ভূমিধস ও বন্যার ঝুঁকিতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা
কক্সবাজারে কুতুপালং সম্প্রসারিত ক্যাম্পে ১২ সদস্যের পরিবার নিয়ে দুটি ঝুপড়িঘরে উঠেছেন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জাতিগত নির্মূল অভিযান থেকে আসা রোহিঙ্গা হাসান আলী।
পাহাড়ের ওপরে ত্রিপলের ছাউনি ও বাঁশ-পলিথিনে ঘেরা এ ঘরটি নিরাপদই বলা চলে। কিন্তু হাসান আলী ও তার পরিবারের উৎকণ্ঠা, ঝড়-বৃষ্টি হলে তারা কী করবেন? কোথায় যাবেন? প্রতিকূল আবহাওয়ায় তাদের পরিণতিই বা কী হবে।
পাঁচ নম্বর ক্যাম্পের জহুরা বেগম বলেন, মে মাসেই ঝড় শুরু হয়। আর এক মাস আছে। আমরা অপেক্ষায় আছি ঘরগুলো যদি আরও শক্ত করে বেধে দেয় সেজন্য।
ক্যাম্পে বসবাসরত লাখ লাখ রোহিঙ্গা আসন্ন বর্ষা মৌসুমে মারাত্মক বিপর্যয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
যারা পাহাড়ের খাঁড়া ঢালে ঘর তুলেছেন, ভারী বৃষ্টিতে তাদের নিয়ে আছে ভূমিধসের ভয়। আর নিম্নাঞ্চলে যারা থাকছেন, তাদের আছে বন্যায় প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকি। জাতিসংঘের হিসেবে অন্তত দেড় লাখ রোহিঙ্গা এই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।-খবর বিবিসি অনলাইন।
বর্ষাকাল যত ঘনিয়ে আসছে কক্সবাজারে বসবাসরত এই রোহিঙ্গাদের নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও তত বাড়ছে।
আগস্টে সহিংসতার পর থেকে নতুন আসা সাত লাখসহ কক্সবাজারে মোট রোহিঙ্গার সংখ্যা এখন প্রায় ১০ লাখ। পুরো জেলায় পাঁচ হাজার ৮০০ একর ভূমি এখন রোহিঙ্গাদের দখলে।
কৃষিজমি, পাহাড় ও বন উজাড় করে নির্মিত এই বসতি বিপুলসংখ্যক মানুষের জন্যই এখন বিরাট ঝুঁকি তৈরি করেছে।
ক্যাম্পের ঝুঁকিপূর্ণ রোহিঙ্গাদের জন্য একটি পাহাড়ে নিরাপদ আশ্রয় শিবির গড়ে তোলার কাজ হচ্ছে বিদেশি সহায়তায়। এ কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা পরামর্শকদের একজন মোহাম্মদ হোসেন।
পাহাড়ে রোহিঙ্গা বসতি দেখিয়ে তিনি বলেন, এখানে তো কোনো ঘরই পরিকল্পিতভাবে করা হয়নি। বেশিরভাগই ঝুঁকিপূর্ণ। এমনিতে ভালো আছে। কিন্তু বৃষ্টি হলে কী অবস্থা হবে, সেটি ধারণারও বাইরে। গাছপালা কেটে পাহাড়ে যেভাবে শেল্টার করা হয়েছে, তাতে অনেক পাহাড় ধসে পড়তে পারে।
ক্যাম্পে এ ঝুঁকির কারণে আসন্ন বর্ষা মৌসুম কী পরিস্থিতি হবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও।
ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র ক্যারোলাইন গ্লাক বলেন, আমাদের হিসেবে অন্তত দেড় লাখ মানুষ বন্যা এবং ভূমিধসের মারাত্মক ঝুঁকিতে আছে। তাদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেয়া দরকার।
তার মতে, আমরা এ পর্যন্ত মাত্র কয়েক হাজার মানুষকে স্থানান্তর করতে পেরেছি। বড় সমস্যা হল তাদের কোনো জায়গায় সরিয়ে নেব? তবে ঝুঁকিপূর্ণ রোহিঙ্গাদের খুব দ্রুতই সরিয়ে নেয়া দরকার।
এত বিপুলসংখ্যক মানুষের জন্য পাহাড়-জঙ্গলে নিরাপদ আবাসন নির্মাণের বিষয়টি চ্যালেঞ্জের। আন্তর্জাতিক সংস্থার পক্ষ থেকে পরিস্থিতিকে এক কথায় বিপজ্জনক বলেই অভিহিত করা হচ্ছে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মধ্যে কাজ করছে আইওএম। সংস্থার মুখপাত্র ফিওনা ম্যাকগ্রেগর বলেন, আপনি জানেন এ এলাকাটি দুর্যোগপ্রবণ, সাইক্লোন ও খারাপ আবহাওয়ার জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ। মানুষ এখানে অস্থায়ী শেল্টারে বসবাস করছে। যেটি কেবল ত্রিপলের ছাউনি ও বেড়ায় নির্মিত। এটি সত্যি বিপজ্জনক ও ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি বলেন, আইওএম, সরকার ও অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে মিলে ড্রেনগুলো পরিষ্কার রাখা এবং পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে চাইছে। বন্যা ও বৃষ্টি-কাঁদার মধ্যে যেন ক্যাম্পে মানুষের কাছে খাবার, পানি ও জরুরি সাহায্য নিয়ে পৌঁছানো যায়, সেটি ঠিক রাখা জরুরি। কারণ এই মানুষগুলোর সবাই সাহায্য নিয়ে বেঁচে আছে। কক্সবাজারে শরণার্থী ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, ক্যাম্প সম্প্রসারণের মাধ্যমে মে মাসের মধ্যে এক লাখের মতো রোহিঙ্গা স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত ১০ হাজারের কিছু বেশি রোহিঙ্গা সরিয়ে নেয়া হয়েছে। আগামী মে মাসের মধ্যে লাখখানেক রোহিঙ্গা স্থানান্তর করার প্রক্রিয়া চলছে।
তবে ক্যাম্পের পরিস্থিতি বলছে, ভূমিধস ও বন্যা ঠেকাতে যে তৎপরতা চলছে, তা সার্বিক সংকটের তুলনায় সামান্য। কারণ ক্যাম্পের যেসব অস্থায়ী ঘরে লাখ লাখ রোহিঙ্গার বসবাস সেটিকে কোনোভাবেই নিরাপদ বলা যায় না।
এ অবস্থায় সরকার পর্যায়ক্রমে রোহিঙ্গাদের নোয়াখালীর ভাসানচরে সরিয়ে নেয়ার একটি প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে।
বাংলাদেশ নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ভাসানচরে সুনির্দিষ্ট মডেলে ঘরবাড়ি সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ শুরু হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে এক লাখ রোহিঙ্গা ভাসানচরে নেয়ার কথা জানানো হলেও ঠিক কবে নাগাদ সেটি শুরু হবে সেটি এখনও স্পষ্ট নয়।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন