মৃত্যুর আগে এরশাদের শেষ ইচ্ছে

জাতীয় পার্টির তৃণমূল নেতাদের কাছে দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ শেষ ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। একই সাথে আগামী ৬ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নেতাকর্মীদের আসার আহ্বানও জানিয়েছেন মহাজোটের শরিক এই নেতা।

শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে তৃণমূল ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের যৌথসভায় এরশাদ বলেন, ‘পার্টিকে ক্ষমতায় দেখা আমার একমাত্র শেষ ইচ্ছা। মৃত্যুর আগে জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় এনে দিবা তোমরা (তৃণমূল কর্মীদের উদ্দেশ্যে)। এটাই আমার শেষ ইচ্ছে।’

সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হয় যৌথসভা। সভার শুরুতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ বলেন, ‘নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি শেষ, আর পেছনে ফেরার সময় নেই।’

জাতীয় নির্বাচনে ৩’শ আসনে প্রার্থী দেয়ার কথা বরাবরের মতো উল্লেখ করে এরশাদ বলেন, ‘নির্বাচনে জয় নিশ্চিত করতে হলে, প্রতিটি জেলা, থানা ও ইউনিয়নে সফল কমিটি ঘোষণা অতিদ্রুত দিতে হবে।’

এ সময় বর্তমান সরকারের কিছু অনিয়ম ও গাফিলতির কথা তুলে ধরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘দেশে গুম, খুন, ধর্ষণ, লুটপাট, দুর্নীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ধরনের অশান্তি থেকে মুক্তি পেতে জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় আনতে হবে।’

যৌথসভার সমাপনী বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘তোমাদের (তৃণমূল) কাছে আমার একটাই চাওয়া পার্টিকে ক্ষমতায় নাও। নিজেদের মধ্যে ঐক্য জোরালো করে মানুষের কাছে ছুটে যাও। আমাদের শাসনামলের কথা সবার কাছে পৌছে দাও।’

নেতার মাইক্রোফোন কেড়ে রওশনের রণসঙ্গীত

সকালে শুরু হওয়া তৃণমূল ও কেন্দ্রীয় নেতাদের যৌথসভায় বিভাগীয় এবং জেলা পর্যায়ের নেতাদের কথা বলার সুযোগ ছিল৷ যৌথসভা শেষ হবার ১০ মিনিট আগে মঞ্চে বরিশাল মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি গোলাম মুর্তুজা বক্তব্য দিতে আসেন। এ সময় তার পাশে আচমকা পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যানের রওশন এরশাদ এসে দাঁড়ান।

রওশন এরশাদ মঞ্চের কোনায় মাইক্রোফোন ডায়াসের কাছে আসার আগেই, এরশাদ বারবার চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে তৃণমূল নেতাদের সরে যাওয়ার ইঙ্গিত দিতে থাকেন।

এর মধ্যে পার্টির মহাসচির এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বরিশালের নেতার মাইক্রোফোন কেড়ে রওশন এরশাদকে বক্তব্য দিতে দেন।

রওশন এরশাদ বেশি সময় বক্তব্য রাখেননি। তিনি বক্তব্যের শুরুতে কাজী নজরুল ইসলামের রণসঙ্গীত চল চল চল… গাওয়া শুরু করেন। তারপর এই সঙ্গীতের মর্মার্থ ব্যাখ্যা করেন।

মন্ত্রী-এমপির সংখ্যা বাড়ানোর পরামর্শ তৃণমূলের

জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না- এমন অভিযোগ তুলেছেন কয়েকটি জেলার নেতারা। তাদের পরামর্শ সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে সবাইকে চাঙ্গা করতে হবে।

খুলনা জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শফিকুল ইসলাম বলেন, আগামী নির্বাচনে দলে মন্ত্রী-এমপির সংখ্যা বাড়াতে হবে। তা না হলে দলের মধ্যে অসংগতি দেখা দিবে।

তিনি বলেন, দলকে চাঙ্গা রাখলে হলে দলের মধ্যে ক্ষমতা বাড়াতে হবে। তাহলে আগামীতে জাতীয় পার্টি এককভাবে ক্ষমতায় আসতে পারবে।

সিলেট জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বয়ক ই আর চৌধুরী বলেন, ক্ষমতায় যেতে হলে নিজেদের মধ্যে ঐক্য বাড়াতে হবে।

নাটোর জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট তোফাজ্জল হোসেন বলেন, আগামী নির্বাচনে ৩শ’ আসনে লড়াই করতে হবে৷ দলের মধ্যে ক্ষমতা বাড়াতে হবে। তাহলে আমরা এককভাবে আবার ক্ষমতায় আসতে পারব৷

যৌথসভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

এছাড়া পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, পার্টির সিনিয়র কো চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ, কো চেয়ারম্যান জিএম কাদেরসহ প্রেসিডিয়াম সদস্যরা বক্তব্য রাখেন।