তু দিবসে এর থেকে বড় প্রাপ্তি আর কিছু হতে পারে কি?
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন