রক্তদানের পর শরীরে যেসব লক্ষণে বিপদ!

রক্তের কোনও বিকল্প এখনও বের করা সম্ভব হয়নি। তাই যখন কারও রক্তের প্রয়োজন হয় তখন আরেকজনের শরীর থেকে নির্দিষ্ট উপায়ে রক্ত সংগ্রহ করে রক্ত দেয়া লাগে।

আবার এই রক্ত নিরাপদ হওয়া জরুরি। কারণ পেশাদার রক্তদাতার থেকে রক্ত নিলে এইচআইভি/এইডস হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই যখন রক্তের প্রয়োজন হয় তখন নিকট আত্মীয় থেকে রক্ত সংগ্রহ করার অনুরধ জানানো হয়। কারণ সেই রক্ত বিশুদ্ধ হবার সম্ভাবনাই বেশি থাকে।

আমাদের দেশে যেহেতু স্বেচ্ছায় রক্তদাতার সংখ্যা এখনও চাহিদা অনুপাতে অনেক নগন্য তাই রক্তের প্রয়োজনে নিকট আত্মীয়রাই রক্ত দিয়ে থাকেন। কিন্তু এতেও বিপত্তির সম্ভাবনা থেকে যায়। তবে সেই আশঙ্কা প্রতি লাখে ১ জন মানে অনেক কম।

তবে যার ক্ষেত্রে এই বিপত্তি ঘটে তার মৃত্যুর সম্ভাবনা ৯০ শতাংশ। একে বলে রক্ত পরিসঞ্চালন জনিত দাতা গ্রহিতার কোষের বিপত্তি, মেডিকেলের ভাষায় Transfusion associated graft versus host disease.

রক্তও একজনের শরীরের অংশ, মানে একে আরেকজনের শরীরে প্রবেশ করালে তা অঙ্গ প্রতিস্থাপনের মতই ঝুঁকি থাকে।এই ঝুঁকির কারণ হল- প্রতি মানুষের শরীরে তার নিজের একটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাকে। এটি বেশ কয়েকটি উপাদান ও স্তরে সজ্জিত থাকে। নতুন কোনও কিছু প্রবেশ করলে তাকে স্তরে স্তরে বাধা দান করে সরিয়ে ফেলা হয়।

যখন সেটি করতে ব্যর্থ হয় তখনই ঘটে বিপত্তি। নিকট আত্মীয় রক্ত প্রদান করলে তা রক্ত গ্রহীতার শরীরে আলাদাভাবে চিনতে পারে না যেহেতু তাদের মাঝে জিনগত সাদৃশ্য থাকে।

ফলে তা চামড়ার নিচে, খাদ্য অন্ত্রে/ নালীতে, লিভারে জমা হতে থাকে। একসময়ে স্বাভাবিক কাজে বাধা দান শুরু করে। এটি শুরু হয় সাধারনত রক্ত গ্রহণের ৮ থেকে ১০ দিন পর থেকে এবং অনেক ক্ষেত্রে ৩০ দিন পরেও দেখা যেতে পারে।

কী লক্ষণ দেখা যায়?

♦ শরীরে রেশ হওয়া, মূলত শুরু হয় শরীরের সামনের ও পেছনের অংশ ( বুক ও পিঠের দিকে) এবং তা হাত পায়ে ছড়িয়ে যায়।

♦ ডায়রিয়া

♦ জন্ডিস হওয়া যেহেতু লিভার ক্ষতিগ্রস্থ হয়

♦ রক্তের সব উপাদান কমে যাওয়া, ইত্যাদি।

কী করা উচিত?

যেহেতু আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর হার ৯০% তাই এই সময়ের মধ্যে এমন কোনও লক্ষণ দেখা দিলেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিশেষ করে রক্ত রোগ বিশেষজ্ঞকে দেখাতে হবে।

প্রতিরোধের উপায়?

যেসব রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটার সম্ভাবনা বেশি তাই তাদের ক্ষেত্রে রক্ত প্রদানের সময় নিকট আত্মীয় নয় এমন কারও রক্ত নেওয়াই নিরাপদ। অনেক সময় দেখা যায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন মানুষের ক্ষেত্রেও এমনটা ঘটতে পারে। তাই সার্বিকভাবে জীবন বাঁচাতে গিয়ে যাতে বিপত্তি না বাড়ে তার জন্য নিকট আত্মীয়রা রক্তদান থেকে বিরত থাকাই সবচেয়ে সহজ সমাধান।