জোর করে স্বীকারোক্তি আদায় এটি মারাত্মক অপরাধ: হাইকোর্ট

জোর করে স্বীকারোক্তি আদায়ের ঘটনা তদন্ত কর্মকর্তার ভুল নয়, এটি মারাত্মক অপরাধ বলে জানিয়েছেন হাইকোর্ট।

রোববার বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।

আদালত ৬ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি ও আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন। একই সঙ্গে ওইদিন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক নয়ন কুমারকে সশরীরে হাইকোর্টে হাজির থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এর আগে ১১ আগস্ট একই বেঞ্চ এক আদেশে সংশি্লষ্ট মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা (সারিয়াকান্দি থানার সাবেক উপপরিদর্শক, বর্তমানে নাটোরে সিআইডির পরিদর্শক) নয়ন কুমার এবং বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা বগুড়ার পিবিআই-এর উপপরিদর্শক মনসুর আলীকে মামলার নথি (সিডি) নিয়ে হাজির থাকতে বলা হয়। এ আদেশে তারা উপস্থিত ছিলেন।

এর মধ্যে নয়ন কুমার লিখিত আবেদন দিয়ে তদন্তে ভুলের জন্য আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চান। তার আবেদন উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল। এ সময় আদালত উলি্লখিত মন্তব্য করেন।

বগুড়ার সারিয়াকান্দি থানার কাটাখালী গ্রামের মহিদুল ইসলামের ৮ বছরের ছেলেকে হত্যা এবং ওই ঘটনায় তারই ১২ বছরের আরেক ছেলেকে গ্রেফতার করে স্বীকারোক্তি আদায়ের ঘটনা নিয়ে পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদন নিয়ে সুপ্রিমকোর্টের ৫ আইনজীবীর করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন হাইকোর্ট।

আদালতে আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী। এ সময় আদালত কক্ষে প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা নয়ন কুমার উপস্থিত ছিলেন।

এরও আগে ২৯ জুন ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে তলব করে আদেশ দিয়েছিলেন আদালত। ৩ আগস্ট তাদের হাজির হওয়ার জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু লকডাউনের কারণে ওইদিন আদালতে স্বাভাবিক বিচার কাজ বন্ধ ছিল। এ কারণে ওইদিন শুনানি হয়নি। এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তী আদেশ ও শুনানির জন্য ২২ আগস্ট দিন ধার্য করা হয়।

১১ জুন ‘বিয়ারিং দ্য আনবিয়ারেবল’ শিরোনামে একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে মামলায় শিশু আদালতের কার্যক্রম চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিমকোর্টের ৫ আইনজীবী হাইকোর্টে আবেদন করেন। আবেদনে পুলিশের দুই কর্মকর্তাকে উচ্চ আদালতে ডাকা হলো।

জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৫ আগস্ট ৮ বছরের শিশুর মরদেহ উদ্ধারের একদিন পর বগুড়ার সারিয়াকান্দি থানায় মামলা করেন ওই শিশুর বাবা মহিদুল ইসলাম। পুলিশ ওই বছরের ২৯ নভেম্বর বাদীর ১২ বছরের ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায়। পরদিন বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাকে হাজির করা হয়। সেখানেই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় সে।

বাবা-মা ছোট ভাইকে তার চেয়ে বেশি ভালোবাসায় তাকে খুন করেছে বলে ম্যাজিস্ট্রেটকে জানায় বড় ছেলে। পরে আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার কারণে। কিন্তু সন্দেহভাজন হিসাবে প্রতিটি শুনানিতেই আদালতে উপস্থিত থাকতে হয়েছে ওই শিশুকে।

মহিতুলের অভিযোগ, খুনিরা প্রভাবশালী। পুলিশ তাদের কাছ থেকে ঘুস নিয়ে স্বীকারোক্তি দিতে বড় ছেলেকে বাধ্য করেছে।

পরে প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা নয়ন কুমার বড় ভাইকে একমাত্র আসামি দেখিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। কিন্তু মহিদুল ইসলাম এতে নারাজি দিলে ২০১৭ সালে পুলিশ বু্যরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) মামলাটি তদনে্তর দায়িত্ব দেন আদালত।

পিবিআই চার বছরে তদন্ত শেষে বড় ছেলেকে নির্দোষ হিসাবে চিহ্নিত করে।

এছাড়া হত্যার ঘটনায় অন্য দুইজনকে গ্রেফতার করে পিবিআই। এ অবস্থায় এসআই মনসুর আলী ১২ বছর বয়সি বড় ভাইকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।