সংলাপে প্রধানমন্ত্রীকে যা বলেছেন ড. কামাল
সংলাপে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে যথাযথভাবে আশ্বস্ত করলে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা এবং নির্বাচন কমিশন শক্তিশালীকরণে সংবিধানসম্মত একাধিক নির্দিষ্ট প্রস্তাব দ্রুততম সময়ে পেশ করা হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেছিলেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ১৪ দলের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে ড. কামাল হোসেন এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জাতীয় ঐক্য ও জাতীয় মেলবন্ধনে (রিকনসিলিয়েশন) ভূমিকা রাখারও আহ্বান জানিয়েছিলেন ড. কামাল হোসেন। প্রধানমন্ত্রীকে তিনি বলেন, দেশ পরিচালনার যে ঐতিহাসিক সুযোগ আপনি পেয়েছেন, সেখানে জাতীয় ঐক্য এবং রিকনসিলিয়েশন বা মেলবন্ধনে কতটা কার্যকর ভূমিকা আপনি রেখে যেতে পারছেন, আগামী দিনের মানুষ যুগ যুগ ধরে সেটাই মনে রাখবে।
অবশ্য সংলাপ শেষে গতকাল সাংবাদিকদের ড. কামাল বলেছেন, সংলাপে বিশেষ কোনো সমাধান তাঁরা পাননি। আর ঐক্যফ্রন্টের শরিক বিএনপি বলছে, তারা সন্তুষ্ট হতে পারেনি। পরে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ারও ঘোষণা দেয় ঐক্যফ্রন্ট। নতুন করে আর আলোচনার দরকার আছে কি না বা সংলাপে কী পেলেন, এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঐক্যফ্রন্টের নেতা ও গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি বলেন, ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটি আছে। সেখানে আলোচনা হবে। এরপর শীর্ষ নেতারা বসে পরবর্তী করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
গতকালের সংলাপে ড. কামাল বলেন, ‘জীবন সায়াহ্নে বঙ্গবন্ধুর একজন ক্ষুদ্র অনুসারী হিসেবে, আমি বিশ্বাস করি, জাতীয় মেলবন্ধনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি আনা সম্ভব হলে তার ইতিবাচক প্রভাব জনপ্রশাসন ও বিচার বিভাগসহ সবকিছুর ওপরই পড়বে। বাংলাদেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে আপনি একটি সফল সংলাপের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে পারেন। আর সেটা সম্ভব হলে আপনার এই উদারনৈতিক অবদানটিই বিশ্বের সবচেয়ে বড়মাপের নেতাদের মতো আপনাকে অমর করে রাখবে। এই লক্ষ্য অর্জনে আপনি সম্ভব সব ধরনের পদক্ষেপ নিন। জাতির ইতিহাসে আপনার নাম সোনার হরফে লেখা থাকবে।’
সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ, সংবিধানের এই ঘোষণার সঙ্গে বাক, ব্যক্তি, সংবাদপত্র ও সমাবেশের স্বাধীনতা এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ধারণা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অবাধ নির্বাচন নিশ্চিত করাই হলো জনগণের মালিকানা নিশ্চিত হওয়া। তবে আমরা অত্যন্ত উৎকণ্ঠার সঙ্গে লক্ষ করছি, ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থে নির্বিচারে গ্রেপ্তার, গায়েবি ও হয়রানিমূলক হাজার হাজার মামলা দায়ের, নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত প্রাণনাশ এবং অন্যান্য বহুবিধ অন্যায় ও অবিচার ঘটে চলছে। এসব অনতিবিলম্বে বন্ধ করার ব্যাপারে সরকারের আশু ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য এটা অন্যতম ও অবিচ্ছেদ্য পূর্বশর্ত।’
গণফোরামের সভাপতি বলেন, ‘গণতন্ত্রকে বলা হয় আর্ট অব কম্প্রোমাইজ। বাংলাদেশের বিরোধপূর্ণ রাজনৈতিক ইতিহাসে সংলাপ আনুষ্ঠানিকভাবে সফল না হলেও বিভিন্ন সময়ে জাতীয় স্বার্থে সমঝোতা বা একটা আপসমূলক অবস্থায় পৌঁছানোর নজির আমাদের আছে। বিএনপি প্রথমে না চাইলেও আপনার নেতৃত্বাধীন জনগণের আন্দোলনের মুখে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার সংবিধানে যুক্ত করেছিল। নির্বাচনকেন্দ্রিক দাবিদাওয়া আদায়ের সংগ্রামে ২০০৫ সালের ২২ নভেম্বরে পল্টনের ঐতিহাসিক মহাসমাবেশে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ১১ দল, জাসদ, ন্যাপ নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কারের যে লিখিত রূপরেখা দিয়েছিল, তার মধ্যকার কিছু মৌলিক বিষয় আজও প্রাসঙ্গিক রয়ে গেছে।’
সংলাপে ড. কামাল বলেন, ‘আপনি (প্রধানমন্ত্রী) সংবিধানসম্মত সমাধানে আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন, তাকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু এটাও আপনার অজানা নয় যে, কোনো বিষয়ে সংবিধান সংশোধনের দরকার পড়লে তা নিয়ে আলোচনা করাও সংবিধানসম্মত। কারণ সংবিধান সংশোধনের বিধান সংবিধানেরই অংশ। তবে বিরাজমান পরিস্থিতিতে সংকট থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে সংবিধানসম্মত একাধিক পথ খোলা আছে বলে আমরা মনে করি। আমরা আমাদের সাত দফার পাশাপাশি ১৩তম সংশোধনী মামলায় সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া রায়ের আলোকে, বিশেষ করে দশম ও একাদশ নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে করা, নির্বাচনের ৪২ দিন আগে সংসদ ভেঙে দিয়ে একটি ছোট মন্ত্রিসভা গঠনসহ বিভিন্ন নির্দেশনা, ২০১৩ সালে বিরোধী দলকে নির্বাচনী মন্ত্রিসভায় স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ একাধিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রদানে আপনার প্রস্তাবের প্রতি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই।’
ড. কামাল বলেন, সংবিধানের ১২৩ (৩) অনুচ্ছেদের খ উপদফায় সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন করার বিধান রয়েছে। সুতরাং সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন করা সংবিধানসম্মত এবং তা ওয়েস্টমিনস্টার মডেলের সংসদীয় রীতি মেনে চলা বিশ্বের সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের অনুশীলনের সঙ্গেও সংগতিপূর্ণ। বাংলাদেশেও ২০১৪ সালের নির্বাচনটি ব্যতিরেকে এর আগের নয়টি সংসদ নির্বাচন সংসদ ভেঙে দেওয়া অবস্থায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৭৩ সালে গণপরিষদ ভেঙে দিয়েই প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়।
বঙ্গবন্ধু সরকারের এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণ ভোট দেওয়ার পরিবেশ চায়, অবাধে ভোট দিতে চায়। আজ যুব দিবস। তাই বিশেষভাবে আমাদের এটা মনে রাখতে হবে যে, ইতিমধ্যে মোট ভোটারের অধিকাংশ যুবক। গত এক দশকেই সোয়া দুই কোটি নতুন ভোটার হয়েছে। আমরা তাদের হতাশ করতে চাই না।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন