লাশ হয়ে গেলেও আমার আঙুল এসে ভোট দিবে : ড. কামাল
যা কিছু হয়ে যাক, নির্বাচন বর্জন করবেন না বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেছেন, ‘সরকার ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেও নির্বাচন থেকে আমাদের সরাতে পারবে না। মরে গেলেও আমরা নির্বাচন বর্জন করব না। আমি যদি লাশও হয়ে যাই আমার আঙুল এসে ভোট দিবে।’
সোমবার নির্বাচনী সহিংসতা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে বৈঠক করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। বৈঠক শেষে বেরিয়ে এসব কথা বলেন ড. কামাল হোসেন।
গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘ইলেকশন হতে হবে। তারা (আওয়ামী লীগ) যদি চায় এসব জঘন্য ধরনের আক্রমণ করে আবেগে আমরা নির্বাচন করব না। এটা আমরা করব না। আমার লাশও করবে না। আমরা উনাদের (ইসি) তথ্য দিয়ে দুঃখপ্রকাশ করে বললাম, পুরো দেশে উত্তর-দক্ষিণ সব জায়গা থেকে অভিযোগগুলো পেয়েছি। পেশিশক্তি নিয়ে প্রার্থীদের ওপর আক্রমণ হচ্ছে। যারা নির্বাচনে কাজে নেমেছে তাদের ওপরই আক্রমণ হচ্ছে। কেউ পোস্টার লাগতে পারছেন না। বক্তব্য রাখতে পারছেন না। বিভিন্ন জায়গায় একটা ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করা হচ্ছে। যারা নির্বাচন করার জন্য এগিয়ে এসেছেন তাদের নিরুৎসাহিত করার জন্য এসব করা হচ্ছে। এটা খুব ভয়াবহ।’
প্রবীণ আইনজীবী ড. কামাল বলেন, ‘আমার তো ৫৫ বছরের অভিজ্ঞতা আছে। বঙ্গবন্ধুর নির্বাচনী এজেন্ট ছিলাম ৭০-এ। তখন থেকে এখন সব নির্বাচনেই ভালো-মন্দ দেখেছি। কিন্তু এ অবস্থা কোনো দিন দেখি নাই। যারা প্রার্থী, আমরা তাদের লিখিত তালিকা দিয়েছি। বেশ কিছু কেস যেখানে সময়-স্থানের ছবি দিয়েছি। গুলিবিদ্ধ ব্যারিস্টার খোকন, রোমানার ছবি দিয়েছি। একজন দুই চোখ হারিয়েছেন, সেই মহিলার ছবি দিয়েছি। আ স ম আবদুর রবের ভাঙা গাড়ির ছবিও আমরা দিয়েছি।’
ড. কামাল বলেন, ‘এসব ঘটনার কিছু কিছুতে সিইসি (প্রধান নির্বাচন কমিশনার) বিব্রত হয়েছেন। বিব্রতবোধ করা যথেষ্ট নয়। কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হয়। আমরা তাদের বলেছি, এখনই আপনারা ইনকোয়ারি চান, একদিনের মধ্যে রিপোর্ট নেন, পদক্ষেপ নেন যাতে বুঝতে পারি নির্বাচন কমিশন দেশকে মুক্ত করতে চায়। যাতে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের ন্যূনতম পরিবেশ আমরা পাই।’
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ এই নেতা বলেন, ‘এক দলের পোস্টার ছাড়া অন্য কোনো দলের পোস্টার দেখা যায় না। এটা আমি জীবনে দেখিনি। শুধু এক দলের পোস্টার থাকে, অন্য দল মাঠে নামতে পারে না। আমি যতদিন বেঁচে থাকি এ কথাগুলো বলে যাব। আপনাদের সামনে বলব, মানুষের সামনে বলব। প্রতিকার দাবি করব। মানুষের ভোটাধিকারের ক্ষমতার কথা বলব। লাখ লাখ শহীদ সেই ক্ষমতা দিয়ে গেছেন, সেটা থেকে যেন জনগণ বঞ্চিত না হয়। এখন যে প্রক্রিয়া চলছে তাতে বঞ্চিত করার প্রক্রিয়া অব্যাহত। এটি দ্রুত বন্ধ করতে হবে। ইসি সেই ক্ষমতা রাখে।’
ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘৩০ তারিখের (৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে) পর ইনকোয়ারির কোনো অর্থ থাকবে না। একদিনের মধ্যে রিপোর্ট চেয়ে পরশুর মধ্যে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত সেটা আমরা মনে করি। সংবিধান অনুযায়ী ইসির ক্ষমতা আছে কিন্তু উনারা প্রয়োগ করছেন না।’
এদিকে, সেনাবাহিনী মোতায়েন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘আজ থেকেই আমরা সেনাবাহিনী মোতায়েনের কথা বলেছি।’
আজকের বৈঠকে ইসির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদাসহ অন্য কমিশনাররা। এছাড়াও ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে ছিলেন জোটের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী, জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও ড. আবদুল মঈন খান, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ।
সারা দেশের ৩০টি জেলায় বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীদের প্রচারণায় বাধা ও হামলা- মামলার লিখিত অভিযোগ ইসিকে দিয়েছেন জোটটির নেতারা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন