গুঞ্জনের পর এতো দ্রুত গঠন করার পিছনে ছাত্রদলের কমিটি!
বিএনপির ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি এত দ্রুত গঠন করা হবে— এ বিষয়টি সপ্তাহখানেক আগেও কেউ টের পাননি।
গত ১২ এপ্রিল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে ছাত্রদল নেতাদের মতবিনিময়ের পর এ নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়।
কিন্তু হঠাৎ কেন এতো দ্রুত ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দেওয়া হলো তা নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা চলছে সংগঠনটির ভেতর-বাইরে।
২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর গোপন ভোটে ফজলুর রহমান খোকন সভাপতি ও ইকবাল হোসেন শ্যামল সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরের বছরের ২২ ডিসেম্বর তারা ৬০ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করেন। এর পর থেকে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার দাবি উঠলেও আড়াই বছরেও দায়িত্বে থাকাবস্থায় তা করতে ব্যর্থ হন বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
হঠাৎ কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি করার নেপথ্যে আরও কিছু কারণ আছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক।
তারা জানান, ভোটে নির্বাচিত হলেও সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল দক্ষ ও সাংগঠনিক নেতার পরিচয় দিতে পারেননি।
সারা দেশের সাংগঠনিক জেলা শাখাসহ ইউনিট কমিটি গঠনে তাদের বিরুদ্ধে অনিয়মের সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ পেয়েছেন দলের হাইকমান্ড।
সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে, সদ্য বিলুপ্ত সাধারণ সম্পাদক শ্যামলের বিরুদ্ধে। কথিত তৃতীয় শক্তির সঙ্গে উত্তরায় কয়েকটি বৈঠকে অংশ নেওয়ার সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে।
এ ছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে শ্যামলের একটি বক্তব্যের অডিও সম্প্রতি তাকে পাঠানো হয়। তদন্ত করে তার সত্যতাও মিলেছে।
এর পরই ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক তারেক রহমান ছাত্রদলের কমিটি ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, আগের কমিটির সভাপতি ফজলুর রহমান খোকনের বিরুদ্ধে কমিটি গঠনে কিছু অনিয়মের অভিযোগ ছাড়া তেমন কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলের বিরুদ্ধে যে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে তাতে তার ভবিষ্যতে অন্য কোনো সংগঠনে কিংবা বিএনপিতে জায়গা হবে কিনা সন্দেহ রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল বলেন, উত্তরায় বৈঠক, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বক্তব্যের অভিযোগ সত্য নয়। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি হয়েছে— এটিই স্বাভাবিক। আর যে কোনো কমিটি হওয়ার আগে নানা ধরনের অভিযোগ ওঠে, যার সঙ্গে বাস্তবের মিল থাকে না।
রোববার কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে সভাপতি এবং সাইফ মাহমুদ জুয়েলকে সাধারণ সম্পাদক করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ‘সুপার ফাইভ’ কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়।
শ্রাবণ আগের কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি পদে ছিলেন। তার বাড়ি যশোর জেলায়; বাবা আওয়ামী লীগ নেতা। পরিবারের সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
আর নতুন সাধারণ সম্পাদক জুয়েল আগের কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। বাড়ি বরিশাল জেলায়। সংগঠনটির শীর্ষ এ দুই নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র।
ঘোষিত সুপার ফাইভের অন্যরা হলেন— সিনিয়র সহসভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছেন আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া।
নতুন কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি রাশেদ আগের কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক ছিলেন, বাড়ি নরসিংদী।
সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক, বাড়ি ময়মনসিংহ।
আর সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াহইয়া আগের কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক ছিলেন, বাড়ি বান্দরবন জেলায়।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত কমিটি ঘোষণার বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এর আগে গত ১২ এপ্রিল ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মতবিনিময় হয়। ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সব নেতাদের সর্বসম্মতিক্রমে ছাত্রদলের গঠন-পুনর্গঠন বিষয়ে যাবতীয় ক্ষমতা সংগঠনের অভিভাবক তারেক রহমানের ওপর অর্পণ করেন। তারেক রহমান ছাত্রদলের বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন আংশিক কমিটি মনোনীত করেছেন।
এদিকে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা জানান, এবারই প্রথম ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণার পর কোনো বিদ্রোহ হয়নি। সব পক্ষের নেতাকর্মী নতুন কমিটিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। কমিটি ঘোষণার পর পরই সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে মিছিলে-স্লোগানে মুখরিত করে তুলেন। এসময়ে নতুন কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
নেতাকর্মীরা জানান, নতুন কমিটির দায়িত্বশীল সব নেতা অভিজ্ঞ, ত্যাগী, যোগ্য ও পরীক্ষিত। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তাদের দিয়ে কমিটি গঠন করায় সংগঠনের গতি আরও বাড়বে। এবার ত্যাগীরা নতুন কমিটিতে জায়গা পাবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন।
তেজগাঁও কলেজের ছাত্রদল নেতা বেলাল হোসেন জানান, আমরা উচ্ছ্বসিত। সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা সবাই ত্যাগী নেতা। দলের একনিষ্ঠ হিসেবে তাদের মূল্যায়ন করা হয়েছে।
ছাত্রদলের নতুন সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ বলেন, ছাত্রদলের অভিভাবক যে দায়িত্ব দিয়েছেন, তা পবিত্র আমানত হিসেবে নিয়েছি আমরা। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে সর্বোচ্চ কাজ করব। আগামী দিনে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ছাত্রদল সামনে থেকে তা সফল করবে।
সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল বলেন, আমার ওপর আস্থা রাখায় দেশনায়ক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে অভিনন্দন জানাই। আমি তার আস্থার প্রতিদান দেব।
তিনি বলেন, আগামীর ছাত্রদল হবে জিয়া পরিবারের বিশ্বস্ত হাতিয়ার, আগামীর ছাত্রদল হবে এ দেশের গণমানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়া ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রধান হাতিয়ার।
সৌজন্যে:যুগান্তর
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন