বাগেরহাটে সংবাদ প্রকাশের পর আত্মসাতের টাকা ফেরৎ দিলেন সাবেক ইউএনও, টলশেড ও নির্মাণের কাজ শুরু
বাগেরহাটের শরণখোলার সাবেক ইউএনও মো. জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ না করে প্রকল্পের ১০লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তোলপাড় শুরু হয়েছে প্রশাসনে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে তার এই দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় উপর মহলের চাপের মুখে পড়েন তিনি। শেষমেশ সোমবার (৮ জুলাই) সকাল থেকে সেই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, সংবাদ প্রকাশের পর পাবনার সাঁথিয়া উপজেলায় বদলি হওয়া শরণখোলার সাবেক ইউএনও জাহিদুল ইসলাম আত্মসাতকৃত টাকা ফেরৎ পাঠিয়েছেন। সেই টাকায় উপজেলার ধানসাগর ইউনিয়নের রাজাপুর বাজারের টলশেড মেরামত ও সাউথখালী ইউনিয়নের ড্রেন নির্মাণের কাজ করা হচ্ছে। ইউএনও চাকরি বাঁচাতে তদন্তের আগেই তড়িঘড়ি করে কাজ শুরু করা হয়েছে।
তবে কে এই কাজ করাচ্ছেন বা কে তদারকি করছেন সেব্যাপারে প্রশাসন বা ঠিকাদার কেউই মুখ খুলছেন না।
সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম শরণখোলায় থাকাকালীন ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের আওতায় হাট বাজার রক্ষণাবেক্ষণের রাজস্ব খাতের ২৫ লাখ ৭০ হাজার টাকায় চারটি প্রকল্প গ্রহন করেছিলেন।
প্রকল্পগুলোর মধ্যে রায়েন্দা ইউনিয়নের রায়েন্দা বাজারের সবজি মার্কেটের নতুন টলশেড নির্মাণের জন্য ১৫ লাখ ৭০ হাজার টাকার দুটি প্রকল্প এবং খোন্তাকাটা ইউনিয়নের খোন্তাকাটা বাজারের ড্রেন নির্মাণে পাঁচ লাখ টাকা ও সাউথখালী ইউনিয়নের তাফালবাড়ি বাজারের ড্রেন নির্মাণে পাঁচ লাখ টাকার প্রকল্প।
পরবর্তীতে খোন্তাকাটা ইউনিয়নের ড্রেন নির্মাণের প্রকল্পটি গোপনে বাতিল করে সমপরিমান অর্থে ধানসাগর ইউনিয়নের রাজাপুর বাজারের দুটি টলশেড মেরামতের আলাদা প্রকল্প তৈরী করেন। এর পর চলতি বছরের (২০২৪) ১৫ জানুয়ারি হাট বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হিসেবে ইউএনও জাহিদুল ইসলাম একাই স্বাক্ষর করে রেজুলেশন তৈরী করে ওই প্রকল্প অনুমোদন দেখান। পরে দুটি প্রকল্পের ১০ লাখ টাকা কাজ না করেই উত্তোলন করে নিয়ে যান।
সোমবার দুপুরে সরেজমিনে উপজেলার ধানসাগর ইউনিয়নের রাজাপুর বাজারে গিয়ে দেখা যায় দুটি টলশেডের নষ্ট পিলা্ের সিমেন্ট-বালুর প্রলেপ দিচ্ছেন নির্মাণ শ্রমিকরা। আরেকটি টলশেডের পুরনো টিম খুলে ফেলা হয়েছে।
হঠাৎ করে কাজ শুরু হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে টলশেডের পাশের ব্যবসায়ী কামাল মুন্সী ও সঞ্জয় গাইন বলেন, সকাল থেকে দেখছি টলশেডের কাজ চলছে। কে করাচ্ছে তা জানি না। নির্মাণ মিস্ত্রি মো. আলামীন বলেন, আমাদেরকে ফয়সাল নামে একজন সাব ঠিকাদার কাজ করার জন্য চুক্তি করেছেন। তবে নির্মার্ণ মিস্ত্রি আলামীনের মাধ্যমে ফয়সাল নামের ওই সাব ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তিনি কথা বলতে জানি হননি।
সাউথখালী ইউনিয়নের তাফালবাড়ী বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজারের ড্রেন নির্মাণের জন্য মাটি কেটে লেক তৈরী করা হয়েছে। তবে কাজের দায়িত্বে থাকা কাউকে সেখানে পাওয়া যায়নি। বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ওমর সরদার বলেন, সকাল থেকে দেখি ২৫-৩০ জন শ্রমিক মাটি কাটা শুরু করেছেন। তারা (শ্রমিকরা) বলেন এখানে ড্রেন করা হবে। অথচ আমরা জানতামই না আমাদের বাজারে ড্রেন নির্মাণের কোনো প্রকল্প আছে। পত্রিকার সংবাদ প্রকাশের পর জেনেছি।
শুনেছি সাবেক ইউএনও জাহিদুল ইসলাম কাজ না করেই প্রকল্পের পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে চলে গেছেন। সংবাদ প্রকাশের সেই টাকা নাকি তিনি ফেরৎ দিয়েছেন।
সাউথখালী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু রাজ্জাক আকন বলেন, কে কাজ করছে। কার মাধ্যমে করানো হচ্ছে তা জানিনা। কেউ বলছেও না। মনে হচ্ছে যেনো জীন-পরীতে কাজ করছে। একজন ইউএনও প্রকল্পের কাজ না করে সব টাকা আত্মসাৎ করে এটা জানা ছিল না। আমি সরকারের কাছে এধরণের অসৎ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি জানাই।
সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইমরান হোসেন রাজিব বলেন, সকাল থেকে তাফালবাড়ী বাজারে ড্রেনের কাজ শুরু হয়েছে। ঠিকাদার অনিক গাজীকে দিয়ে এই কাজ করানো হচ্ছে শুনেছি।
ধানসাগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মইনুল ইসলাম টিপু বলেন, যদি কাজই করে থাকেন তাহলে এখন কিসের কাজ হচ্ছে। সাবেক ইউএনও জাহিদুল ইসলামের এমন জালিয়াতির শাস্তি হওয়া দরকার।
এব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী মো. ফেরদৌস আলম বলেন, শুনেছি কাজ শুরু হয়েছে। কে করছে তা আমার জানা নেই।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহা. খালিদ হোসেন বলেন, কাজ না করে প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করলে ইউএনও জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন