মানিকগঞ্জের সিংগাইর সরকারি হাইস্কুলের ‘পাসওয়ার্ড’ নাম্বার কম্পিউটারের দোকানে!

মানিকগঞ্জের সিংগাইর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাগজপত্র ভুল সংশোধনের গোপন পাসওয়ার্ড নাম্বার কম্পিউটার দোকানে। ফলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। সেই সঙ্গে বোর্ড নির্ধারিত ফি’র চেয়ে কয়েকগুন বেশী টাকা গুনতে বাধ্য হচ্ছে তারা।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক জানান, গত ২০১০ সাল থেকে সিংগাইর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র, রেজিস্ট্রেশন, মার্কশিট ও সার্টিফিকেট সংশোধনের কাজগুলো অনলাইনে আবেদন শুরু হয়। ঢাকা বিভাগে একই সফটওয়্যারে প্রত্যেক স্কুলের আলাদা আলাদা পাসওয়ার্ড থাকবে। সেই অনুযায়ী স্ব-স্ব স্কুল শিক্ষার্থীদের কাগজপত্রে ভুল সংশোধনের কাজগুলো করার কথা। কিন্তু এ স্কুলে শুরু থেকেই সংশোধন কাজের গোপন পাসওয়ার্ডটি পৌরসভা কার্যালয় সংলগ্ন ভাই ভাই ফটোকপি ও কম্পিউটারের স্বত্ত্বাধিকারী তপন চন্দ্র দাসকে দেয়া হয়।

সূত্র জানায়, প্রধান শিক্ষক ওই কম্পিউটার দোকানের মালিককে স্কুলের পাসওয়ার্ডটি লিজ দিয়ে দীর্ঘদিন যাবত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। নামের বানান সংশোধনের ক্ষেত্রে সরকারি ফি ৫৫৮ টাকা ও বয়স সংশোধনের ক্ষেত্রে ১ হাজার ৫৫৮ টাকা নেয়ার কথা থাকলেও শিক্ষার্থীরা দিতে বাধ্য হচ্ছে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত। চাহিদামত টাকা না দিলে ঘুরতে হচ্ছে মাসের পর মাস।

ভূল সংশোধনের গোপন পাসওয়ার্ড নাম্বারটি প্রতিষ্ঠান প্রধানের কাছে থাকার নিয়ম থাকলেও সিংগাইর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে দেখা গেছে তার বিপরীত চিত্র। শিক্ষা বোর্ডের নিয়মনীতিকে থোরাই কেয়ার করে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো.আরিফুর রহমান বাইরের লোকজনকে গোপন পাসওয়ার্ড নাম্বার দিয়ে কাজ করাচ্ছেন। এতে ওই প্রধান শিক্ষক ও দোকানদার আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।

অন্যদিকে, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা হয়রানিরসহ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অভিভাবকরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

এ বিষয়ে সিংগাইর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আরিফুর রহমান সংশোধন ফি বেশি নেয়া হতে পারে স্বীকার করে বলেন, আমি চলতি বছরের জানুয়ারিতে দায়িত্বভার গ্রহন করেছি। এটা চালু হয়েছে পূর্বের প্রধান শিক্ষক আক্রাম হোসাইনের সময় থেকে। আমি অল্প সময়ের মধ্যেই বোর্ডে গিয়ে ঠিক করে ফেলব। সেই সাথে এটা নিয়ে তাকে বেকায়দায় ও ঝামেলায় না ফেলতে এবং সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন।

সদ্য অবসরে যাওয়া ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আক্রাম হোসাইন বলেন, জনবল সংকট থাকায় আমি যাকে খুশি তাকে দিয়েই কাজ করাতে পারি।

ভাই ভাই ফটোকপি ও কম্পিউটার দোকানের মালিক তপন চন্দ্র দাস বলেন, সিংগাইর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বোর্ড সংক্রান্ত কাগজপত্রের যাবতীয় ভুল সংশোধনীর কাজগুলো আমাকে করতে দিয়েছেন, তাই আমি করছি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এবিএম.আ. হান্নান বলেন, এটা অবশ্যই অন্যায়। আমার কাছে অভিযোগ আসলে ব্যবস্থা নেব।

এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি পলাশ কুমার বসু বলেন, প্রধান শিক্ষককে যে পাসওয়ার্ড দেয়া হয়েছে সেটা গোপনই থাকবে। এটা সেনসেটিভ বিষয়, কোনোভাবেই দোকানে দেয়া যাবে না। নিয়ম লংঙ্ঘন করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।