রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে বিলম্ব : ঢাকাকেই দায়ী করলো নেইপিদো
পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন শুরু হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তা হয়নি। এ জন্য বাংলাদেশ দায়ী বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের কাছে দাবি করেছে নাইপিদো।
মিয়ানমারের ইংরেজি দৈনিক মিয়ানমার টাইমস দেশটির প্রেসিডেন্ট ভবনের মুখপাত্র উ জাউ হাথের বরাত দিয়ে জানায়, তার দেশ বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের গ্রহণে প্রস্তুত, কিন্তু বাংলাদেশ তাদের এখন পাঠাচ্ছে না।
এদিকে দেশটির ইউনিয়ন মন্ত্রী থং তুন’ও বলেছেন, সীমান্ত পেরিয়ে যারা আসবে তাদের গ্রহণ করতে প্রস্তুত আছে তার দেশ। গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার জেরে সেনাবাহিনী ক্লিয়ারেন্স অপারেশন শুরু করে। নৃশংস এ অভিযানে ৬ লাখ ৮০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়েছে।
রক্তাক্ত অভিযানের সময় বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের নিরাপত্তাবাহিনীর বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন, ধর্ষণ ও তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। জাতিসংঘ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এ অভিযানকে জাতিগত নিধন হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
থং তুন বলেছেন, সম্প্রতি দিনে ৩০০ জনকে ফেরত নেয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে মিয়ানমার। এছাড়া প্রথম ধাপের কাজের অগ্রগতির ওপর ভিত্তি করে এ সংখ্যা বাড়ানো হবে।
দেশটির সামাজিক কল্যাণমন্ত্রী উইন মিয়াত আয়ে বলেছেন, যাচাই-বাছাইয়ের পর মিয়ানমারের ফিরতে পারবেন, এমন ৭০০ রোহিঙ্গা ও ৪০০ হিন্দু শরণার্থীর তালিকা ঢাকাকে দিয়েছে নেইপিদো। শুধুমাত্র তারাই মিয়ানমারে ফিরতে পারবেন; যারা তাদের পরিচয়-সংক্রান্ত নথি দেখাতে পারবেন। তবে অধিকাংশ রোহিঙ্গার কাছে এ নথি নেই।
এদিকে, বাংলাদেশের কর্মকর্তারা সোমবার (২৩ জানুয়ারি) বলেছেন, এখন বেশ কিছু ইস্যু অমীমাংসিত রয়েছে। এমনকি প্রত্যাবর্তনের পর রোহিঙ্গারা আবারো ফিরে আসতে বাধ্য হতে পারেন বলে উদ্বেগ রয়েছে বাংলাদেশের।
রোহিঙ্গারা রাষ্ট্রহীন মুসলিম জাতিগোষ্ঠী বলে উল্লেখ করেছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি বলছে, বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘসময় ধরে নির্যাতিত সংখ্যালঘু একটি গোষ্ঠী হচ্ছে এ রোহিঙ্গা। বাংলাদেশের চট্টগ্রামের স্থানীয় ভাষার সঙ্গে রোহিঙ্গাদের ভাষার মিল থাকায় সংখ্যালঘু মুসলিম এ গোষ্ঠীকে ঘৃণা করেন মিয়ানমারের বৌদ্ধরা।
মিয়ানমারের বৌদ্ধরা এসব রোহিঙ্গাকে অবৈধ অভিবাসী মনে করে। এমনকি মিয়ানমারে কয়েক প্রজন্ম ধরে বসবাস করে এলেও তাদের বাঙালি হিসেবে ডাকে স্থানীয়রা। রোহিঙ্গাদের অধিকাংশই দেশটির পশ্চিমাঞ্চলের দারিদ্র্যপীড়িত রাখাইন রাজ্যে বসবাস করলেও সে দেশের নাগরিকত্ব নেই তাদের।
এছাড়া রোহিঙ্গাদের চলাচল ও কাজের ওপরও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলছে, ২০১২ সালে দেশটিতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার পর রাখাইন প্রদেশ থেকে রোহিঙ্গারা পালাচ্ছে; এখনো তা অব্যাহত রয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন