অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট হত্যা চেষ্টা মামলা ভূমিদস্যু নাজিম উদ্দিন কারাগারে

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট বাবুল হোসেনকে হত্যা চেষ্টা ও চাঁদাবাজির মামলায় ভূমিসদ্যু মো. নাজিম উদ্দিন ভূইয়াকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।

সোমবার (১ মে) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত এই আদেশ দেন। এর আগে সোমবার সকালে রাজধানীর মিরপুর ডিওএইচএস এলাকা থেকে নাজিম উদ্দিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

রাজধানীর ক্যান্টনমেন্টে জমি দখল ও চাঁদা দাবিকে কেন্দ্র করে অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট বাবুল হোসেনকে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় গত ১৯ এপ্রিল ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করা হয়। অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট মো. বাবুল হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। ভাঙ্গারী দোকানের কর্মচারি থেকে শতকোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া মামলার প্রধান আসামি মো. নাজিম উদ্দিন ভূইয়ার বিরুদ্ধে জামায়াতের অর্থ যোগানদাতাসহ প্রতারণা ও ভূমিদস্যুতার একাধিক মামলা রয়েছে। মামলার অপর আসামিরা হলেন মো. সাইফুল ইসলাম, মো. রেজাউল, শামীম হোসেন, তাজুল ইসলাম তাজ, মো. মনির, নয়ন আলী, মো. শামসুল হক, মো. মিলন মিয়া, মো. শাহ আলম ও মো. ইব্রাহিম আকন্দ ওরফে বাবুসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৮ থেকে ১০ জন। মামলার এজাহারে বলা হয়, প্রায় ১৫০ জন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক বাহিনীর সদস্যরা রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানাধীন (সিএস ও এসএ-৩৭৬,৮০৯, আরএস ১৬৮৭, সিটি জরিপের ১৬৭৪, খতিয়ানভুক্ত সিএস ও এসএ ৬১০, ৬১১, ও ৬১৫, আরএস ৫৬১, ৫৬৫ এর সিটি জরিপের ৩৩ হাজার ৯০৮ দাগের ৩ হাজার ৭৯৭ শতাংশ জমি) এলাকায় জমি ক্রয় করে ২০১৮ সাল থেকে সেখানে পাকা স্থাপনা নির্মান করে বসবাস করছেন। দীর্ঘদিন ধরে মো. নাজিম উদ্দিন ভূইয়ার নেতৃত্বে অন্যান্য আসামিরা এই জমিটি দখলের চেষ্টা করছে। ওই জমি জোরপূর্বক দখলের চেষ্টায় মারধর ও টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় ক্যান্টনমেন্ট থানায় আসামিদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ও সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করা হয়েছে।

তদন্ত শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে ওইসব মামলায় চার্জশিট (অভিযোগপত্র) ও ননএফআইআর প্রসিকিউশন মামলাও দাখিল করা হয়েছে। এসব মামলায় নাজিম উদ্দিন কিছুদিন জেলও খেটেছেন। মামলাগুলোয় জামিন পেয়ে আসামিরা গত ১৭ এপ্রিল রাত ৮টার দিকে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ওই জমিতে এসে অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট মো. বাবুল হোসেনকে খুঁজতে থাকে ও ভয়ভীতি দেখাতে থাকে। বাবুল হোসেনের বাসার কেয়ারটেকার মো. দেলোয়ার হোসেন তাদের এমন আচরণের প্রতিবাদ করলে আসামি নাজিম উদ্দিন ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। অন্যথায় জমিতে আসতে নিধেষ করে। একইসঙ্গে আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করার সাধ জীবনের তরে মিটিয়ে দেওয়ারও হুমকি দেয়। ভাংচুর ও হৈহুল্লোড়ে বাবুল হোসেনসহ অন্যন্য লোকজন ঘটনাস্থলে আসলে আসামিরা বাবুল হোসেনের ওপর আক্রমন করে। আসামি নাজিম উদ্দিন হত্যার আদেশ দিলে অপর আসামি সাইফুল ইসলাম তার হাতে থাকা দা দিয়ে বাবুল হোসেনের মাথায় কোপ দেয়। তবে বাবুল হোসেনের সঙ্গে থাকা লোকজন তাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিয়ে ফেলে দেওয়ায় কোপটি লাগেনি, ফলে তিনি প্রাণে রক্ষা পান। আসামি রেজাউল মোবাইল নিয়ে ভেঙ্গে ফেলে ও জমিতে থাকা ৮০ হাজার টাকার মালামাল চুরি করে। চাঁদার টাকা না পেয়ে আসামিরা ম্যানেজার মো. আকমল সরদার ও সুপারভাইজার টুকু শেখকে অবৈধভাবে আটক করে রাখে। ৫০ লাখ টাকা না দিলে তাদের হত্যার হুমকি দেয়।

টুকু শেখের স্ত্রী সাফি বেগম ইসিবি চত্ত্বরের নিউগিনি প্রপার্টিজ অফিসে গিয়ে তার স্বামীর জীবন ভিক্ষা চেয়ে আসামি নাজিম উদ্দিনের পা জড়িয়ে ধরেন। তখন আসামি সাইফুল ইসলাম সাফি বেগমের চুল ধরে টানাটানি করে ও শ্লীলতাহানী করে। এরপর নাজিম উদ্দিন কেঁচি দিয়ে সাফি বেগমের চুল কেটে দেয় ও টুকু শেখকে প্রচন্ড পেটাতে থাকে। আসামি রেজাউল হত্যার উদ্দেশ্যে টুকু শেখের গলা চিপে ধরে।

খরব পেয়ে পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন এসে টুকু শেখ ও তার স্ত্রীকে উদ্ধার করেন। এসময় আসামিরা পালিয়ে যায়। আসামি নাজিম উদ্দিন, সাইফুল, রেজাউল. শামীম ও তাজুল ইসলাম তাজ সহোদর ভাই ও এলাকার চিহ্নিত ভূমিদস্যু। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।