স্ত্রী হত্যার কথা স্বীকার করেননি সাবেক এসপি বাবুল আক্তার, কারাগারে
চট্টগ্রামের বহুল আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে আদালতে হাজির করা হয়েছে।
পাঁচদিনের রিমান্ড শেষে সোমবার (১৭ মে) দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার জাহানের খাসকামরায় তাকে হাজির করে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
এসময় সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা স্ত্রী হত্যার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় কোনো জবাববন্দি দেননি। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
বাবুল আক্তার এর আগেও তার স্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। তবে সে সময় তিনি চীনে অবস্থান করায় সে পরিকল্পনা সফল হয়নি বলে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একাধিক কর্মকর্তা।
এর আগে, মিতু হত্যার অভিযোগে করা মামলায় বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১২ মে রিমান্ডে নেয় পিবিআই। রিমান্ড শুরুর প্রথম তিন দিন একদমই চুপ ছিলেন বাবুল আক্তার। তবে দু-একটি কথার উত্তর দিয়েছেন তিনি।
নিজের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত বলে পিবিআইকে জানিয়েছেন বাবুল।
মিতু হত্যা প্রসঙ্গে বারবার প্রশ্ন করা হলেও তেমন একটা কথা বলেননি। শুধু বলেছেন, সবই তো আপনারা জানেন। আমি আর কি বলব?
এদিকে, মিতু হত্যাকাণ্ডের কিলিং মিশনের প্রধান মুসাকে নিয়েই এখন রহস্য সৃষ্টি হয়েছে। সাবেক এসপি বাবুল আকতারের সোর্স মুসাকে দিয়েই স্ত্রী মিতুকে হত্যা করিয়েছে তথ্য নিশ্চিত করেছে পিবিআই।
মুসার স্ত্রীর দাবি, ২০১৬ সালেই মুসাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আর পুলিশ বলছে, মুসাকে তুলে নেয়া বা তাদের হেফাজতে রাখার কোনো ঘটনা ঘটেনি। তাই মিতু হত্যার পুরো জট খুলতে পিবিআই এখন মুসাকে খুঁজছে।
এর আগে, বাবুল আকতারকে প্রধান আসামি করে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় নতুন একটি মামলা দায়ের করেছেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন। মিতু হত্যা মামলায় এতদিন ধরে তার স্বামী ও সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আকতার বাদী ছিলেন। কিন্তু পুলিশের তদন্তে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বাবুল আকতারের সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার পর এখন প্রধান আসামি হয়েছেন তিনি।
মামলায় অভিযোগ করে মিতুর বাবা বলেন, বাবুল আকতারের সঙ্গে এক এনজিওকর্মীর পরকীয়া ছিল। এ কারণেই মিতুকে হত্যা করা হয়েছে।
২০১৬ সালের ৫ জুন ভোর সাড়ে ৫টা থেকে ৬টার মধ্যে জিইসি মোড়ের হোটেল নিরিবিলিতে দু’দফায় চা পান করেন বাবুল আকতারের সোর্স মুসা। ৬টা ৩২ মিনিটে মিতুকে হত্যা করেই আরো দুই সহযোগীকে নিয়ে মুসা মোটরসাইকেলযোগে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। আর সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়া মুসার অবস্থানেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিশ্চিত এই কিলিং মিশন মুসার পরিকল্পনায় হয়েছে। কিন্তু ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মুসার কোনো হদিস দিতে পারেনি।
মুসার স্ত্রী পান্না আক্তার বলেন, বাবুল আকতারকে যেহেতু গ্রেপ্তার করা হয়েছে, আশা করি আমার স্বামীকেও আদালতে হাজির করা হবে। আমিও চাই যদি আমার স্বামী এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকে, নিজে বা অন্যের নির্দেশে এটা করে থাকে তাহলে অবশ্যই তার শাস্তি হোক।
পান্না আক্তার জানান, ২০১৬ সালের ২২ জুন তার সামনে থেকে চট্টগ্রামের কাঠগড় তিন রাস্তার মোড় থেকে মুসাকে গ্রেপ্তার করা হয়। নেজাম উদ্দিন (বর্তমান কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) মুসাকে হাতকড়া পরিয়ে পিকআপে তুলেছিলে বলেও জানান পান্না আক্তার।
মূলত পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে চট্টগ্রামে অবস্থানের সময় মুসা ছিল বাবুল আকতারের বিশ্বস্ত সোর্স। বাবুল আকতারের বাসায় বাজারও করে দিত মুসা। এমনকি পিবিআইয়ের তদন্ত উঠে এসেছে কিলিং মিশনের ৩ লাখ টাকা সাইফুল নামে এক বন্ধুর মাধ্যমে মুসার কাছে পৌঁছে দিয়েছিল বাবুল আকতার। তবে পুলিশ কর্মকর্তারা মুসা গ্রেপ্তার বা তুলে আনার বিষয়টি অস্বীকার করেছে।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন বলেন, তখন (২০১৬ সালে) কোনো থানায় বা ডিবিতে আমার পোস্টিং ছিল না। এই মামলায় তারা তদন্ত করেছে সেখানে আমি তদন্তকারী কর্মকর্তাও না বা কোনো সাক্ষীও না। আমি মুসাকে চিনিও না জানিও না। এ সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না।
পিবিআইয়ের তদন্তে উঠে এসেছে, বাবুল আকতারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, মুসা এক লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত পিস্তলটি কিনেছিল এহতেশামুল ভোলার কাছ থেকে। আর মোটর সাইকেল সরবরাহ করেছিল মুসার ভাই সাক্কু। পলাতক সাক্কুকে র্যাব বুধবার রাতে রাঙ্গুনীয়া থেকে গ্রেপ্তার করে। পরে আদালতে তোলা হলে তাকে চার দিনের রিমাণ্ড মঞ্জুর করেন বিচারক।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন