‘আয়াতুল কুরসি’ তাবিজ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে কি?

বদজিন-ভুত কিংবা শয়তানের আক্রমণ থেকে নিজেকে সুরক্ষায় ‌আয়াতুল কুরসি’র নিয়মিত আমল খুবই কার্যকরী। কিন্তু আয়াতুল কুরসির লিখিত তাবিজ ব্যবহার করা যাবে কি? এ সম্পর্কে ইসলামের দিকনির্দেশনাই বা কী?

অনেককেই বলতে শোনা যায় যে, তারা শয়তান কিংবা বদজিন বা ভুতের আক্রমণ থেকে বাঁচতে আয়াতুল কুরসি লিখিত তাবিজ হাতে কিংবা সোনা-রূপার চেইনসহ মাদুলিতে ভরে গলায় ব্যবহার করে থাকেন। আয়াতুল কুরসি লিখিত এ তাবিজ কি ওই ব্যক্তিকে শয়তানের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সক্ষম?

‘না’, আয়াতুল কুরসি তাবিজ হিসেবে গলায় কিংবা হাতে বেঁধে রাখায় দুষ্ট জিন ও শয়তান থেকে সুরক্ষায় ব্যবহার করা যাবে না। এভাবে ব্যবহার সম্পর্কে কুরআন-সুন্নাহর কোনো দিকনির্দেশনা নেই। বরং আয়াতুল কুরসির আমল না করে মাদুলি বানিয়ে হাতে কিংবা গলায় পরিধান এমটি ভুল বিশ্বাস। তবে এ আয়াতটির বিশেষ আমল সম্পর্কে হাদিসের একাধিক চমৎকার ফজিলতপূর্ণ দিকনির্দেশনা রয়েছে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুষ্ট জিন-ভুত ও শয়তানের আক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষায় মুমিন মুসলমানকে দিন ও রাতের একাধিক সময়ে আয়াতুল কুরসির (পড়ার) আমল করতে শিখিয়েছেন। আয়াতুল কুরসি পড়ায় এবং এর অর্থ অনুধাবনে রয়েছে দুনিয়া ও পরকালের একাধিক উপকারিতা।

আয়াতুল কুরসি কি?

কুরআনুল কারিমের সবচেয়ে বড় ও দ্বিতীয় সুরা ‘সুরা বাকারার’ ২৫৫তম আয়াতটি হলো ‘আয়াতুল কুরসি’। মর্যাদাবান এ আয়াতটি মহান আল্লাহর তাআলার প্রশাংসায় ভরপুর। আয়াতটিও অনেক বড়।

اللّهُ لاَ إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلاَ نَوْمٌ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الأَرْضِ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَاء وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ وَلاَ يَؤُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ

উচ্চারণ- আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম। লা তাঅ খুযুহু সিনাতুঁও ওয়া লা নাওম। লাহু মা ফিস্ সামাওয়াতি ওয়া মা ফিল আরদ্বি। মাং জাল্লাজি ইয়াশফাউ ইংদাহু ইল্লা বি-ইজনিহি। ইয়ালামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়া মা খালফাহুম, ওয়া লা ইউহিতুনা বিশাইয়্যিম্ মিন ইলমিহি ইল্লা বিমা শাআ ওয়াসিআ কুরসিইয়্যুহুস্ সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বি, ওয়া লা ইয়াউদুহু হিফজুহুমা ওয়া হুওয়াল ‘আলিয়্যুল আজিম।’ (উচ্চারণটি কোনো কুরআন বিশেষজ্ঞের কাছে বিশুদ্ধভাবে পড়ে নেয়া জরুরি)

অর্থ : (তিনিই) আল্লাহ, যিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং ঘুমও নয়। সবই তাঁর, আসমান ও জমিনের মধ্যে যা কিছু রয়েছে। কে আছ এমন- যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? (চোখের সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানের সীমা থেকে কোনো কিছুকেই তারা পরিবেষ্টিত করতে পারবে না, কিন্তু ‘হ্যাঁ’, তিনি যতটুকু ইচ্ছা করেন তা ছাড়া। সমগ্র আসমান এবং জমিনকে পরিবেষ্টিত করে আছে তাঁর সিংহাসন। আর সেগুলোকে ধারণ (নিয়ন্ত্রণ) করা তাঁর জন্য কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।’

মানুষের নিরাপত্তায় আয়াতুল কুরসি

> হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু একবার দেখতে পেলেন একজন ব্যক্তি সাদকার মাল চুরি করছে। তখন তিনি তার হাত ধরে বললেন, ‘আল্লাহর শপথ! আমি তোমাকে আল্লাহর রাসুলের কাছে নিয়ে যাব।’ তখন ওই ব্যক্তি বলল যে, সে খুব অভাবী আর তার অনেক প্রয়োজন। তাই দয়াবশত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে ছেড়ে দিলেন ।

পরদিন সকালে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আসার পর তিনি আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞাসা করলেন- ‘গতকাল অপরাধীকে কী করেছে?’

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু তখন তাকে ক্ষমা করার কথা বললেন ।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘অবশ্যই সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে আর সে আবারও আসবে।

এভাবে চোর পরপর ৩দিন সাদকার মাল চুরি করতে আসে। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুও তাকে প্রত্যেকবার ছেড়ে দেন। সর্বশেষ সে আয়াতুল কুরসির আমলের কথা বর্ণনা করে বলে-

আমি তোমাকে এমন কিছু বলে দেব যার মাধ্যমে আল্লাহ তোমাকে কল্যাণ দান করবেন। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু সেটা জানতে চাইলে চোর বলল-

‘রাতে যখন ঘুমাতে যাবে তখন আয়াতুল কুরসি (আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম) পড়ে ঘুমাবে তাহলে আল্লাহ তোমার জন্য একজন ফেরেশতাকে পাহারাদার নিযুক্ত করবেন। যে তোমার সঙ্গে থাকবে আর কোনো শয়তান সকাল পর্যন্ত তোমার কাছে আসতে পারবে না।’

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ঘটনা শুনে বললেন, ‘যদিও সে চরম মিথ্যাবাদী কিন্তু সে সত্য বলেছে।’ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞাসা করলেন- ‘তুমি কি জান সে কে?’ আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘না’। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন, ‘সে হচ্ছে শয়তান।’ (বুখারি)

> হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আয়াতুল কুরসি কুরআনের অন্যসব আয়াতের সর্দার বা নেতা। আয়াতটি যে ঘরে পড়া হবে, সে ঘর থেকে শয়তান বের হয়ে যাবে।’

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী আয়াতুল কুরসির নিয়মিত আমল করা। প্রত্যেক ফরজ নামাজের সালাম ফেরানোর পর আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াত করা। আর বিনিময়ে মহান আল্লাহ তাআলা দুনিয়ায় বদনজর থেকে নিরাপত্তা দান করবেন আর পরকালে জান্নাত দান করবেন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আয়াতুল কুরসি লিখিত তাজিব ব্যবহারের ভুল বিশ্বাস থেকে হেফাজত করুন। হাদিসে নির্দেশিত আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।