রোকেয়া হলে চার ছাত্রীর প্রতিবাদের মুখে ঢাবি ভিসি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ফেরার পথে চার ছাত্রীর প্রতিবাদের মুখে পড়েলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আখতারুজ্জামান।

ছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুফিয়া কামাল হল থেকে গভীর রাতে কয়েকজন ছাত্রীকে হল থেকে বের করে অভিভাবকদের হাতে তুলে দেয়ার প্রতিবাদ জানান। এ সময় চার ছাত্রী অধ্যাপক আখতারুজ্জামানের সামনে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন বক্তব্য লেখা প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।

ছাত্রীরা যেভাবে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেছেন, তার প্রশংসা করেছেন খোদ উপাচার্য। তিনি প্রতিবাদকারীদের সংখ্যার বিষয়টি বিবেচনা না করে তাদের বক্তব্যের ওপর জোর দিয়েছেন। বলেছেন, শিক্ষার্থীদের এভাবেই নিজেদের কথা বলা উচিত।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে ২০১২-২০১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের র্যা গ ডের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রোকেয়া হলে গিয়েছিলেন উপাচার্য আখতারুজ্জামান। ফেরার পথে দাঁড়িয়ে প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন চার ছাত্রী। তবে তারা কোনো স্লোগান বা বক্তব্য দেননি। উপাচার্যও সেখানে কিছু না বলে প্ল্যাকার্ডগুলো পড়ে হল থেকে ফিরে আসেন।

যে চার শিক্ষার্থী প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেছেন, তারা হলেন: হলেন চতুর্থ বর্ষের ওমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের জয়ন্তী রেজা ও আফরিন শাফি, ইতিহাস বিভাগের তানজীলা তানজি এবং ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের দীপ্তি।

তাদের প্ল্যাকার্ডে লিখা ছিল ‘সুফিয়া কামাল হলের মেয়েদের বের করে দেওয়া হলো কেন’, ‘রাতের আধারে হামলা কেন’, ‘ক্যাম্পাস কোনো গ্যাস চেম্বার নয়’, ‘পুলিশ মুক্ত ক্যাম্পাস চাই’।

গত ৮ এপ্রিল কোটা সরকারি চাকরিতে সংস্কারে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন স্বার্থগোষ্ঠীর ছাত্রদের আন্দোলনে মিশে যাওয়ার লক্ষণ স্পষ্ট।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুফিয়া কামাল হল। গত ১০ এপ্রিল রাতে এই হলের ছাত্রলীগ নেত্রী মোর্শেদা খানমের রগ কেটে দেয়ার গুজব ছড়ায়। এর পর ওই হল ছাত্রলীগের সভাপতি ইফফাত জাহান এশাকে প্রথমে ছাত্রলীগ এবং পরে বিশ্ববিদ্যালয় বহিষ্কার করে।

আর এই দায় মাথায় নিয়ে হল ছাড়তে হয় এশাকে। যাওয়ার সময় আবার তাকে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়। কিন্তু পরে জানা যায়, এশা এই কাজ করেননি। এশার কক্ষের জানলায় লাথি মেরে নিজেই পা কেটেছেন মোর্শেদা। এরপর ছাত্রলীগ ১৩ এপ্রিল এশার বহিষ্কারাদেশ তুলে নিয়ে ১৬ এপ্রিল মোর্শেদাসহ সংগঠনের ২৪ জনকে বহিষ্কার করে।

দুই দিন পর বিশ্ববিদ্যালয়ও এশার বহিষ্কারাদেশ তুলে নিয়ে ২৬ ছাত্রীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। আবার ১৯ এপ্রিল হলের কয়েকজন শিক্ষার্থী ফেসবুকে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে গুজব ছড়াচ্ছেন অভিযোগ তুলে হল কর্তৃপক্ষ কয়েকজন অভিভাবকদেরকে ডেকে ছাত্রীদেরকে তাদের হাতে তুলে দেন।
এ নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে শুক্রবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করে অভিভাবকদের জিম্মায় দেয়া ছাত্রীদেরকে হলে ফিরিয়ে নেয়ার দাবি জানায়। সেই সঙ্গে প্রাধ্যক্ষ সাবিতা রেজওয়ানা চৌধুরীর পদত্যাগ দাবি করেছে তারা।

এই পরিস্থিতিতে উপাচার্যকে প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করলেন চার ছাত্রী। এদের একজন জয়ন্তী রেজা  বলেন, ‘আমাদের বোনদের অন্যায়ভাবে গভীর রাতে হল থেকে বের করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। যা আমাদেরও উদিগ্ন করে কারণ আমরাও হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।’

‘কর্তৃপক্ষ যে কোন সময় আমাদেরও বের করে দিবে। তাই আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। এ ছাড়া ক্যাম্পাসে সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশ কর্তৃক হামলার ঘটনায়ও আমরা শঙ্কিত।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চার ছাত্রীর প্রশংসা করে উপাচার্য আখতারুজ্জামান  বলেন, ‘তারা যেভাবে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেছে, এটা ভালো। আমি বিদেশে লেখাপড়া করেছি, আমেরিকাতেও দেখেছি এ রকম সংস্কৃতি।’

‘তারা সংখ্যায় কম হলেও কথাটা গুরুত্বপূর্ণ ও যৌক্তিক। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এমনই হওয়া উচিত।’

আপনি চার ছাত্রীকে কিছু বলেছেন?-জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, ‘না আমি তাদেরকে কিছু বলিনি, আমি প্ল্যাকার্ডগুলো দেখে চলে এসেছি, তবে লেখাগুলো পড়েছি।