বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপরে তিস্তার পানি
প্রচণ্ড স্রোতে তিস্তা নদীর অববাহিকায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারি বর্ষণে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় তিস্তা পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হলেও রাত ৯টায় তা বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ও রাত সাড়ে ১১টায় বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
বিকেল ৩টা থেকে ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার (৫২ দশমিক ৬০ মিটার) ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহিত হয়ে ভাটিতে তীর বেগে ধাপিত হচ্ছে। উজানের ঢল সামাল দিতে খুলে রাখা হয়েছে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট। তিস্তার বন্যায় ডানতীরের দোহলপাড়া স্পারটির সামনের অংশের ১০ মিটার নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে।
ফলে নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলা ও উপজেলার প্রায় ২০টি চরগ্রাম হাঁটু থেকে কোমর পানিতে তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। এতে প্রায় ৫ হাজার পরিবার বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে।
এদিকে তিস্তার প্রবল স্রোতে ১৩টি পরিবারের বসতভিটা বিলীন হওয়ায় পরিবারগুলোকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হয়েছে। এ ছাড়া তিস্তা বিপদসীমায় চলে যাওয়া নদীর বিভিন্ন স্থানের বাঁধে আঘাত করছে। ফলে বাঁধগুলো হুমকির মুখে পড়েছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার তিস্তা অববাহিকার পূর্ব ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাঁপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী, গয়াবাড়ি ও জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা, ডাউয়াবাড়ি, শৌলমারী ও কৈমারী ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকার ২০টি চর ও গ্রামের পরিবারগুলো বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে ।
তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সর্তকীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, সোমবার বিকেল ৩টায় পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার নিচে প্রবাহিত হলেও ও রাত সাড়ে ১১টায় ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তবে তিস্তা পাড়ের মানুষজন পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওই হিসাব মানতে নারাজ। এলাকাবাসীর দাবি- তিস্তা নদীর পানি কম করে হলেও বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড অজ্ঞাত কারণে নদীর পানির সঠিক হিসাব প্রকাশ করছে না।
ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রভাষক আব্দুল লতিফ খান জানান, গত দুই দিনের চেয়ে উজানের ঢলের গতি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে এলাকার নিচু ও উঁচু স্থানে নদীর পানি প্রবেশ করেছে। চরগ্রাম গুলোর ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। ইতিমধ্যে তার এলাকার ১ হাজার ৪০ পরিবারের বসতবাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে।
ঝুনাগাছ চাঁপানী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান বলেন, ছাতুনামার চর, ফরেস্টের চর, সোনাখুলীর চর ও ভেন্ডাবাড়ি চরে দেড় হাজার পরিবারের বসতবাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে।
খালিশা চাঁপানী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান সরকার বলেন, পূর্ব বাইশ পুকুর ও ছোটখাতা মৌজার ৫ শতাধিক পরিবারের বসতবাড়িতে বন্যার পানি বয়ে যাচ্ছে। নদী সংলগ্ন বসবাসরত পরিবারগুলোকে সতর্ক অবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে।
টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহীন বলেন, তার এলাকার দক্ষিণ খড়িবাড়ি ও পূর্ব খড়িবাড়ি, একতার চর, টাবুর চর মৌজায় তিস্তার বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। ইতিমধ্যে সহস্রাধিক পরিবারের বসতবাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে।
খগাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম লিথন বলেন, কিসামত ছাতনাই মৌজার ৩ শতাধিক পরিবারের বসতবাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। প্রতিটি বাড়ির উঠানে হাঁটু পানি। তার ইউনিয়নে তিস্তার বন্যায় ডানতীরের দোহলপাড়া স্পারটির সামনের অংশের ১০ মিটার নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ডালিয়া পয়েন্টে সোমবার সন্ধ্যায় ৬টা হতে তিস্তার পানি বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। রাত ৮টায় আরও ২০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ও রাত সাড়ে ১১টায় আরও ৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রংপুর পওর সার্কেল-২ জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ বলেন, দোহলপাড়া স্পারটির সামনের অংশ নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার বিষয়টি মঙ্গলবার সরেজমিনে তদন্ত করে দ্রুত সময়ে মেরামত করা হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন