‘এটি শুধু আমি বলছি না, সাংবাদিক বন্ধুরাও বলেন’

তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেছেন, গণমাধ্যমের সুরক্ষা, মুক্ত গণমাধ্যম এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সরকারের অঙ্গীকার আছে এবং থাকবে। তবে রাজনীতি ও বিভিন্ন পেশার মতো তথ্যের সঙ্গেও অপতথ্যের বিস্তৃতি আমরা দেখি। অপসাংবাদিকতাও দেখি। এটি শুধু আমি বলছি না, সাংবাদিক বন্ধুরাও বলেন।

শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সম্পাদক পরিষদের উদ্যোগে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস-২০২৪ উপলক্ষে ‘গ্রহের জন্য গণমাধ্যম: পরিবেশগত সংকট মোকাবিলায় সাংবাদিকতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, পরিবেশ সাংবাদিকতায় সরকার প্রণোদনা, উৎসাহ দিতে চায়। এখানে বিরোধের কোনো জায়গা দেখি না। সাংবাদিকরা সঠিক তথ্য দিয়ে পরিবেশ নিয়ে প্রতিবেদন করবেন, তাদের পূর্ণ সহায়তা দেওয়া হবে। কারণ এটা সরকারের কেন্দ্রীয় নীতির অংশ। জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে যারা এখানে সহায়তা করবেন, তারা আমার এবং মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পূর্ণাঙ্গ সমর্থন পাবেন। তৃণমূলে যতই কঠিন বাস্তবতা তৈরি করা হোক না কেন, তাদের সুরক্ষা এবং যত ধরনের সহযোগিতা লাগে, তা দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর সব সংগঠনের সঙ্গে বসেছি। সবাই একটা কথা বলেছে, যেসব গণমাধ্যমের রেজিস্ট্রেশন নেই সেগুলো বন্ধ করে দিতে।

মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, নোয়াব সভাপতি বলেছেন- মফস্বলে সাংবাদিকতা কঠিন। আমি একমত। ঢাকায় অনেক প্রোটেকশন পাওয়া যায়, মফস্বলে পাওয়া যায় না। সেটা নিশ্চিতে আমরা কাজ করব। একইসঙ্গে সেখানে আবার অপসাংবাদিকতার চর্চা অনেক হয়, পেশাদারিত্বের অভাব দেখা যায়। যেটি সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করে পেশাদার সাংবাদিকদের। তাই তারা বলছেন, এখানে শৃঙ্খলা আনা দরকার। সব সাংবাদিক সংগঠন বলছে, এখানে ন্যূনতম কোয়ালিফিকেশন থাকা দরকার। অন্য প্রোফেশনে আছে এখানে থাকবে না কেন। এখানে ডিসিপ্লিন আনা দরকার। অনেকে বলতে বলতে নিয়ন্ত্রণ, রেগুলেশনও বলে ফেলছেন। আমার শুনতে বিব্রত লাগছে। সাংবাদিকতায় নিয়ন্ত্রণ, রেগুলেশনে আমরা বিশ্বাস করি না।

তিনি বলেন, আমি কিছুদিন আগেও বলেছি, যেসব পত্রিকার অনলাইন আছে, অন্যান্য নিউজ পোর্টালসহ সবগুলোর তালিকা আমরা করছি। এর বাইরে অনেক পোর্টাল খোলা হয় অপসাংবাদিকতা করার জন্য। আমি বলেছি, সেগুলো লিস্ট করে মন্ত্রণালয়ে দিলে বাকিসব বিটিআরসিকে বলে বন্ধ করে দেব। আমি সাংবাদিক সংগঠনের দাবির প্রেক্ষিতে সেগুলো করছি। অর্থাৎ যেগুলো আনরেজিস্ট্রার্ড সেসব আমরা বন্ধ করে দেব। তবে যারা আবেদন করছে তাদেরগুলো অন রাখা হবে। কারণ অপেশাদারদের দায় কেন পেশাদার সাংবাদিকরা নেবে। এ ধরনের কিছু পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ডিসিপ্লিন তখনই দরকার হয়, যখন ইনডিসিপ্লিন থাকে। এখানে একটা কোয়ালিফিকেশনের দরকার। আবার গণমাধ্যমকর্মী আইন নিয়েও নানা কথা আছে। যে আইনটি সংসদে উঠেছিল, পরে স্ট্যান্ডিং কমিটিতে গিয়েছে। আমি আইনটি নিয়ে নতুন করে কাজ শুরু করবো। যতগুলো সাংবাদিক সংগঠন আছে সবার থেকে দু’জন করে প্রতিনিধি চাওয়া হয়েছে। প্রত্যেকে তাদের কথা বলবেন, সেটিকে পর্যালোচনা করে স্ট্যান্ডিং কমিটির মাধ্যমে সংসদে পাশ করাব। এ বিষয়গুলো আসলে মনে হয় আমাদের দেশে গণমাধ্যমমুক্ত শুধু নয়, উন্মুক্ত হয়ে আছে। এখানে যেহেতু কোনো রেগুলেশন নাই, তাই এটি উন্মুক্ত। সাংবাদিক বন্ধুরাই এখন বলছেন, এখানে শৃঙ্খলা দরকার। বিশৃঙ্খলা থাকার কারণেই শৃঙ্খলার কথা আসছে। তাই ওই বর্ডার লাইনটা একটু টানা দরকার।

সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম সভাপতিত্ব করেন। সাধারণ সম্পাদক ও বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন সংবাদপত্রের মালিকদের সংগঠন নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (নোয়াব) সভাপতি এ কে আজাদ। সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, ভোরের কাগজের সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, ইনকিলাবের সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান, দেশ রূপান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তাফা মামুনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সাংবাদিকরা।