শান্তিতে নোবেলের অংশীদার বাংলাদেশের দুই সংগঠনও
এ বছর শান্তিতে নোবেল জিতেছে পারমাণবিক অস্ত্র বিলোপে প্রচারণাকারী সংগঠনগুলোর জোট ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেইন টু অ্যাবলিশ নিউক্লিয়ার উইপনস (আইসিএএন)। মোট ১০১টি দেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী এই জোট সংগঠনটির সঙ্গে বাংলাদেশেরও দু’টি সংগঠন কাজ করে। সংগঠন দু’টি হলো, সেন্টার ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ (বাংলাদেশ অধ্যয়ন কেন্দ্র) ও ফিজিসিয়ান্স ফর সোস্যাল রেসপনসিবিলিটি।
এই সম্পর্কে ফিজিসিয়ান্স ফর সোস্যাল রেসপনসিবিলিটি’র প্রেসিডেন্ট ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর ও প্রফেসর কামরুল হাসান খান বলেন, ‘এই পুরস্কারে মাধ্যমে বিশ্বশান্তির পথে বাংলাদেশ একধাপ এগিয়ে গেলো। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নোবেল কমিটিকে অভিনন্দন। বাংলাদেশের মানুষ শান্তির পথে যুক্ত আছে। সেটাই আমরা প্রমাণ করেছি। বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে, সে প্রত্যাশা রইলো।’
এদিকে সেন্টার ফর বাংলাদেশ স্টাডিজের সাধারণ সম্পাদক অরূপ রাহী বলেন, ‘২০১৪ সাল থেকে এই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছে বাংলাদেশ অধ্যয়ন কেন্দ্র। পরমাণু প্রযুক্তির বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান আছে। বিধ্বংসী ব্যবহারকে ক্রিটিক্যালি দেখি। বাংলাদেশের হয়ে শান্তির পক্ষে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনে ছিলাম। শান্তির পক্ষে যুদ্ধের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান ছিল। বিশ্বে আমরা সেটা জানাতে চেয়েছি। পরমাণু অস্ত্রের বিরুদ্ধে গ্লোবাল আন্দোলন থেকে নিজেরা শিখতেও চাই। কেন পরমাণু অস্ত্র নিষিদ্ধ করা উচিত, এই নামে আমাদের একটা প্রকাশনা আছে। ওইটাই আমাদের প্রথম কাজ ওই সংগঠনের সঙ্গে।’
উল্লেখ্য, পুরস্কার ঘোষণার পর অরূপ রাহী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘এ বছর শান্তিতে নোবেল বিজয়ী আইক্যান (International Campaign to Abolish Nuclear Weapons—Ican) জোটের সদস্য বাংলাদেশ অধ্যয়ন কেন্দ্র। নোবেল পুরস্কার কোনও অবিসংবাদিত পুরস্কার নয়। কিন্তু শান্তির পক্ষে, পরমাণু অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ার জন্য আইক্যানের নোবেল প্রাপ্তি বিশ্বকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করার বৈশ্বিক আন্দোলনে যে ইতিবাচক প্রভাব রাখবে, এতে কোনও সন্দেহ নেই।’
ফেসবুকে অরূপ রাহী আরও লিখেছেন, ‘আমরা আইক্যানের সব উদ্যোক্তা-সমর্থককে অভিনন্দন জানাই। বাংলাদেশে যারা পরমাণু অস্ত্রমুক্ত দুনিয়া গড়ার আন্দোলনের সমর্থক, তাদের অভিনন্দন জানাই। পরমাণু অস্ত্র নিরোধ চুক্তি সই করার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ আর অভিনন্দন জানাই। নোবেল কমিটিকেও ধন্যবাদ জানাই। তাদের এই সিদ্ধান্ত ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বাংলাদেশ অধ্যয়ন কেন্দ্রের সব বন্ধু-শুভাকাঙ্ক্ষী-সহযোদ্ধাকে অভিনন্দন জানাই।’
বাংলাদেশ অধ্যয়ন কেন্দ্রের অবস্থান যুদ্ধের বিরুদ্ধে উল্লেখ করেন অরূপ রাহী আরও লিখেছেন, ‘সে কারণেই, পরমাণু অস্ত্র ও ঝুঁকিপূর্ণ পারমাণবিক বিদ্যুৎ—দুইয়ের বিরুদ্ধেই অবস্থান বাংলাদেশ অধ্যয়ন কেন্দ্রের। কেন এই অবস্থান, কেন সবারই এই অবস্থান নেওয়া দরকার, কেন সারা দুনিয়ায় শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগের অংশ হিসেবে পরমাণু অস্ত্র উৎপাদন ও এর বাণিজ্যের বিরুদ্ধে সবাই মিলে কাজ করা দরকার, সে ব্যাপারে সমাজে আলোচনা, ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা, সরকার ও রাষ্টগুলোকে পরমাণু প্রযুক্তির ধ্বংসাত্মক ব্যবহারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে সম্মত করার জন্যে কাজ করে আইক্যান। সেই কাজে অংশ নিতে, বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিতে এবং শান্তির পক্ষে বাংলাদেশের সমাজের সদস্য হিসেবে আন্তর্জাতিক ফোরামে স্বর হাজির করার জন্য ২০১৪ সালে আইক্যানের সদস্যপদ নেয় বাংলাদেশ অধ্যয়ন কেন্দ্র।’ তিনি লিখেছেন, ‘আসুন, সবাই মিলে এই বিশ্বকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করি। যুদ্ধ, অবিচার, শোষণ-বৈষম্যবিহীন, শান্তি আর ন্যায়ের দুনিয়া গড়ি।’
এর আগে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, পারমাণবিক অস্ত্র বিলোপে প্রচারণা চালানো সংগঠন আইসিএএন ১০০টিরও বেশি দেশে তৃণমূল-পর্যায়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। প্রথম অস্ট্রেলিয়ায় কার্যক্রম শুরু করলেও সংগঠনটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ২০০৭ সালে ভিয়েনায়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির সদর দফতর সুইজারল্যান্ডের জেনেভায়।
পুরস্কার জয়ের পর ফেসবুকে একটি বিবৃতি দিয়েছে আইসিএএন। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আণবিক যুগ শুরুর পর থেকে যারা পারমাণবিক অস্ত্র রোধে সোচ্চার থেকেছেন, এসব অস্ত্র রাখার বৈধ উদ্দেশ্য নেই দাবি করে যারা সরব থেকেছেন এবং বিশ্ব থেকে এ ধরনের অস্ত্র বিলোপ করতে যারা সোচ্চার থেকেছেন, সেই লাখ লাখ ক্যাম্পেইনার ও বিশ্বের উদ্বেগী মানুষদের পুরস্কারটি উৎসর্গ করা হচ্ছে।’সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন