অবশেষে খালেদা জিয়ার রায়ের নথি হাইকোর্টে
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর ঘোষিত রায়ের নথি হাইকোর্টে পৌঁছেছে।
আজ রোববার দুপুর ১২টার দিকে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় নথিটি এসে পৌঁছেছে বলে নিশ্চিত করেছেন নিম্ন আদালতের পেশকার মোকাররম হোসেন। তিনি বলেন, পাঁচ হাজার ৩৭৩ পৃষ্ঠার নথি পুলিশ পাহারায় হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা দেওয়া হয়েছে।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে খালেদা জিয়া ওই মামলায় জামিন আবেদন করলে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের বেঞ্চ বিচারিক আদালতের নথি তলব করেন। আদেশের ১৫ দিনের মধ্যে হাইকোর্টে নথি পাঠাতে বলা হয়। হাইকোর্টের আদেশ ২৫ ফেব্রুয়ারিই বিচারিক ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে পৌঁছায়। ফলে হাইকোর্ট নির্ধারিত শেষ দিনেই নথিটি পৌঁছল।
এদিকে, জামিনের আদেশের জন্য আজ রোববার সকালে দিন ধার্য থাকলেও সে সময় পর্যন্ত নথি না আসায় আদেশ দেননি আদালত। খালেদা জিয়ার করা জামিন আবেদনের বিষয়ে আগামীকাল সোমবার দুপুর ২টায় রায় দেওয়া হবে বলে জানান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
এর আগে আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নাল আবেদীন আদালতকে বলেন, ‘শুনানি শেষে আজ জামিনের আবেদনের ওপর আদেশের দিন ধার্য রয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত নথি এসে পৌঁছেনি। অবশ্য চাইলে হাইকোর্ট নিজস্ব ক্ষমতাবলে আদেশ দিতে পারেন।’
এ সময় আদালত বলেন, ‘আমরা নথি আসার জন্য গত ২২ ফেব্রুয়ারি ১৫ দিন সময় বেঁধে দিয়ে আদেশ দিয়েছিলাম। এই আদেশ ২৫ তারিখে যদি পৌঁছে, তাহলেও ১৫ দিন শেষ হবে আজ। আমরা শেষ সময় পর্যন্ত দেখি। এর পরে আগামীকাল এ বিষয়ে আদেশ দেবো।’
জবাবে জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আদালতের হাত অনেক লম্বা। কারণ, এটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত। আদালত চাইলে আদেশ দিয়ে দিতে পারেন।’
তখন আদালত বলেন, ‘আমরা আজকের দিনটি দেখি।’
এর আগে গত বুধবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বেঞ্চ সহকারী মোকাররম হোসেন এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছিলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া মামলার মূল নথি হাইকোর্টে পাঠানো হচ্ছে। আগামী রোববার নিম্ন আদালত থেকে এই নথি হাইকোর্টে পাঠানো হবে।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়। এরপর পুরান ঢাকার পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারকে বিশেষ কারাগার ঘোষণা দিয়ে খালেদা জিয়াকে সেখানে রাখা হয়।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিল দায়ের করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। এর পরেই গত ২২ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় নিম্ন আদালতের দেওয়া সাজার বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার করা আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে জামিন আবেদনের ওপর শুনানির জন্য ২৫ ফেব্রুয়ারি দিন ঠিক করেন। সেইসঙ্গে স্থগিত করেন খালেদা জিয়ার অর্থদণ্ড।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বিকেলে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি হয়। শুনানি শেষে খালেদা জিয়ার মামলার নথি নিম্ন আদালত থেকে হাইকোর্টে এসে পৌঁছানোর পরই আদেশ দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।
এ মামলায় মোট আসামি ছয়জন। তার মধ্যে তিনজন পলাতক। এই তিনজন হলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
২০১০ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়া ও তাঁর ছেলে তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপপরিচালক হারুন-আর রশিদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।
মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন—মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন