বিএনপির সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় মঞ্জু-সাক্কুরা

দ্বন্দ্ব-বিভাজন মিটিয়ে দলকে আরও শক্তিশালী করতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে বিএনপি। এরই অংশ হিসাবে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কৃত দুই শতাধিক নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ইতোমধ্যে তারা ভুল স্বীকার করে কেন্দ্রীয় দপ্তরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেছেন।

সূত্র জানিয়েছে, বিএনপি থেকে বহিষ্কৃতদের মধ্যে অধিকাংশই সিটি করপেরেশনসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কেন্দ্রীয় নির্দেশ অমান্য করে অংশ নিয়েছিলেন। দায়িত্বশীল নেতারা জানান, সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু হয়েছে। আবার জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপিকে নিয়ে নানা ষড়যন্ত্রও থেমে নেই।

এমন পরিস্থিতিতে বৃহত্তর স্বার্থে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের চিহ্নিত করে তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য সিনিয়র নেতারা হাইকমান্ডকে পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ প্রত্যাহার করা না হলে এসব নেতা সক্রিয় হতে পারছেন না।

বহিষ্কৃত অনেক নেতা আছেন, যারা স্থানীয়ভাবে ব্যাপক জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী, তাদের দলে ফিরিয়ে আনা হলে আন্দোলন আরও গতিশীল হবে।

বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ধাপে ধাপে দুই শতাধিক নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হবে। এই তালিকায় খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগর বিএনপি’র সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু, কুমিল্লার সাবেক সিটি মেয়র মনিরুল ইসলাম সাক্কুসহ বেশ কয়েকজন নেতা রয়েছেন।

সর্বশেষ সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও বহিষ্কৃতদের দলে ফেরানোর বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।

গত ৫ অক্টোবর কুমিল্লার সুয়াগাজীতে রোডমার্চের পথসভায় সাক্কুর কর্মী-সমর্থকরা শোডাউন করেন। সেখানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গাড়ির গ্লাস নামিয়ে সাক্কুর মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। এ ঘটনাটিকে দলে ফেরানোর ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন সাক্কুর অনুসারীরা।

ওদিকে ১লা অক্টোবর খুলনা বিভাগীয় রোডমার্চের সমাপনী সমাবেশে ব্যাপক শোডাউন করেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু। এ সময় তার অনুসারীরা বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে নানা স্লোগান দেন।

দল থেকে অব্যাহতির পরও নজরুল ইসলাম মঞ্জু খুলনায় সমাবেশসহ বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচিতে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে অংশ নিচ্ছেন।

২০১৯ সালে ১৬ই জানুয়ারি বর্তমান সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপির হাইকমান্ড। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় সিটি ও পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ ও ইউপি নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হয়ে বহিষ্কৃত হন সহস্রাধিক নেতা।

দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে গাজীপুরের সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী হওয়ায় বিএনপি’র ৩৩ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে ১৭ জন কাউন্সিলর পদে বিজয়ী হন। বিজয়ী ১৭ জনসহ ২০ নেতা আবেদন করেছেন। এ ছাড়া সিলেট, বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন সিটি ও পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী হয়ে বহিষ্কৃত হন দুই শতাধিক নেতা।

বহিষ্কৃত এসব নেতা দলীয় ফোরামে ক্ষমা চেয়ে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের আবেদন করেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তরে এমন আবেদনের স্তূপ জমা হয়।

এদিকে যারা আবেদন করেছেন তারা প্রায় প্রতিদিনই নয়াপল্টন কার্যালয়ে যোগাযোগ করছেন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে। বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন।

জানা গেছে, ভুল স্বীকার করে নয়াপল্টন কার্যালয়ে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করা নেতাদের তালিকা তৈরির নির্দেশনা দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে বহিষ্কৃতদের আবেদন যাচাই-বাছাই করে দুই শতাধিক নেতার তালিকা করা হয়েছে। এ তালিকা দলের হাইকমান্ডের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিএনপি’র নীতি-নির্ধারণী ফোরামে আলোচনার পরেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে বহিষ্কৃত অনেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেছেন। তাদের দলে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্যরাও একমত। যা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে জানানো হয়েছে। আশা করছি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার শুরু হবে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, আমরা মনে করি যারা পরীক্ষিত, আবেগের বশবর্তী হয়ে কোনো ভুল করেছে, তারা যদি এখন সংশোধিত হয়ে আসে এতে করে দলের শক্তি ভারসাম্যের সৃষ্টি হয়। এজন্য তাদের আগ্রহের ভিত্তিতে দলেরও অগ্রসর হওয়া উচিত।
সূত্র: যুগান্তর