সাতক্ষীরায় খেজুরের রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুত শুরু, আসছে পিঠার মৌসুম

সাতক্ষীরায় খেজুর গাছ থেকে রস আহরণের জন্য গাছ প্রস্তুত শুরু করছেন গাছিরা। আর অন্যদিকে মা-চাচীরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন পিঠাপুলি, ক্ষীর, পায়েস তৈরির চালের গুড়া তৈরিতে। যদিও পূর্বের মত গ্রাম্য পরিবেশে তেমনটা আর লক্ষ্য করা যায় না।

শীত মৌসুমের অন্যতম প্রধান আকর্ষন হচ্ছে খেজুরের রস আর ক্ষীর, পায়েস, নানান রকম ও নামের পিঠা পুলি। শীতের সকালের জিরান রসের স্বাদ নেয়ার মজাই আলাদা। তবে পূর্বের ন্যায় এখন আর চোখে পড়ে না মাঠ কি মাঠজুড়ে খেজুর গাছের বাগান। শীতের সকালে দল বেধে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ এবং বাড়িতে এনে সবাই মিলে সকালের টাটকা জিরান রস খাওয়ার মজা বোধ হয় ভুলে যাওয়ার মত নয়।

ইতোমধ্যে শীতের আবহাওয়া শুরু হয়ে গেছে। শীত মৌসুমের শুরুতেই বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, গ্রামের প্রত্যেকটি মাঠে ও বসত বাড়ির আঙিনায় গাছিরা দা-খুমি নিয়ে ছুটছেন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত। গাছ গুলো প্রস্তুত করছেন রস গ্রহনের জন্য।

খেজুরের গাছ থেকে রস সংগ্রহের লক্ষ্যে কাজ করা কয়েকজন গাছী জানান, ‘রস গ্রহনের জন্য সম্পূর্ন প্রস্তুত করতে প্রথমে গাছের উপরিভাগের এক সাইটের পাতা তথা বেল্লি কাটা হয়। এরপর কয়েকটি ধাপে খেজুর গাছের উপরিভাগের এক পাশে চাঁচ দিতে হয়। কয়েকদিন অন্তর অন্তর সামান্য পরিমানে চাঁচ ও চোখ আকৃতির কাটার পর রস আসা শুরু করে। তখন সেখানে সরু আকৃতির বাঁশের কুঞ্চির খিলিন দেয়া হয়। সেই খিলিন দিয়ে রস টপ টপ করে পড়ে থাকে। খিলিনের নিচে ভাঁড়, কলস বা বোতল দিয়ে রস সংগ্রহ করা হয়। এভাবে কয়েকদিন পর পর গাছের কাটার স্থানে চাঁচ দিলে জিরিন বা টাকটা রস আসে প্রতিনিয়ত। চাঁচ দেয়ার পর প্রথম আসা রসকে জিরিন রস বলা হয়ে থাকে। এরপর যে রস আসে সেগুলো উলা রস বা অন্যান্য নামও বলা হয়ে থাকে।’

গাছীরা আরো জানান, ‘গাছ প্রতি গাছিরা নিচ্ছেন দেড়শত থেকে দুই শত টাকা। গত বছর এক ভাঁড় রস বিক্রি করা হয়েছিলো ২’শ থেকে সাড়ে ৩’শ টাকা পর্যন্ত।’

রবিউল ইসলাম নামের এক গাছী জানান, ‘রস জ্বাল দিয়ে গুড় ও পাটালি তৈরি করা হয়ে থাকে। গোটা শীত মৌসুমে খেজুরের রস যেমন সবার কাছে আকর্ষণীয় তেমনি বছরজুড়ে খেজুরের গুড় ও পাটালিও থাকে মুখোরোচক খাদ্য হিসেবে।’

সবমিলিয়ে সৃষ্টিকর্তার অপরূপ নিদর্শন হিসেবে খেজুরের রস সংগ্রহে কর্মযজ্ঞতা শুরু হয়ে গেছে গোটা সাতক্ষীরা জেলাজুড়ে। সেই সাথে শীতের নানান নামের ও রকমের পিঠা মৌসুমের সরঞ্জাম প্রস্তুত করতে দেখা যাচ্ছে এখানে-সেখানে।