কলাগাছের সুতা থেকে তৈরি হলো শাড়ি
কলাগাছের তন্তু থেকে সুতা আর সেই সুতা দিয়ে বিভিন্ন ব্যবহারিক পণ্য সামগ্রী তৈরি করা হলেও, এবার সেই কলাগাছের সুতা দিয়ে প্রথমবারের মত শাড়ি তৈরি করেছেন পাহাড়ের নারীরা।
২০২১ সালের অক্টোবর মাসে কলাগাছের তন্তু থেকে সুতা ও বিভিন্ন পণ্য তৈরির উদ্যোগ নেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরিজি। নিজ উদ্যোগে দীর্ঘদিনের চেষ্টায় কারিগরের মাধ্যমে অবশেষে তিনি সফল হয়েছেন কলাগাছের সুতা দিয়ে শাড়ি তৈরিতে। আর সেই শাড়িটি নিজ হাতে তৈরি করেছেন মৌলভীবাজারের কারিগর ও বুনন শিল্পী রাধাবতি।
রাধাবতি বলেন, কলাগাছ থেকে সুতা আর সেই সুতা থেকে ব্যাগ, জুতা, ফাইল, পাপোস, ফুলদানি ও কলমদানিসহ তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের হস্তশিল্প। তবে প্রথমবারের মত বান্দরবানে তৈরি করা হয়েছে কলাগাছের সুতার শাড়ি।
পাহাড়ের বনজ সম্পদের ব্যবহার ও নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে এলাকার নারীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কলাগাছের সুতা থেকে বিভিন্ন ধরনের হস্তশিল্প তৈরির পাশাপাশি শাড়ি তৈরির স্বপ্ন ছিল বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরিজির। আর সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষে মৌলভীবাজার থেকে নিয়ে আসা হয় বুনন শিল্পী রাধাবতিকে। মাত্র ১৫ দিনের চেষ্টায় রাধাবতি এক কেজি সুতা দিয়ে সফলভাবে তৈরি করতে সক্ষম হন কলাগাছের সুতার শাড়ি।
উদ্যোক্তা ও প্রশিক্ষণার্থী নারীরা জানান, কলাগাছের সুতা থেকে শাড়ি তৈরির প্রশিক্ষণ পেয়ে তারা খুশি। তবে তারা এখন যে পারিশ্রমিক পাচ্ছেন তা খুবই কম জানিয়ে তারা বলেন, তৈরিকৃত শাড়ি ও বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী বাজারজাত হলে তাদের পারিশ্রমিক আরও বাড়বে বলে আশা তাদের।
বান্দরবান মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আতিয়া চৌধুরী বলেন, বান্দরবান একটি পর্যটন জেলা। এখানে ঘুরতে আসা দেশি-বিদেশী পর্যটকদের কাছে পাহাড়ের হস্তশিল্পের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
কলাগাছের তন্তুর সুতা থেকে তৈরি বিভিন্ন ধরনের হস্তশিল্প ও শাড়ি পর্যটন শিল্পের বিকাশে একটি বড় ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মনে করেন।
তিনি বলেন, এই হস্তশিল্প পাহাড়ের নারীদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়নে বড় ধরণের সহায়তা করবে। বিষয়টি ভেবে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগ তারা প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু করেন।’
এরইমধ্যে বান্দরবান সদরের ৪০ জন, লামায় ৪০ জন, আলীকদমে ৩০ জন ও রুমা উপজেলায় ৩০ জন নারীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তারা বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী ও শাড়ী তৈরি কাজ করছেন।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভিন তিবরিজি বলেন, পাহাড়ের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়ন, নারীদের কর্মসংস্থান এবং পাহাড়ের বনজ সম্পদকে কাজে লাগানোর কথা বিবেচনা করে তিনি কলাগাছের তন্তু থেকে সুতা এবং বিভিন্ন হস্তশিল্প তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন। পরে মৌলভীবাজার থেকে তাঁতশিল্প রাধাবতিকে নিয়ে আসেন এবং শাড়ি বানানো উদ্যোগ নেন।
শিগগিরই কলাগাছের তন্তুর সুতা দিয়ে শাড়ি ও বিভিন্ন হস্তশিল্প বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন ও বাজারজাত করা হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন