যৌতুক না পেয়ে স্ত্রীর মাথা ন্যাড়া! স্বামী-ননদ গ্রেফতার

যৌতুকের টাকা না পেয়ে শাহানারা বেগম (৩০) নামে এক গৃহবধূকে মাথা ন্যাড়া করার অভিযোগ উঠেছে পাষণ্ড স্বামী ও তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। বর্তমানে তিনি হাতীবান্ধা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

গত বুধবার লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার সিন্দুর্না ইউনিয়নের উত্তর হলদীবাড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। গৃহবধূ শাহানারা বেগম চার সন্তানের মা।

এ ঘটনায় ওই গৃহবধূ বাদী হয়ে বুধবার রাতে হাতীবান্ধা থানায় স্বামীসহ চারজনকে আসামি করে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

আসামিরা হলেন- স্বামী বাবলু মিয়া (৩৫), তার বড় ভাই আব্দুল গফুর (৪০), স্বামী পরিত্যক্ত দুই বোন মহুরন নেছা (৩৭) ও আমেনা বেগম (৩০)। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে স্বামী বাবলু মিয়া ও তার বড় বোন মহুরন নেছাকে গ্রেফতার করে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, হাতীবান্ধা উপজেলার টংভাঙ্গা ইউনিয়নের মৃত ঝুল্লুর রহমানের মেয়ে শাহানারা বেগমের সাথে প্রায় এক যুগ আগে বিয়ে হয় পার্শ্ববর্তী সিন্দুর্না ইউনিয়নের উত্তর হলদীবাড়ি গ্রামের মৃত মহির উদ্দিনের ছেলে বাবলু মিয়ার। শাহানারা বেগম ও বাবলুর দাম্পত্য জীবনে চার সন্তান রয়েছে। বিয়ের সময় দুই লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন বাবলুর পরিবার। অসহায় শাহানারা স্বামী ব্যবসা করবে বলে বাবার বাড়ি থেকে ১ লাখ টাকা এনে স্বামীর হাতে তুলে দেন। এরপর আরো টাকা এনে দেয়ার জন্য শাহানারা বেগমকে চাপ দিতে থাকেন বাবুলসহ তার পরিবারের লোকজন। টাকা এনে দিতে অস্বীকার করায় বুধবার সকালে বাবলু তাকে মারধর করেন। এর প্রতিবাদ করলে পরে স্বামী বাবলুর পরিবারের সদস্যরা মারধর করেন। একপর্যায়ে স্বামী বাবলু শাহানারার মাথা ন্যাড়া করে ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখেন। সন্ধ্যায় স্বামী বাবলু মিয়া বাজারে গেলে শাহানারা ঘরের বেড়ার বাঁধন কেটে হাতীবান্ধা হাসপাতালে এসে ভর্তি হন।

পরে হাতীবান্ধা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে রাতেই পুলিশ তার স্বামী বাবলু মিয়া ও তার বোন মহুরন নেছাকে গ্রেফতার করে।

শাহানারা বেগম জানান, বিয়ের পর থেকে তার স্বামী, ভাশুর ও তাদের দুই বোন যৌতুকের জন্য প্রায়ই তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতেন। বিশেষ করে এর মাত্রা বেড়ে যায় তার বাবার মৃত্যুর পর। তার ৪ সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তিনি শত অত্যাচার, নির্যাতন নীরবে সহ্য করে গেছেন। কিন্তু বুধবার সকালে নির্মমভাবে শারীরিক নির্যাতন করে মাথা ন্যাড়া করে দেয়া হয়েছে। তিনি এ ঘটনায় স্বামী বাবলু মিয়াসহ আসামিদের শাস্তি দাবি করেন।

সিন্দুর্না ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, আমি ঘটনাটি এখন শুনলাম। আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। কেউ অপরাধ করলে তাকে শাস্তি পেতেই হবে।

হাতীবান্ধা থানার ওসি উমর ফারুক জানান, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়ে আসামি বাবলু মিয়া ও তার বড় বোন মহুরন নেছাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান ওসি।