অপহরণ করে নারীকে দিয়ে অশ্লীল ছবি তুলিয়ে ব্ল্যাকমেইল করা হতো

রাজধানীর দক্ষিণখানের চেয়ারম্যানপাড়া এলাকা থেকে অপহরণকারী চক্রের ২ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন মিরাজ (৩৫) ও বৃষ্টি (২১)। আসামিরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে বিভিন্নজনকে তুলে নিয়ে তার পরিবারের কাছে টাকা দাবি করতো।

টাকা নিয়ে ঢাকার নির্জন এলাকায় ফেলে দেয়া হতো তাদের।

তাদের কাছ থেকে অপহরণে ব্যবহৃত একটি ছুরি, ৫৭টি ইলেক্ট্রিক্যাল ক্যাবল টাইস, একটি স্ক্রু ড্রাইভার ও একটি প্লাস উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

বিকেলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, উত্তরা ৯ নম্বর সেক্টরে ‘ফুড ষ্টোরী’ নামে একটি ফাস্ট ফুডের দোকান আছে মিহির রায়ের। গত ১৩ জানুয়ারি সন্ধ্যায় অজ্ঞাত নামা এক ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রোগ্রামে ৮০ প্যাকেট খাবার অর্ডার দিবে বলে অপহৃত মিহিরকে সঙ্গে করে নিয়ে যায়। এরপর মিহিরের ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

১৪ জানুয়ারি মিহিরের নাম্বার থেকে মিহিরের স্ত্রীর নাম্বারে ফোন আসে।
কিন্তু কোনো কথা না বলে কেটে দেয়া হয়। কিছুক্ষণ পর অন্য একটি নাম্বার থেকে কল আসলে রিসিভ করেন মিহিরের স্ত্রী। ওপাশ থেকে মিহির বলেন, এরা আমার হাত, পা ও চোখ বেঁধে রেখেছে।

২০ লাখ টাকা দিলে ছেড়ে দেবে। পরে তার স্ত্রী বিভিন্ন সময়ে অপহরণকারীদের দেয়া নাম্বারে ২ লক্ষ ৯১ হাজার টাকা ‘বিকাশ’ করে। অবশিষ্ট টাকা না দিলে তার স্বামী মিহিরকে ক্ষতির হুমকি প্রদান করে অপহরণকারীরা। এ ঘটনায় গত শনিবার মিহিরের স্ত্রী বাদী হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা করেন।

অতিরিক্ত কমিশনার আরো বলেন, মামলার পর অপহৃত ব্যবসায়ী মিহির রায়কে উদ্ধারের জন্য বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ডিবির উত্তরা জোনাল টিম।

অভিযানকালে গোয়েন্দা টিম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে, অপহরণ চক্রটি ভিকটিমকে চেয়ারম্যান পাড়ার হেজুর উদ্দিন রোডের একটি বাড়িতে আটকে রেখেছে। পরে ওই বাড়িটির ৩য় তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে হাত-পা বাধাঁ অবস্থায় মিহির রায়কে উদ্ধার করা হয়। এসময় অপহরণকারী চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে মিহিরের স্ত্রীর কাছ থেকে বিকাশে নেয়া ৪৯ হাজার টাকা।

তিনি আরো বলেন, গ্রেফতারকৃতরা একটি অপরহরণকারী চক্র। তারা বিভিন্ন সময় অপহরণের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। এছাড়াও, অপহরণকারীরা অপহরণের পর ভিকটিমের সঙ্গে একজন নারীকে দিয়ে অশ্লীল ছবি তুলে রাখে, যাতে ভিকটিম মুখ খুলতে না পারে। যদি এ বিষয়ে পুলিশ অথবা অন্য কারো কাছে অভিযোগ করে তাহলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিকটিমের অশ্লীল ছবি ছেড়ে দেয়ার ভয় দেখায়।

‘আমাকে মেরে ফোনে স্ত্রীকে আমার চিৎকার শোনানো হতো’:
অপহরণকারীদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া মিহির রায় বলেন, সন্ধ্যা ৬ টা ৩০ মিনিটে কি সাতটার দিকে ওনার বাসার দরজার সামনে যাওয়ার পর হঠাৎ করে আনুমানিক ৫ জন পুরুষ ও একজন নারী আমার হাত-পা বেঁধে ফেলে মুখে স্কচটেপ পেচিয়ে দেয় এবং আমার চোখ বেঁধে ফেলে। আমাকে একটি রুমে নিয়ে যায়। সেখানে তারা আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে এবং আমি তখন তাদের কথা শুনে বুঝতে পারি আমি চক্রটির দ্বারা অপহরণের শিকার হয়েছি।

পরে তারা আমার স্ত্রীকে ফোন করে আমাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চায়। এত টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আমার স্ত্রীকে তারা আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। পরে আমার স্ত্রী ভয় পেয়ে তাদেরকে ১০ লাখ টাকা দিতে রাজি হয়। বিকাশের মাধ্যমে তাদেরকে ২ লাখ ৯১ হাজার টাকা ও পাঠিয়েছিল আমার স্ত্রী।

একই বক্তব্য আরো দুই ভুক্তভোগীর:
মিহির রায়ের মতো আরো দুইজন ভুক্তভোগী এই চক্রের শিকার ছিলেন। তারা হলেন, ব্রাহ্মনবাড়িয়া কসবার নিয়ামত উল্লাহ এবং বরিশালের রফিক হাওলাদার। নিয়ামত উল্লাহ বলেন, তাকে ১০ ডিসেম্বর থেকে ২৩ শে ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা ১৩ দিন নির্যাতন করে। ইলেকট্রিক শক দিয়ে তাকে নির্মম শারিরীক নির্যাতন করতো।

নির্যাতনের ক্ষত চিহ্ন এখনো তিনি তার শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছেন। অপহরণের পর তাকেও একজন নারীর সঙ্গে আপত্তিকর ভিডিও রেকর্ড করে রাখে। এদিকে রফিক হাওলাদারের কাছ থেকে অপহরণকারী চক্র হাতিয়ে নেয় চার লাখ ২০ হাজার টাকা।