প্রত্যাবাসনের আগে রোহিঙ্গা শিবির অস্থির করার চেষ্টা?

প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ব্যাহত করতে একশ্রেণির রোহিঙ্গা তাদের শিবিরগুলোতে অস্থিরতা ছড়াতে চাচ্ছে। চাকরিসহ নানা সুযোগ-সুবিধা হারানোর ভয়ে কিছু এনজিওর লোকজন অস্থিরতা বাড়ানোর পেছনে থাকতে পারে। এমনটাই মনে করছেন স্থানীয়রা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোহিঙ্গারা নিজেদের মধ্যে নানা ঝামেলা করছে। জড়িয়ে পড়ছে অপরাধে। রোহিঙ্গা শিবিরে গুলিতে নেতা নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। সম্প্রতি অস্থিরতার মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন প্রশাসন।

উখিয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য মতে, গত ১৩ জানুয়ারি দুটি অস্ত্রসহ দুই রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। জানুয়ারির শুরুর দিকে ছুরি এবং দেশীয় অস্ত্রসহ আটক হয় আরো তিন রোহিঙ্গা। এছাড়া মাদক ও চোরাচালানসহ নানান অপরাধে গত তিন মাসে ৫০ জনের বেশি রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানাসহ সাজার মুখোমুখি হয়েছে ৬০৪ জন।

গত ১৯ ডিসেম্বর দু’গ্রুপের গোলাগুলিতে নিহত হয়েছেন মোহাম্মদ ইউসুফ নামের এক রোহিঙ্গা নেতা। এর আগে ২১ অক্টোবর টেকনাফের নয়াপাড়া ক্যাম্পে কবির আহামদ নামে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে হেনস্তা করেছিল রোহিঙ্গারা। এছাড়া ১৯ অক্টোবর রোহিঙ্গাদের হামলায় হ্নীলায় নিহত হয়েছেন আবু ছিদ্দিক নামে এক যুবক। ৩০ অক্টোবর উখিয়ার বালুখালী শিবির সংলগ্ন বাগান থেকে অস্ত্রসহ ৫ রোহিঙ্গাকে আটক করেছিল র‌্যাব। ২৭ অক্টোবর রামু খুনিয়াপালং ইউনিয়নে রোহিঙ্গা যুবকের হামলায় নিহত হন আবদুল জব্বার নামে আরেক যুবক। ১৪ নভেম্বর বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দু’গ্রুপের সংঘর্ষে আহত হন অন্তত ২০ রোহিঙ্গা।

উখিয়ার পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল গফুর বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন অস্ত্রসহ ধরা পড়েছে। যৌথ বাহিনী গঠন করে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সব শেডে অভিযান চালানোসহ যত দ্রুত সম্ভব সব রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠাতে হবে।

টেকনাফ কৃষক লীগ সভাপতি আবুল হোসেন রাজু জানান, কিছু এনজিও রোহিঙ্গাদের চাকরি দিয়েছে। চাকরিপ্রাপ্তদের মধ্যে বেশিরভাগই শেড মাঝি অথবা তাদের ছেলেমেয়ে। মিয়ানমারে কষ্টে জীবনযাপন করা এসব রোহিঙ্গা এখানে অপ্রত্যাশিত সুযোগ-সুবিধা পাওয়ায় ফেরত যেতে চাচ্ছে না।

এ প্রসঙ্গে আবুল হোসেন রাজু জানান, জানুয়ারির প্রথমদিকে লেদা রোহিঙ্গা শিবিরের একটি মেয়েকে অপহরণ করা হয়েছিল। পরে তাকে টেকনাফ থেকে উদ্ধার করা হয়। মেয়েটি একটি এনজিওর তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাকরি করত। এই পদে আরেক রোহিঙ্গার মেয়েকে নেওয়ার কথা ছিল। যে মেয়েটি চাকরি পায়নি তার ভাই সেই মেয়েটিকে অপহরণ করে।

এছাড়া বেশ কিছু এনজিও কয়েক বছরের জন্য তাদের বাজেট নিয়ে এসেছে। রোহিঙ্গারা এদেশে বেশি সময় থাকলে তাদের সুবিধা। তাই ক্যাম্পে অস্থিরতা ছড়ানোর কাজে এসব এনজিও জড়িত থাকা অসম্ভব নয়।

মুচনি রোহিঙ্গা শিবিরে কর্মরত আইওএমএ’র মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গারা নিজেদের মধ্যে মারামারিসহ নানা ধরনের সমস্যা করছে। এখানে একশ্রেণির পুরুষ আছে যারা এখন নিজেদের নেতা ভাবছে। তারা কোনো কাজকর্ম না করেই সবার ওপর খবরদারি করতে চাইছে। এ নিয়ে বিবাদ বাড়ছে।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিকারুজ্জামান বলেন, পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। রাতে রোহিঙ্গা শিবিরে পাহারা দেওয়ার জন্য বেসরকারিভাবে ৫টি পাকা স্থাপনা করার কথা রয়েছে। দ্রুত কাজ হয়ে যাবে।

উখিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চাইলা প্র“ মার্মা বলেন, সাম্প্রতিক রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসীমূলক কর্মকাণ্ডে প্রমাণিত হচ্ছে তারা সহিংস হয়ে উঠছে। এর পেছনে কোনো শক্তি কাজ করছে কি না সেটা আমরা খতিয়ে দেখছি। তবে কেউ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে পার পাচ্ছে না।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার ড. একেএম ইকবাল হোসেন বলেন, বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উদ্বিগ্ন। উখিয়া টেকনাফে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ১ হাজার ২০০ পুলিশ সদস্য কাজ করছেন।

এছাড়া সাদা পোশাকে আরো ১০০ পুলিশ রয়েছেন। তিনজন সহকারী পুলিশ সুপার ও ১৪ জন ওসির তত্ত্বাবধানে রয়েছে রোহিঙ্গা শিবির। এছাড়া রোহিঙ্গারা যাতে শহরে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য পুলিশের ১১টি, র‌্যাবের দুটি এবং বিজিবির দুটি চৌকিতে নিয়মিত তল্লাশি চালানো হচ্ছে।