আল্লাহর যেসব নেয়ামত অস্বীকার করতে পারবে না মানুষ

মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় নেয়ামত হলো ‘স্বাধীনতা’। আল্লাহ তাআলাই মানুষকে স্বাধীন করে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। কর্ম সম্পাদনের স্বাধীনতা দান করেছেন। কোনো ব্যক্তি যদি কারো পরাধীনও হয়, সে ব্যক্তিও তার শারীরিক অঙ্গ পতঙ্গের স্বাধীনতার মতো মহান নেয়ামত ভোগ করেন। আল্লাহর এসব নেয়ামত কোনোভাবেই অস্বীকার করতে পারবে না মানুষ।

এভাবে স্বাধীনতা লাভের নেয়ামতের বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমের সুরা-রাহমানে একাধিকবার এদিকে ইঙ্গিত করেই প্রশ্ন রেখেছেন যে- তুমি তোমার রবের কোন কোন অবদানকে (নেয়ামতকে) অস্বীকার করবে?

স্বাধীন কিংবা পরাধীন ব্যক্তির জন্য তার হাত, পা, চোখ, জিহ্বা, ঠোঁট, কান ও নাকের মতো ইত্যাদি অঙ্গগুলো অনেক বড় নেয়ামত। আর তা ব্যবহারে মানুষ স্বাধীনতা লাভ করেছেন।

সুতরাং যারা এ সব অঙ্গগুলোকে মহান আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক কাজে লাগাবে, তারাই আল্লাহর কাছে সফলকাম হিসেবে সাব্যস্ত হবেন।

হাত ও পা দ্বারা সত্য ও ন্যায়ের পথা চলা, চোখকে ন্যয় ও সঠিক পথে পরিচালিত করা, ঠোঁট ও জিহ্বা দ্বারা আল্লাহর বিধানের কথাগুলো মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়াসহ প্রত্যেক অঙ্গগুলোর যথাযথ হক আদায় করা জরুরি।

আল্লাহর দেয়া চোখ দিয়ে দেখা, কান দিয়ে শোনা, প্রশান্তি লাভে ঘুমনো, প্রয়োজনে হাটা-চলা ও কথা বলা, শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণের ইত্যাদি স্বাধীনতা প্রতিটি ব্যক্তির একান্তই নিজের। আর এ সবই মানুষের জন্য মহান প্রভুর অনেক বড় নেয়ামত।’ যার শুকরিয়া আদায় করে শেষ করা যাবে না।

এ কথা সবারই জানা যে, মানুষের এসব অঙ্গগুলো দ্বারা মহান আল্লাহর নেয়ামতরাজি গুণেও শেষ করতে পারবে না। এ কথা ঘোষণা দিয়ে মহান আল্লাহ বলেন-

‘যদি তুমি মহান আল্লাহর দেয়া নেয়ামতগুলো গণনা করার ইচ্ছা কর তবে তা কখনো গণনা করে শেষ করতে পারবে না।’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৩৪)

এভাবে আল্লাহ তাআলা মানুষকে অগণিত অসংখ্য নেয়ামত প্রকাশ্যে এবং গোপনে দান করছেন। এমন অনেক নেয়ামত রয়েছে, যে নেয়ামতের কথা মানুষ কল্পনাও করতে পারে না। যা রয়েছে অপ্রকাশ্য। সে ঘোষণাও আল্লাহ তাআলা দিয়েছেন এভাবে-

‘তোমরা কি দেখ না! নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের (উপকারের) জন্য আসমানসমূহে ও জমিনে যা কিছু আছে তা নিয়োজিত করেছেন। আর তোমাদের প্রতি তাঁর প্রকাশ্য ও গোপন নেয়ামতকে ব্যাপক করে দিয়েছেন। (অথচ) মানুষের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহ সম্পর্কে তর্ক করে, জ্ঞান, হেদায়েত ও আলোদানকারী কিতাব (কুরান) ছাড়া।’ (সুরা লোকমান : আয়াত ২০)

সুতরাং মানুষের উচিত শুধুমাত্র প্রকাশ্য শারীরিক বড় অঙ্গগুলোর শুকরিয়া আদায় করা। এ অঙ্গগুলো নিয়ে চিন্তা গবেষণা করে তার বিধান পালনে নিজেদের নিয়োজিত করা।

আল্লাহ তাআলার সেরাদান হাত-পা, চোখ, কান, নাক, জিহ্বা, ঠোঁটসহ প্রতিটি অঙ্গকে স্বাধীনভাবে ব্যবহারের যে নেয়ামত দান করেছেন, তার শুকরিয়া স্বরূপ আল্লাহর বিধান পালন ও ইবাদত বন্দেগিতে নিজেদের নিয়োজিত করা ঈমানের একান্ত দাবি। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা সুরা যারিয়াতের ২০ ও ২১নং আয়াতে উল্লেখ করেছেন-

‘সুনিশ্চিত বিশ্বাসীদের জন্য জমিনে অনেক নিদর্শন রয়েছে। (এমনকি) তোমাদের নিজেদের মধ্যেও। তোমরা কি সেসব (নেয়ামত) দেখতে পাও না।’

আর এ কারণেই আল্লাহ তাআলা মানুষকে বার বার প্রশ্ন করেছেন-

সুতরাং (হে বান্দা!) তুমি তোমার প্রভুর কোন কোন নেয়ামতকে অস্বীকার করবে?

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে স্বাধীনতার মতো মহান নেয়ামত ভোগ করার পাশাপাশি কুরআন বিধি-বিধান স্বাধীনভাবে পালনের তাওফিক দান করুন। তাঁর সব নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে পরকালীন জীবনের চূড়ান্ত সফলতা লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।