রোহিঙ্গা সংকটের কারণে অনিশ্চয়তায় সেন্টমার্টিনের পর্যটন শিল্প
রোহিঙ্গা সংকটের কারণে দেশের এক মাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনের পর্যটন শিল্পে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। যার প্রভাবে কক্সবাজারে পর্যটন সংকট তৈরী হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রবাল, খোলা আকাশ আর সমুদ্রের নীল পানির মিতালী দেখতে প্রতিবছর সেন্টমার্টিনে ছুটে আসেন লাখো পর্যটক। অক্টোবরের মধ্য সময় থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এই স্থানে পর্যটনের ভরা মৌসুম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এসময় সেন্টমার্টিনগামী পর্যটকরা কক্সবাজারে যাত্রা বিরতি দিয়ে রাত্রিযাপন করে থাকেন। এতে মুখর হয়ে উঠে কক্সবাজারও। কিন্তু এবার এই দৃশ্য সেভাবে জমে উঠছে না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিবছর মধ্য অক্টোবর থেকে টেকনাফ সেন্টমার্টিন নৌ রুটে পর্যটনবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হয়ে যায়। কিন্তু এবার তা বন্ধ রয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে সীমান্ত জটিলতার কারণে এর অনুমতি মিলছে না।
এ বিষয়ে এলসিটি কাজল জাহাজের ম্যানেজার আল আমিন তুষার জানান, রোহিঙ্গা ইস্যুর কারণে জাহাজ চলাচলের অনুমতি পাওয়া যাচ্ছে না। সেন্টমার্টিনে যাতায়তের জন্য ৬ টি জাহাজ প্রস্তুত রয়েছে। নৌ পরিবহণ অধিদপ্তর, কোস্টগার্ড ও জেলা প্রশাসনের সাথে বারবার যোগাযোগ করা হলেও কবে নাগাদ জাহাজ চলাচল শুরু হতে পারে তা এখনও পরিষ্কারভাবে বলা যাচ্ছে না।
এলসিটি কাজল জাহাজের ম্যানেজার আরো জানান, সর্বশেষ গত ২ নভেম্বর এ নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রাথমিকভাবে জাহাজ চলাচলের পক্ষে মত আসে। কিন্তু এই বিষয়ে চূড়ান্ত নির্ভর করছে সিদ্ধান্ত মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি ও বাংলাদেশের বর্ডার গার্ড বিজিবির আলোচনার উপর। এ নিয়ে আগামী ১১ বা ১২ নভেম্বর দুই দেশের সীমান্ত বৈঠক হতে পারে। সার্বিকভাবে জাহাজ চলাচলের বিষয়টি অনিশ্চিত বলে জানান তিনি।
ট্যুর অপারেটর অব বাংলাদেশের আহবায়ক এম হাসিব বাদল জানান, সেন্টমার্টিনে এ পর্যন্ত ভ্রমণে ইচ্ছুক প্রায় ৫ লাখ পর্যটক বুকিং বাতিল করেছেন। আরও ১০ লাখ পর্যটক অনলাইনে সেন্টমার্টিনে যাওয়ার আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষামান রয়েছে। কিন্তু কবে পর্যটকদের সেন্টমার্টিন নেয়া যাবে বলা যাচ্ছে না। এর কারণে কক্সবাজারেও পর্যটক স্বল্পতা দেখা দিয়েছে।
ট্যুর গাইড বেলাল আবেদীন জানান, প্রতিবছর কক্সবাজারে যে পর্যটক আসেন তার ৫০ শতাংশই সেন্টমার্টিনে যাবার পরিকল্পনা করে থাকেন। এবার নাফ নদী দিয়ে ভ্রমণের অনুমতি না পাওয়ায় এসব পর্যটকরা দেশের বাইরে যাচ্ছেন। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে কক্সবাজারেও।
তাৎক্ষণিকভাবে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয় বলে মনে করছেন টেকনাফের সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন রাজু। তিনি জানান, সেন্টমার্টিনের জাহাজ সমুহ মূলত চলাচল করে মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকা ঘেঁষে। মিয়ানমারের সীমান্ত বাহিনী ইতিমধ্যে বর্বর আচরণ করেছে। কয়েকদিন আগেও নদীতে ৫ জেলেকে রেখে নৌকা নিয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে নাফনদী দিয়ে পর্যটনবাহি জাহাজ চলাচল নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তাই বিকল্প পথে জাহাজ চলাচলের বিষয়টি সমর্থন করেন তিনি।
বিকল্প প্রস্তাব হিসেবে নাফ নদীর পরিবর্তে রেজুখাল দিয়ে জাহাজ চলাচলের বিষয়টি বিবেচনাধীন। এ বিষয়ে জাহাজ কর্মকর্তা আল আমিন তুষার জানান, রেজুখাল দিয়ে জাহাজ চলাচলের কথা আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু এটা সম্ভব হবে কি না বলা যাচ্ছে না। রেজুখাল দিয়ে জাহাজ চলাচল করলে দূরত্ব বিবেচনায় সেন্টমার্টিনে পৌঁছতে সময় লাগবে ৭ ঘন্টা। ফলে দিনে গিয়ে দিনে জাহাজ ফেরা সম্ভব নয়। ফলে মালিকরা এই বিকল্প সমাধান নিয়ে আর আগাবেন না বলে ধরা যায়।
জাহাজ চলাচল ও সীমান্ত ইস্যুতে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে মিয়ানমারের সীমান্ত বাহিনী সাথে বিজিরি বৈঠক করার কথা থাকলেও বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে রাজি নন বিজিবির কর্মকর্তারা। যোগাযোগ করা হলে টেকনাফস্থ বিজিবির ২ নম্বর ব্যাটলিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল এস এম আরিফুল ইসলাম বিষয়টি নিয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসনের সাথে আলাপ করার পরামর্শ দেন।
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. মাহিদুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের কারণে সেন্টমার্টিনের জাহাজ চলাচলে কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এবার বর্ষার মৌসুম দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণেও বিলম্ব হচ্ছে। তবে চূড়ান্ত অনুমতি নির্ভর করছে নৌ পরিবহণ অধিদপ্তর ও কোস্টগার্ডের রিপোর্টের উপর। রিপোর্ট পাওয়ার পর অনুমতি প্রদান করা হবে তার আগে সম্ভব হবে না।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন